চট্টগ্রামের একমাত্র বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এখন অনেকটাই মামলাশূন্য। বর্তমানে এই ট্রাইব্যুনালে মাত্র ৭২টি মামলা রয়েছে। অথচ চট্টগ্রামের অন্য আদালতগুলোতে বছরের পর বছর ঝুলে আছে লক্ষাধিক মামলা। যার মধ্যে আলোচিত অনেক মামলাও রয়েছে। আলোচিত মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে না আসায় হতাশ বিচারপ্রার্থীরা।

চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল অবস্থিত। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য আসে। এখানে মামলা আসে দুভাবে। চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রথমে মনিটরিং কমিটি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। সেখান থেকে যায় আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করে এগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এসব মামলাকে বলা হয় প্রজ্ঞাপনের মামলা। চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে এ ধরনের মামলা বিচারাধীন আছে মাত্র সাতটি। এর বাইরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকেও আলোচিত মামলা আসে ট্রাইব্যুনালে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালকে বিশেষ দায়রা আদালত ঘোষণা করেছে। এর ফলে সরাসরি বিচারের জন্য জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত চাঞ্চল্যকর ও পুরোনো মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো যায়। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে এ ধরনের বিচারাধীন মামলা সংখ্যা ৬৫।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাশে অবস্থিত প্রথম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৪ হাজার ৬১৮টি মামলা। দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা বিচারাধীন ৪ হাজার ৭৯১টি। পুরো মহানগর দায়রা জজ আদালতে রয়েছে ৪৬ হাজার ৮৯৩টি মামলা। এভাবে চট্টগ্রামের ৭০টি আদালতে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে প্রায় দেড় লাখ।

চাঞ্চল্যকর হত্যা, ধর্ষণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন পাস হয়। ট্রাইব্যুনালে ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে প্রতিটি মামলার ১৫ থেকে ২০ দিন অন্তর ধার্য তারিখ পড়ে। এতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। অন্য আদালতে তারিখ পড়ে তিন থেকে চার মাস অন্তর।

জেলার চাঞ্চল্যকর মামলার মনিটরিং কমিটিকে ট্রাইব্যুনালে নতুন মামলা পাঠাতে বলা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে সভায় মাত্র দুটি মামলা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেগুলো এখনো আসেনিএস ইউ এম নুরুল ইসলাম, সরকারি কৌঁসুলি (পিপি), চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল

মামলা কম থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস ইউ এম নুরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেলার চাঞ্চল্যকর মামলার মনিটরিং কমিটিকে ট্রাইব্যুনালে নতুন মামলা পাঠাতে বলা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে সভায় মাত্র দুটি মামলা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেগুলো এখনো আসেনি। এ ছাড়া কমিটিকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

জেলা চাঞ্চল্যকর মামলার মনিটরিং কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মফিজুল হক ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত ছয় মাসে কমিটির সভা হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। পরবর্তী সভায় মামলা পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরবেন।

মনিটরিং কমিটির সভা ও ট্রাইব্যুনালে মামলা পাঠানোর বিষয়ে জানতে জেলা চাঞ্চল্যকর মামলার মনিটরিং কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, এখানে প্রজ্ঞাপন হয়ে আসা মাত্র সাতটি মামলার বিচার চলছে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরের মা ও দুই শিশু খুনের মামলা, বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসিম আহমেদ হত্যা মামলা; চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি ভুজপুরের তিনটি, লোহাগাড়ার একটি এবং কুমিল্লার একটি মামলা। প্রজ্ঞাপন ছাড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে আসা ৬৫ মামলার বিচারকাজ চলছে। এসব মামলা হত্যা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা। অথচ ২২ বছর আগের শিপিং ব্যবসায়ী রেজাউর রহমান জাকির এবং বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণের মামলা, চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দের মামলা, বাঁশখালীর ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলা, আনোয়ারা তালসরা দরবারের র‍্যাবের কোটি টাকা লুটের মামলাসহ অর্ধশত চাঞ্চল্যকর মামলা রয়েছে।

চাঞ্চল্যকর হত্যা, ধর্ষণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন পাস হয়। ট্রাইব্যুনালে ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে প্রতিটি মামলার ১৫ থেকে ২০ দিন অন্তর ধার্য তারিখ পড়ে। এতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। অন্য আদালতে তারিখ পড়ে তিন থেকে চার মাস অন্তর।আরও পড়ুনবিচারের আশা আর করেন না, ২০ বছর ধরে ঘুরতে ঘুরতে এখন ক্লান্ত বিমল শীল১৭ নভেম্বর ২০২৩

তালসরা দরবার শরিফের গাড়িচালক ও মামলার বাদী মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিদের এমন শাস্তি যেন হয়, যাতে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনী এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়। এ জন্য মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো উচিত।’

বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে ও অপরাধীদের বিচার দ্রুত করতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শিগগিরই আরও মামলা পাঠানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার। জেলা মনিটরিং কমিটিকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ রব য কম ট ক কম ট র র জন য অপর ধ সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুমের ওষুধ সেবন করে গুরুতর অসুস্থ হিরো আলম

দেশের আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে তাকে ধনুট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে আশঙ্কজনক হওয়ায় তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি ঢাকা থেকে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি গ্রামে এসে এক বন্ধুর বাসায় যান। পরে রাতের কোনো এক সময়ে ঘুমের ওষুধ সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

হিরো আলমের বন্ধু জাহিদ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালে হিরো আলমকে শয়নকক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে নেওয়া হয় ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।’’

আরো পড়ুন:

হিরো আলমকে হত্যাচেষ্টা: জামিন পেলেন রিয়া মনি ও কামরুল

সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৩ সংসার ভাঙার অভিযোগ করলেন হিরো আলম 

ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান বলেন,  ‘‘আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম অতিমাত্রায় ঘুমের ট্যাবলেট সেবন করেছেন। তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’’

জাহিদ হাসান জানিয়েছেন, হিরো আলম তার স্ত্রী রিয়ামণির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেন। তিনি হতাশাও প্রকাশ করেন। এরপর রাতের খাবার না খেয়ে একটি ঘরে একা ঘুমিয়ে পড়েন। 

সকাল ১০টার দিকেও হিরো আলমের কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছিলো না। শেষে জাহিদ হাসান তার ঘরে প্রবেশ করে দেখেন হিরো আলম অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন। পরে তাকে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ