চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে সরকারি অনুদানের ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই অনুসন্ধানে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরোনোর মতো মিলেছে লুটপাটের চমকপদ চিত্র। হাসপাতালটির সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারি অনুদানের দুই কোটি ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অনুদানের ওই অর্থ প্রথমে হাসপাতালের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। পরে ১২টি চেকের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর তা নিজের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেন। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল গরিবের হাসপাতাল নামে পরিচিত। প্রতি বছর স্বল্প ব্যয়ে এখান থেকে সেবা নেন চার লাখের বেশি রোগী। দরিদ্রদের সেবায় প্রতি বছরই হাসপাতালটিতে অর্থ অনুদান দেয় সরকার। সেই টাকা লোপাট করেছেন জাহাঙ্গীর।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক সবুজ হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের ব্যাংক হিসাব থেকে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ১২টি চেকের মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি টাকা সরিয়ে আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছি। দুর্নীতির মামলা করার সুপারিশ করেছি। অনুমোদন পেলে করা হবে।’ 
এ বিষয়ে হাসপাতালের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, ‘দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়টি আমার নলেজে আছে। এ নিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আমি কথাও বলেছি। সরকারি কোনো অর্থ আত্মসাৎ কিংবা লোপাট করা হয়নি। সবই হাসপাতালের কাজে ব্যয় করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে এগুলো চাকরিচ্যুত এক নারীর ষড়যন্ত্র।’
১২ চেকে ব্যক্তিগত হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি এই প্রতিবেদক কীভাবে জানলেন সেই প্রশ্ন তুলে জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, ‘এসব তথ্য আপনার জানার কথা নয়। বিষয়টি নিয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে। তারা বিষয়টি দেখছেন।’ মামলা ঠেকাতে তদবির করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কেন, এ দেশে সবাই এ রকম তদবির করে থাকে। এটি আবার লিখে দিয়েন না।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চৌধুরী আবদুল্লাহ বলেন, সরকারের অনুদান হাসপাতালের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে। সেখান থেকে সভাপতির ব্যক্তিগত হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হবে কেন? হাসপাতালের কাজে অর্থ ব্যয় হলে হাসপাতালের ব্যাংক হিসাব থেকেই তা দেওয়া হবে। ব্যক্তিগত হিসাবে সরানোর অর্থই হলো এখানে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সরকারি অর্থ ব্যক্তিগত হিসাবে সরানোর সুযোগ কোনো আইনেই নেই।’  

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের নামে নগরের আন্দরকিল্লা সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে একটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত অনুদানের চেকের ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা শুরুতে ওই হিসাবে জমা হয়। ২০২০ সালের ৬ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১৭ মের মধ্যে ১২টি চেকের মাধ্যমে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা কমার্স ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় নিজ অ্যাকাউন্টে (হিসাব নম্বর-০০৬২১০০০৪২৮) সরিয়ে নেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। 
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডায়াবেটিক হাসপাতালটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাহাঙ্গীর চৌধুরী নিজের সইয়ে ১২টি চেকে হাসপাতালের ব্যাংক হিসাব থেকে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা স্থানান্তর করেন। পরবর্তী সময়ে ওই টাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন তিনি, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার সুপারিশ করা হলো। 
এর আগে ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মু.

জসীম উদ্দিন খানের জমা দেওয়া এক তদন্ত প্রতিবেদনে হাসপাতালটিতে অনুদানের ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য উঠে আসে। এ নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তদন্তে হাসপাতালের নথিপত্র ও ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় দুদকের দল।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ন ন তর অন দ ন র ব ষয়ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর

ফাইল ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ