বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত পাবনার আশিক-গৌরব-ধ্রুব
Published: 2nd, July 2025 GMT
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পাবনার তিন কৃতী সন্তান আশিকুর রহমান, মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব ও খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। তাদের মধ্যে আশিক শিক্ষায়, ধ্রুব স্বাস্থ্যে এবং গৌরব প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এই তিন তরুণ তুর্কি চাকরি জীবনে প্রবেশের পর সমাজের অবহেলিত এবং অসহায় মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ।
আশিকুর রহমান (২৮) পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও মরহুমা আলেয়া খাতুনের সন্তান। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। নিজের সাফল্যের পেছনে বাবা ও ভাইয়ের অবদানের কথা জানিয়েছেন এই যুবক।
আরো পড়ুন:
৪৮তম বিশেষ বিসিএসের প্রিলিমিনারি ১৮ জুলাই
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন
আশিক বলেন, “আমার বাবা সাইকেল মেকানিক ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খিদিরপুর বাজারে গিয়ে সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোমতে সংসার আর আমাদের ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে মা মারা যান। বাবা আমাকে আগলে রাখতেন। তিনি কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। বাবা আর মেজো ভাই সবুজের জন্য আজ আমি এখানে।”
আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আশিক। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। এরপর থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন আশিক।
আশিক ২০২৪ সালের ২০ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এবার ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব পাবনা পৌরসভার শালগাড়িয়া কসাইপট্টি মহল্লার মো.
ফাহিম রহমান ধ্রুব ২০১৩ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ২০২১ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন তিনি। ২০২৩ সালে সেখানে ইন্টার্ন শেষ করেন। ইন্টার্ন চলা অবস্থায় বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন এই যুবক।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে ধ্রুব বলেন, “মা-বাবা সবসময় আমাকে উৎসাহ-সাহস আর সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে আমার শিক্ষক আর ব্যাচমেটদেরও অবদান রয়েছে। সবার দোয়া, ভালোবাসা এবং সহযোগিতায় আজ আমি বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।”
বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। পাবনা পৌরসভার ঘোষপাড়া মহল্লার বাসিন্দা খন্দকার গোলাম মুস্তাফা-মরহুমা গুলশান আরা দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি।
গৌরবের বাবা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে অবসরে যান। মা মরহুমা গুলশান আরা একই প্রতিষ্ঠানে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি করতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
গৌরব ২০১১ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১৩ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।
গৌরব স্নাতকের পরই শুরু করেন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। পড়ালেখার পাশাপাশি গৌরব একজন প্রশিক্ষিত সংগীত শিল্পী, যা তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে সহায়তা করেছে। এই দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল এসেছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে গৌরব বলেন, “এই সফলতার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার মায়ের। মা সবসময় আমাকে বলতেন-ভালো করে পড়ো, ইনশাআল্লাহ একদিন সফল হবে। আজ তিনি আমার পাশে নেই, কিন্তু আমি জানি, আজকের দিনে তিনি পাশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বাবাও সবসময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বলতেন, চেষ্টা করো, সবসময় পাশে আছি।”
বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ দিতে গিয়ে এই তিন তুর্কী বলেন, সব সময় সৎ আর পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নেগেটিভ কোনো কিছু ভাবা যাবে না। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস শক্ত রাখতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত গড়ে ৪ ঘণ্টা পড়ালেখায় সময় দিতে হবে। নিজের সাবজেক্টের বাইরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় আয়ত্বে রাখতে হবে।
তারা বলেন, ভাল কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু তা যেন লক্ষ্য থেকে সরিয়ে না দেয়। ভাগ্য সহায় হলে অবশ্যই সফলতা আসবে।
ভবিষ্যত জীবনে সমাজের অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এই তিন যুবক। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব স এস ব স এস র প রস ত ত পর ক ষ য় ব স এস প র রহম ন প বন র
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার হলেন ১৬৯০ জন
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ১ হাজার ৬৯০ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার পর পিএসসির ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়। পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৪৪তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডার পদে ১ হাজার ৭১০টি শূন্যপদের বিপরীতে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ১ হাজার ৬৯০ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য কমিশন সাময়িকভাবে মনোনয়ন দিয়েছে। যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ায় কারিগরি/পেশাগত ক্যাডারের ২০টি পদে প্রার্থী মনোনয়ন করা সম্ভব হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, মনোনয়ন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে (www.bpsc.gov.bd) এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ওয়েবসাইটে (http://bpsc.teletalk.com.bd) পাওয়া যাবে। প্রকাশিত ফলাফলে যুক্তিসংঙ্গত কারণে কোনো সংশোধনের প্রয়োজন হলে কমিশন তা সংশোধনের অধিকার সংরক্ষণ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেও সকল প্রার্থীকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য মনোনয়ন করা সম্ভব হয়নি। যে সকল প্রার্থীকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য মনোনয়ন করা সম্ভব হয়নি, তাদের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের বিধান অনুযায়ী সরকারের কাছ থেকে শূন্য পদে নিয়োগের অধিযাচন প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে মেধাক্রম ও বিদ্যমান বিধান অনুসরণ করে সুপারিশের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। এ ক্যাডারে পদসংখ্যা ৭৭৬টি। এছাড়া প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশে ৫০ জন, পররাষ্ট্রে ১০ জন, আনসারে ১৪ জন, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০ জন, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭ জন।