নরসিংদীতে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। নরসিংদী শহরের দত্তপাড়া পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকায় গতকাল শনিবার রাতে স্বামী শংকর চন্দ্র দাসের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা যায়, প্রায় ৭ বছর আগে নরসিংদী শহরের ঘোড়াদিয়া-সংগীতা এলাকার জন্টু চন্দ্র দাসের মেয়ে স্মৃতি রাণী দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় দত্তপাড়া এলাকার যোগেশ চন্দ্র দাসের ছেলে শংকর চন্দ্র দাসের। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে শংকরকে নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা, স্বর্ণলংকারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দেয় কনেপক্ষ। এরপরও শংকর প্রায়ই তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে আরও টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্মৃতির পরিবার মাঝে মধ্যে টাকা দিতো। এতেও তার মন ভরেনি। এক পর্যায়ে আরও দুই লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। এতে স্মৃতি রাণী দাস আর কোনো টাকা এনে দিতে পারবেন না বলে জানালে নির্যাতন চালায় শংকর চন্দ্র দাস। এই নির্যাতনের কথা স্মৃতি রাণী তার মাকে মোবাইল ফোন করে জানান। পরে মেয়ের জামাই শংকরকে জিজ্ঞেস করতে বার বার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। শনিবার রাতেও স্মৃতি রাণীকে মারধর করেন স্বামী শংকর। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ওই গৃহবধূ। পরে বাড়ির লোকজন স্মৃতি রাণীকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর শংকর রাত ১০টার দিকে ফোন করে তার শাশুড়িকে বলেন, ‘আপনার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে।’

খবর পেয়ে স্মৃতি রাণী দাসের পরিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তাদের মেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ সময় স্বামী শংকর চন্দ্র দাস হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে স্মৃতি রাণার পক্ষের লোকেরা ধরে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ তাকে রাতেই থানায় নিয়ে যায়।

আজ রোববার নরসিংদী জেলা হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর স্মৃতি রাণী দাসের লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রোমান সাদেকিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী শংকর চন্দ্র দাসকে আটক করা হয়েছে। থানায় মামলা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ট য় হত য নরস দ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি

পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।

মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।

মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।

ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ