ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সমর্থিত শ্রমিক দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সংবাদ সংগ্রহের সময় এক সাংবাদিককে ছুরি দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার দুুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ইউনিয়নের এক পক্ষের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান প্রিন্স দলবল নিয়ে নগর ভবনে ঢোকার সময় শ্রমিক ইউনিয়নের আরেক পক্ষের সভাপতি আরিফ চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে শ্রমিক দলের নেতা আরিফুজ্জামানের অনুসারী সন্দেহে নগর ভবনের এক কর্মীকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ইশরাকের অনুসারীরা সিটি করপোরেশনের প্রশাসন শাখার কম্পিউটার অপারেটর শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে পেটাতে থাকেন।

এ সময় পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে পুলিশের কাছে ওই ব্যক্তিকে দিতে রাজী হননি ইশরাক অনুসারীরা। পরে নগর ভবনে আগত আরেক ব্যক্তিকে আরিফুজ্জামান প্রিন্সের অনুসারী সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পুলিশ এই দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। 

এই বিষয়ে আরিফুজ্জামান প্রিন্স সমকালকে বলেন, ইশরাক হোসেন নগর ভবনে সেবা চালু করার ঘোষণা দেওয়ার পরও বহিরাগত কিছু লোকজন প্রতিদিন এসে মহড়া দিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের হুমকি দিচ্ছেন। নগর ভবনে প্রবেশে বাঁধা দিচ্ছেন তারা। তাই আজ আমরা কর্মচারীরা একত্রে নগর ভবনে প্রবেশ করার সময় অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এরপরেও নগর ভবনে যারা ঢুকছেন তাদের গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। 

তবে আরিফ চৌধুরী বলেন, অন্যান্য দিনের মতো আজও তারা শান্তিপূর্ণভাবে নগর ভবনে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু বহিরাগতরা নগর ভবনে এসে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের আটজনকে গুরুতর আহত করেছে। 

এদিকে সংঘর্ষের ছবি আর ভিডিও করার সময় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন ইশরাক সমর্থকরা। নাগরিক টেলিভিশনের রিপোর্টার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শিশিরের মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে সব ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দেন ইশরাকের অনুসারীরা। এ সময় তাকে হেনস্থা করতে দেখা গেছে।

আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় মারধরের ভিডিও করতে গেলে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে সব ভিডিও ও ছবি ডিলিট করে দিয়ে ছুরি দেখিয়ে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এনটিভির রিপোর্টার নাজিবুর রহমান সমকালকে বলেন, আমার ক্যামেরাম্যানসহ আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। যেন ভিডিও ধারণ করা না হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এসস স নগর ভবন ইশর ক হ স ন আর ফ জ জ ম ন নগর ভবন র অন স র ইশর ক র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমি এতিম হয়ে গেলাম রে’

“আমি এতিম হয়ে গেলাম রে, আমার বাবা আর নেই, আমি এখন কী করবো ফুফু”- এভাবেই হাহাকার করছিলেন পাপিয়া আক্তার। বাবা হারানোর শোকে কণ্ঠ যেন পাথর ভেদ করা আর্তনাদ। পাশে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন স্বজনরা। সবাই জানে, এই কান্নার আর কোনো সান্ত্বনা নেই।

পাপিয়া মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ফলসাটিয়া এলাকায় হলি চাইল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া চালক পারভেজ খানের (৪৫) মেয়ে। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন পারভেজ খান। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন:

স্কুল পরিচালকের বিরুদ্ধে ৮ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ 

শ্রেণিকক্ষে টিকটক বানানোয় ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) গভীর রাতে ফলসাটিয়া বাজারের পাশে থেমে থাকা স্কুল বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসে ওই সময় ঘুমিয়ে ছিলেন চালক পারভেজ খান। আগুনে বাসটি মুহূর্তেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তিনদিন ধরে ৭০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে বাঁচার লড়াই চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু জীবন তাকে আর সময় দেয়নি।

নিহত পারভেজ খান সদর উপজেলার বারাইভিকড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার ঘরে রয়েছে স্ত্রী, এক স্কুলপড়ুয়া ছেলে এবং ছোট মেয়ে পাপিয়া আক্তার। 

স্ত্রী চোখে মুখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “স্বামীকে হারিয়ে আমরা পথে বসে গেলাম। এখন সন্তানদের কীভাবে মানুষ করবো? কে চালাবে সংসার?”

স্থানীয়রা জানান, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। যারা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পারভেজের পরিবার যেন রাষ্ট্রীয় সাহায্য পায়, সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসারের ব্যয় চালাতে যেন সরকার ও প্রশাসন এগিয়ে আসে।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “গত বৃহস্পতিবার স্কুলবাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। এতে দগ্ধ হন বাসটির ভেতর ঘুমিয়ে থাকা চালক পারভেজ। পুলিশ উদ্ধার করে তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। স্কুলবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ