চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গঠিত কোয়াড জোটের বৈঠক ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ওই বৈঠকে জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন। বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে চীনের বাড়তে থাকা শক্তি ও আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

এমন একসময় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে বড় শুল্ক আরোপ করেছেন। কার্যত বিষয়টি জোটের অংশীদারদেরও পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। রয়টার্স জানায়, জোটের কোনো সদস্যই ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক থেকে রেহাই পায়নি। 

চীনকে মোকাবিলা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কোয়াডের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উদ্যোগ চালুর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়। তবে বাণিজ্য ও অন্যান্য মতবিরোধের কারণে অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন। 

ওয়াশিংটনে বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ শৃঙ্খলের আকস্মিক সংকোচন ও ভবিষ্যতের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন চার দেশ। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, নির্দিষ্ট অমৌলিক পণ্য ও খনিজ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির জন্য বাজারবহির্ভূত নীতি ও অনুশীলনের ব্যবহার নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আমরা বৈচিত্র্যময় ও নির্ভরযোগ্য বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছি। খনিজ ও অমৌলিক পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের জন্য যে কোনো একটি দেশের ওপর নির্ভরতা শিল্পগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সেই সঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠকটিকে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বলেছেন। আর স্বাগত জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সদস্যদের ‘গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার’ বলে অভিহিত করে বলেন, নির্দিষ্ট বিষয়ে ‘পদক্ষেপ গ্রহণের’ সময় এসেছে।

জাপান বৈঠকের আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত একটি বার্ষিক প্রতিরক্ষা বৈঠক স্থগিত করে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যয়ের চাপেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে টোকিও। 

অন্যদিকে, ভারত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পর্যটকদের ওপর হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ রুখতে ‘ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করেছেন’– এ দাবিকে ভিত্তিহীন বলছে নয়াদিল্লি। 

কোয়াডের চার দেশ চীনের আধিপত্য ঠেকাতে একমত হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ নীতিতে মিত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ব্যয়, এমনকি পারস্পরিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনে কোয়াডের সম্মিলিত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অস্ট্রেলিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা আচরণে উদ্বিগ্ন। দেশটিকে পারমাণবিক সাবমেরিন দিতে গঠিত আকুস প্রকল্প নিয়ে পেন্টাগনের তৃতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এলব্রিজ কোলবি পুনর্বিবেচনা শুরু করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ক্যানবেরায়।

গত মঙ্গলবারের বৈঠক নিয়ে আশাবাদী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, এ বৈঠক সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার ও শক্তিশালী সরবরাহ চেইন গঠনে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্যে অঙ্গীকারের প্রকাশ।

বৈঠকের পর রুবিও দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাপানের তাকেশি ইওয়াইয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পেনি ওয়াংয়ের সঙ্গে। গত সোমবার নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, কোনো সম্পর্কই সমস্যামুক্ত হয় না। কিন্তু মূল বিষয় হলো, সমস্যাগুলো কীভাবে সামাল দেওয়া যায় এবং সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়। তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, মহামারি প্রস্তুতি ও শিক্ষার মতো অনেক ইস্যু রয়েছে, যা আলোচনার দাবি রাখে।

এ বছরের শুরুর দিকে কোয়াড ঘোষণায় জানানো হয়েছিল, ভারতের আসন্ন কোয়াড সম্মেলনের আগে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে পর্দার আড়ালে রাজনৈতিক টানাপোড়েন প্রকট হয়ে উঠছে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সাবেক অস্ট্রেলীয় রাষ্ট্রদূত আর্থার সিনোদিনোস বলেন, ওয়াশিংটন এ বৈঠককে নিরাপত্তাকেন্দ্রিক বার্তা দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু বাণিজ্য ও আকুস নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগ এ বার্তাকে ছাপিয়ে যেতে পারে।

জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে গত ফেব্রুয়ারির শিগেরু ইশিবার সঙ্গে ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে গতি কমেছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ভারতবিষয়ক গবেষক রিচার্ড রসো বলেন, ট্রাম্পের ভারতসম্পর্কিত কৌশল কিছুটা অগোছালো হলেও দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত স্বার্থ অপরিবর্তিত রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ন র হ মক পরর ষ ট রমন ত র য ক তর ষ ট র পরর ষ ট র সরবর হ অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না

চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।

বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।

বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।

জ্বালানি তেল

বিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।

কৃষিপণ্য

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।

খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।

২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।

চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।

দেশে কেন দাম বেশি

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।

আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।

দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
  • সবজির দাম কমতির দিকে, আটার দাম কেজিতে বাড়ল ৫ টাকা