স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত মাঠপর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারীদের জন্য নিয়োগবিধি সংশোধন, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী গ্রেড উন্নীতকরণ এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৮টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত রূপগঞ্জ  উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে  বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন, রূপগঞ্জ  উপজেলা শাখার আয়োজনে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারীরা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক/সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতা সংযুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ, টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান এবং পদোন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উচ্চতর গ্রেড প্রদান সময়ের দাবি।

বক্তারা দ্রুত এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স ব স থ য সহক র র পগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

নর্দমার তরল বর্জ্য পরীক্ষায় করোনা প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস

করোনা প্রাদুর্ভাবের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ কি? দেশে দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফুটবল তারকা নেইমার সম্প্রতি ব্রাজিলে করোনা আক্রান্ত হয়ে গৃহন্তরীণ হয়েছেন। বিগত ২ সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় কভিড-১৯ শনাক্তকরণের হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৮%, যুক্তরাজ্যে ২০%, অস্ট্রেলিয়ায় ৪০%, ব্রাজিলে ২৫%, ভারতে ৩৫% এবং বাংলাদেশে (ঢাকা ও চট্টগ্রামে) ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২%, যুক্তরাজ্যে ১৫%, অস্ট্রেলিয়ায় (নিউ সাউথ ওয়েলসে) ২২%, ব্রাজিলে (সাও পাওলোতে) ১০%, ভারতে (কেরালা ও মহারাষ্ট্রে) ১৮% এবং বাংলাদেশে (শহরে) ৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় শনাক্তকরণের হারের ২০% এর বেশি বৃদ্ধি ভবিষ্যতে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয় (সাধারণত ১-২ সপ্তাহ পরে)। রোগীর হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ২০% এর বেশি বৃদ্ধি নিশ্চিত করে যে এই বৃদ্ধি ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। উদাহরণ: ভারতের কেরালায় হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ১৮% বৃদ্ধির অর্থ হলো শয্যা/আইসিইউ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত ভরে যাচ্ছে। 

সংক্রামক রোগের মহামারির ব্যাপ্তি বোঝা জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য চলমান চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্জ্য জল পরীক্ষা বা নজরদারি (ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্স) একটি মোক্ষম হাতিয়ার। করোনা নামে পরিচিত হলেও বিশ্বব্যাপী সর্বশেষ মহামারি সংক্রমণকারী রোগটির বৈজ্ঞানিক নাম কভিড-১৯ এবং জীবাণু বা ভাইরাসটির নাম সার্স-কভ-২। করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ এবং এর প্রাদুর্ভাব পর্যবেক্ষণে নর্দমার তরল বর্জ্য পরীক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রচলিত পরীক্ষার পাশাপাশি একটি প্রাথমিক সতর্কতা সংকেত হিসেবে কাজ করে, যা কমিউনিটিতে ভাইরাসের উপস্থিতি এবং বিস্তারের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। 

ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্স কী? 
ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্স হলো একটি জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ কৌশল, যেখানে একটি নির্দিষ্ট এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে সংগৃহীত তরল বর্জ্যের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই নমুনাগুলোতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, রাসায়নিক পদার্থ বা অন্যান্য জৈব-চিহ্ন (বায়োমার্কার) শনাক্ত করা যায়, যা নির্দিষ্ট রোগের প্রাদুর্ভাব বা জনস্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে নর্দমার পানিতে উপস্থিত ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান, বিশেষ করে আরএনএ পরীক্ষা করা হয়। 

৪০টিরও বেশি দেশ এখন কভিড-১৯সহ অন্যান্য সংক্রমক রোগের জন্য বর্জ্য জল পর্যবেক্ষণ করছে। নিউইয়র্ক সিটির বর্জ্য জলে (২০২২) পোলিওভাইরাস পাওয়া যায়, যার সঙ্গে রকল্যান্ড কাউন্টিতে একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে টিকাদান অভিযান পরিচালনা করা হয়। একই বছর একই শহর ও সানফ্রান্সিসকোতে এমপক্স (মাঙ্কিপক্স)-এর প্রাদুর্ভাবকালে বর্জ্য জলে ভাইরাসের ডিএনএ শনাক্ত হয়। ২০২৪ সালে দ্য ল্যান্সেটে প্রকাশিত গবেষণাপত্র মোতাবেক ১৭টি দেশের বর্জ্য জলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জিনের (এআরজি) সন্ধান পাওয়া যায়। নর্দমার জলে হরমোন, ওষুধের অবশিষ্টাংশ, এমনকি অবৈধ ওষুধ বা মাদক ব্যবহারের চিহ্নও শনাক্ত করা যায়, যা জনসমষ্টির মধ্যে মাদক সেবনের ধরন নির্দেশ করে। 

কীভাবে কাজ করে? 
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, তাদের মধ্যে লক্ষণ/উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, মলমূত্র, লালা, থুথু, নাকের নিঃসরণের মাধ্যমে ভাইরাস নির্গত করে। এই ভাইরাস কণাগুলো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে একত্রিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকার সম্মিলিত বর্জ্য প্রবাহে মিশে যায়। ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্সের ধাপগুলো– 
১. নমুনা সংগ্রহ : জনবহুল এলাকা যেমন– হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক এলাকা বা একটি শহরের প্রধান পয়ঃনিষ্কাশন প্ল্যান্ট থেকে নিয়মিতভাবে তরল বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ নমুনাগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট সময় অন্তর, যেমন– দৈনিক বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয়। 
২. ভাইরাস আরএনএ নিষ্কাশন: সংগৃহীত নমুনা থেকে প্রথমে কঠিন বর্জ্য আলাদা করা হয় এবং এরপর ভাইরাসের কণাগুলো ঘন করা হয়। এরপর এই ঘনকৃত অংশ থেকে ভাইরাসের আরএনএ নিষ্কাশন করা হয়। যদিও ভাইরাসটি নর্দমার পানিতে দ্রুত তার কার্যকারিতা হারায়, এর জেনেটিক উপাদান (আরএনএ) দীর্ঘক্ষণ স্থিতিশীল থাকে, যা পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট। 
৩. পিসিআর পরীক্ষা: নিষ্কাশিত আরএনএর পরিমাণ নির্ধারণের জন্য রিভারস ট্রান্সক্রিপশন-পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা কোয়ান্টিটেটিভ পিসিআরের মতো আণবিক পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পরীক্ষাগুলো নর্দমার পানিতে ভাইরাসের আরএনএর ঘনত্ব পরিমাপ করে। আরএনএর উচ্চ ঘনত্ব কমিউনিটিতে ভাইরাসের উচ্চ উপস্থিতি নির্দেশ করে। 
৪. ফলাফল বিশ্লেষণ: প্রাপ্ত ফলাফল জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো হয়, যেখানে এটি বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত মডেল এবং ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হয়। এই বিশ্লেষণগুলো ভাইরাসের বিস্তার, নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি এবং সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের প্রবণতা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। 
প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস কীভাবে পাওয়া যায়? 
পূর্বাভাস দিতে এটি কয়েকটি কারণে অত্যন্ত কার্যকর: 
১) প্রাথমিক শনাক্তকরণ: আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের উপসর্গ প্রকাশের কয়েক দিন আগে থেকেই মলমূত্রের মাধ্যমে ভাইরাস নির্গত করতে পারে। ফলে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার আগেই নর্দমার পানিতে ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এটি জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের একটি সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে। 
২) উপসর্গহীন সংক্রমণ শনাক্তকরণ: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক ব্যক্তির কোনো উপসর্গ থাকে না বা খুব মৃদু উপসর্গ থাকে, যার কারণে তারা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করায় না। ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্স এই উপসর্গহীন বাহকদের দ্বারা নির্গত ভাইরাসও শনাক্ত করতে পারে, যা কমিউনিটিতে মোট সংক্রমণের আরও বাস্তবসম্মত চিত্র তুলে ধরে। 
৩) সামগ্রিক চিত্র প্রদান: নর্দমার নমুনা একটি বৃহৎ জনসংখ্যার সম্মিলিত স্বাস্থ্য অবস্থা নির্দেশ করে। ব্যক্তিগত পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা থাকে, কিন্তু ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্স একটি শহরের বা নির্দিষ্ট এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে দ্রুত এবং বিস্তারিত তথ্য দিতে পারে। ফলে বিচ্ছিন্নভাবে ছোট ছোট প্রাদুর্ভাব চিহ্নিত করা সম্ভব হয় যা অন্য কোনোভাবে সহজে শনাক্ত করা কঠিন। 
৪) ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণ: উন্নত জেনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে নর্দমার পানি থেকে প্রাপ্ত ভাইরাসের আরএনএ বিশ্লেষণ করে নতুন করোনাভাইরাস ভ্যারিয়েন্টগুলোর উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব। এটি জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিস্তার এবং তাদের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে দ্রুত ধারণা দিতে সাহায্য করে। 

বর্জ্য জল নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি 
পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় অসংখ্য সম্ভাব্য বিপজ্জনক রোগজীবাণু থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের জলবাহিত সংক্রমণ রুট নেই, তাছাড়া জলে জীবন্ত ভাইরাস থাকে না, অসংক্রামক আরএনএ থাকে বিধায় কর্মীদের সংক্রমণের অতিরিক্ত ঝুঁকি নেই। তবে মানসম্মত সুরক্ষা পদ্ধতি (চশমা, মুখোশ বা মুখোশ, জল-প্রতিরোধী ওভারঅল, জলরোধী গ্লাভস) অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। 

কীভাবে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার (আরটি-পিসিআর/আরএটি) চেয়ে ফলপ্রসূ 
মানুষ পরীক্ষা না করলেও নর্দমার তরল বর্জ্য পরীক্ষা ভাইরাস শনাক্ত করে। উপসর্গবিহীন/প্রাক-উপসর্গকালীনও ধরা পড়ে (যেখানে পিসিআর অপরীক্ষিত উপসর্গবিহীন বাহক ধরতে পারে না)। প্রাথমিক সতর্ক সংকেত প্রদান করে (হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধির ৩-৭ দিন আগে ভাইরাস নর্দমায় উপস্থিত হয়)। বর্জ্য জল পরীক্ষা সস্তা এবং এর পরিধি বিস্তারণযোগ্য (একটি নমুনা হাজার হাজার আরএনএ কভার করে)।
 
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার গুরুত্ব 
বর্জ্য জল পরীক্ষা থেকে সংগৃহীত ডেটা বিদ্যমান সার্স-কভ-২ সার্ভিলেন্স পদ্ধতির প্রতিস্থাপন নয়। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা, সেন্টিনেল নজরদারি, হাসপাতালে ভর্তির হার এবং ইপিডেমিওলজির তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিলে বর্জ্য জল সার্ভিলেন্স প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাসটি কোথায় উপস্থিত, এর ভৌগোলিক বিস্তার এবং সংক্রমণের তীব্রতা ট্রাক এবং শনাক্ত করতে পারে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার (আরটি-পিসিআর) গুরুত্ব অপরিবর্তিতই থেকে যাবে। আরটি-পিসিআর ব্যক্তিগত সংক্রমণ নিশ্চিত করে (চিকিৎসা/আইসোলেশনের জন্য প্রয়োজন)। ভাইরাল লোড (যেমন, সিটি ভ্যালু দেখে) পরিমাপের জন্যও আরটি-পিসিআর অপরিহার্য। যত ধরনের ভ্যারিয়েন্ট আছে সবগুলো শনাক্ত করার জন্য পিসিআর প্রযোজ্য এবং ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াবই (শ্বাসযন্ত্রের নিঃসরণ) আদর্শ নমুনা। অপরদিকে বর্জ্য জলের সার্ভিলেন্স কমিউনিটি অর্থাৎ মানুষের সমষ্টিগত পর্যায়ে ভাইরাসের উপস্থিতি এবং প্রবণতা শনাক্ত করে, ভাইরাল লোড পরিমাপ করে প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবের সংকেত প্রদান করে। বস্তুত জনস্বাস্থ্যের জন্য উভয়ই অপ্রতিস্থাপনযোগ্য।
 
বাংলাদেশে ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্স পরিস্থিতি 
কভিড-১৯ ভাইরাসের জন্য বাংলাদেশের সরকারি ব্যবস্থাপনায় ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্স অনুপস্থিত। ক’বছর আগে একটিমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ছোট পরিসরে দু/একটি পাইলট প্রকল্প করেছিল, এখন তার অস্তিত্ব নেই। দাতা সংস্থার অর্থায়নে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাভারে সীমিত কলেবরে তা করছে, তবে ফলাফল জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল নয়। তবে পোলিও রোগের জন্য ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ (আইপিএইচ) ওয়েস্টওয়াটার সার্ভিলেন্স করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে পোলিও নির্মূল হয়ে গেলেও নজরদারির জন্য তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। 

চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা 
নর্দমার পানিতে ভাইরাসের ঘনত্ব বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে, যেমন– বৃষ্টিপাত, পানির প্রবাহ এবং নমুনা সংগ্রহের সময়। শনাক্তকৃত ভাইরাস আরএনএ সরাসরি কতজন ব্যক্তি আক্রান্ত তা নির্দেশ করে না, বরং এটি একটি সামগ্রিক সূচক। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু এলাকায় নমুনা সংগ্রহ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। 

বর্জ্য জল সার্ভিলেন্স প্রবর্তন এবং সম্প্রসারণকে সফলভাবে সমর্থন করার জন্য স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং বর্জ্য জল ইউটিলিটি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। আইনি এবং অর্থায়ন কাঠামো ব্যবহারের মাধ্যমে এই ধরনের অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করা যেতে পারে। বর্জ্য জল নজরদারির পরিকল্পনা করার সময়, নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা, ব্যাখ্যা এবং প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। 

প্রাচীন সভ্যতাগুলোতেও নর্দমা বা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার গুরুত্ব ছিল। তাম্রযুগের সিন্ধু সভ্যতায় (৩৩০০-১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পাঞ্জাবের হরপ্পা, সিন্ধুর মহেঞ্জোদারো এবং গুজরাটের ধোলাভিরার মতো ধ্বংসাবশেষের বসতিতে প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল। রোমানরা তাদের ‘ক্লোয়াকা ম্যাক্সিমা’ নামে পরিচিত নর্দমা ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত ছিল, যা ইতালিতে এখনও আংশিকভাবে টিকে আছে। এটি প্রমাণ করে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বুঝেছে, যদিও তখন বিজ্ঞান এত উন্নত ছিল না। আমাদের দেশে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আজও প্রক্রিয়াধীন এবং শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস পেতে এবং নজরদারি করতে নর্দমার তরল বর্জ্য পরীক্ষা দ্রুত আরম্ভ করা প্রয়োজন। ভাইরাসের আরএনএ বহনকারী বর্জ্য জলকে ধোঁয়ার অ্যালার্ম এবং আরটি-পিসিআরকে জ্বলন্ত তুষের কণা ভাবা যেতে পারে। আমাদের ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র অনেক ক্ষেত্রেই বিকল থাকে। সক্রিয়তা আশু প্রয়োজন।

 
বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ: জনস্বাস্থ্য ও হাসপাতাল প্রশাসন বিশেষজ্ঞ 
baizid.romana@gmail.com


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৬ দফা দাবিতে সদর উপজেলায় স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি 
  • রাসায়নিক নমুনা সংগ্রহ ও শনাক্তকরণে কাস্টমস ও পুলিশের জন্য দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ
  • নর্দমার তরল বর্জ্য পরীক্ষায় করোনা প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস
  • ফতুল্লায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, ২ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  • সোনালী ব্যাংকে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অবহিতকরণ সভা