প্রথম আলো:

৩০ বছর আগে ঢাকা ব্যাংক গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য কী ছিল? এই ৩০ বছরে তার কতটুকু অর্জিত হলো?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ঢাকা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। এই ব্যাংকের উদ্যোক্তারা ছিলেন দেশের সৎ, সজ্জন ও সুপরিচিত ব্যবসায়ী, যাঁরা দীর্ঘদিনের পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্বের ভিত্তিতে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক ও উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (এসএমই) অর্থায়ন বাড়ানো, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা চালু করা (যেমন অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম, এসএমএস ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং)। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঢাকা ব্যাংক এসব লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৫ সালে মাত্র ১০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ব্যাংকটি। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘ এ পথযাত্রায় ব্যাংকটি তার আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা অনেক বেসরকারি ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। ঢাকা ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থার কারণে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত দাঁড়িয়েছে। এ আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সারা দেশে ১১৭টি শাখা, ৩৫টি উপশাখা, ৩টি এসএমই সেবাকেন্দ্র, ১০৫টি এটিএম বুথ ও অন্যান্য বিকল্প সেবা চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রাহকদের আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ঢাকা ব্যাংক।

করপোরেট ব্যাংকিং খাতে ঢাকা ব্যাংক বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তবে করপোরেট ঋণের প্রতি অতিনির্ভরতা কমিয়ে এসএমই, রিটেইল এবং কৃষি খাতে ঋণ সম্প্রসারণের কৌশল গ্রহণ করেছি আমরা। ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের হস্তক্ষেপ না থাকা, ঋণ প্রদানে স্বচ্ছতা ও ঝুঁকিভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ব্যাংকের ঝুঁকির মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক থেকেও ঢাকা ব্যাংক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

প্রথম আলো:

গত দেড় দশকে অনেক বেসরকারি ব্যাংকে উত্থান-পতন দেখা গেল। সেখানে ঢাকা ব্যাংক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: গত দেড় দশকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নানা জটিল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অর্থনৈতিক মন্দা ও বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রভাব, নিয়ন্ত্রণহীন ঋণ প্রদান, খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়া, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও স্বচ্ছতার অভাব, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ, করোনা মহামারির প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের বাধ্যবাধকতা। এসব কঠিন পরিস্থিতির কারণে অনেক বেসরকারি ব্যাংক তাদের স্থিতিশীলতা হারিয়েছে; কেউ মূলধন সংকটে পড়েছে, কেউ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির আওতায় এসেছে, আবার কিছু ব্যাংক মুনাফার ধারাবাহিকতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে; কিন্তু ঢাকা ব্যাংক এ সময়েও ব্যাংকিং খাতে একটি সুসংহত ও সুশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধারাবাহিক অগ্রগতি বজায় রাখতে পেরেছে। তার পেছনে মূল কারণ ছিল ঢাকা ব্যাংক শুরু থেকেই দায়িত্বশীল পরিচালনা পর্ষদ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা দলের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা ব্যাংকের সুশাসন ও কার্যকারিতাকে শক্তিশালী করেছে। ঢাকা ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ব্যাংকটি ঋণ ঝুঁকি, বাজার ঝুঁকি ও পরিচালনগত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সময়োপযোগী নীতিমালা, কাঠামো এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এর ফলে অনিয়ন্ত্রিত ঋণ প্রদান, অনিয়ম ও আর্থিক ক্ষতি থেকে ব্যাংকটি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে। এ ছাড়া সুশাসন, পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও সম্পদের মান রক্ষা—এই তিন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ফলে অনেক ব্যাংকের চেয়ে ঢাকা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কম।

* ১৯৯৫ সালে ১০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল
* বর্তমানে ঢাকা ব্যাংকের মূলধন এক হাজার কোটি টাকার বেশি
* ব্যাংকের আমানত বেড়ে এখন ৩২ হাজার কোটি টাকা
* ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার কোটি টাকা
*  দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ এই ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়প্রথম আলো:

ঢাকা ব্যাংক তো করপোরেট–নির্ভর ব্যাংক। বেশ আগে থেকেই অর্থনীতি একরকম চুপসে আছে। সরকার পরিবর্তনের পর এ খাত আরও সংকুচিত হয়েছে। আপনাদের করপোরেট গ্রাহকেরা কেমন করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: বর্তমানে ব্যাংকিং খাত সামগ্রিকভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে। করপোরেট গ্রাহকেরা তার বাইরে না। বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বেড়েছে। তবে ঢাকা ব্যাংক শুরু থেকেই ঝুঁকি সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যাংকিং নীতির কারণে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। আমাদের করপোরেট পোর্টফোলিওতে অধিকাংশই শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সচেষ্ট। তারপরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। তবে এটি এখনো নিয়ন্ত্রণাধীন এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের হারের তুলনায় খুবই কম। আমরা বিশ্বাস করি, এই মুহূর্তে কঠোরতা নয়, সহযোগিতামূলক ব্যাংকিং সবচেয়ে জরুরি। এই মনোভাব থেকেই আমরা করপোরেট গ্রাহকদের পাশে আছি। আশা করছি, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

প্রথম আলো:

এসএমই খাত দেশের অর্থনীতির প্রাণ। এ খাতে আপনাদের অবস্থান কেমন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: এসএমই খাত আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এ খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদন বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য নিশ্চিত করে। ঢাকা ব্যাংক এ খাতকে কৌশলগত অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। যদিও একসময় আমরা করপোরেট ব্যাংক হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলাম; কিন্তু এখন আমরা এসএমই ব্যাংকিংকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমানে আমাদের রয়েছে তিনটি বিশেষায়িত এসএমই সেন্টার, পাশাপাশি শতাধিক শাখা এবং উপশাখা থেকে আমরা এসএমই উদ্যোক্তাদের সেবা দিচ্ছি। নারী উদ্যোক্তা, স্টার্টআপ কিংবা গ্রামীণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা—সবার জন্যই রয়েছে বিশেষ পণ্য ও সহায়তা কাঠামো। শুধু অর্থ নয়, আমরা দক্ষতা উন্নয়ন, আর্থিক সাক্ষরতা এবং ব্যবসায়িক পরামর্শেও কাজ করছি। অবশ্য চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এসএমই খাত কিছুটা চাপে আছে। কাঁচামালের দাম, আমদানি জটিলতা ও নগদ অর্থের সংকট অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে আমরা দেখছি—অনেক উদ্যোক্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযোজন করছে নতুন বাজারে যাচ্ছে।

এই মুহূর্তে কঠোরতা নয়, সহযোগিতামূলক ব্যাংকিং সবচেয়ে জরুরি। এ মনোভাব থেকেই আমরা করপোরেট গ্রাহকদের পাশে আছি। আশা করছি, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবেশেখ মোহাম্মদ মারুফ, এমডি, ঢাকা ব্যাংকপ্রথম আলো:

আগে ডলার–সংকট ছিল, এখন টাকার সংকট। খেলাপি ঋণ বেড়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি অনেক কম। সার্বিক পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আগে ডলারের একটি বড় সংকট ছিল, এখন তা কেটে গেছে। রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন ভালো, দামও সহনীয় পর্যায়ে। আমদানি চাপ তৈরি হলে কী হয়, তখন বোঝা যাবে। তবে এখন টাকার সংকট আছে। আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কম। আবার খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। ২৫ শতাংশ অর্থ খেলাপি হয়ে পড়ায় তা আটকে পড়েছে। এটা ব্যাংক খাতে তারল্যসংকটের অন্যতম কারণ। এখন সব ব্যাংক মিলে ঋণ দেওয়ার মতো ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল আছে, যা এ দেশের অর্থনীতির তুলনায় খুবই কম। সরকারের কর আদায় কম হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন আর্থিক পণ্যের সুদ ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো সেখানে টাকা বিনিয়োগ করছে।

খেলাপি হয়ে পড়া ব্যবসায়ীদের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংক এবার বেশ উদ্যোগী ভূমিকা রাখছে। যাঁরা প্রকৃত কারণে খেলাপি হয়েছেন, তাঁদের ঋণ ঠিক করা হচ্ছে। তাঁরা অনেকে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারছেন; কিন্তু সমস্যা হলো ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে কতটা এভাবে ঠিক করা সম্ভব হবে। আমরা অপেক্ষা করছি বাংলাদেশ ব্যাংক কি নীতিমালা দেয়। এর ওপর নির্ভর করবে খারাপ হয়ে পড়া ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ।

প্রথম আলো:

ঢাকা ব্যাংককে নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতার উৎকর্ষ। ব্যাংকিং খাত বর্তমানে যে পরিবর্তনশীল বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে স্থায়ী সফলতা পেতে হলে কেবল আর্থিক শক্তিমত্তা নয়, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং মানুষের ওপর আস্থার সমন্বয় করতে হবে। সেটিই আমরা করছি। ঢাকা ব্যাংক সামনের দিনে দেশের অর্থনীতিতে যেসব খাতের চাহিদা আছে, অর্থাৎ এসএমই ও ভোক্তা খাত সেদিকে বেশি নজর দেবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকা ব্যাংক। যা সামনের দিনে আরও ত্বরান্বিত হবে। গ্রাহকেরা যাতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সব ধরনের ব্যাংকিং করতে পারে, তা নিশ্চিতে কাজ করছে ঢাকা ব্যাংক। সামনের দিনে ডিজিটাল ব্যাংক আসবে, তার আগেই যাতে আমরা ডিজিটাল হয়ে যাই সে জন্য কাজ চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ খ ম হ ম মদ ম র ফ প রথম আল গ র হক র পর স থ ত প রব দ ধ ব যবস য় ব সরক র ঋণ র প পর চ ল আম দ র অন ক ব আর থ ক আমদ ন ম লধন

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, এসএমই কোম্পানি তালিকাভুক্তকরণ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, নতুন আর্থিক পণ্য উদ্ভাবন এবং স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে অর্থায়ন বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) যৌথ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গুলশানে ডিসিসিআই কার্যালয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ এবং ডিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ ও পরিচালনা পর্ষদের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

বিআইএফএফএলের সঙ্গে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ঋণ চুক্তি

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালু করবে গোল্ডেন হার্ভেস্ট

ডিএসই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সভায় ডিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ ডিএসই’র প্রতিনিধিবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ব্যবসায় লাভ ক্ষতি রয়েছে। যে সকল কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করেছে তাদের সাথে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের মতো দেশগুলোর অথবা আমাদের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সাথে তুলনা করে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপি রেশিও এখনও ২০% নিচে। আমাদের মতো অর্থনীতির অনেক দেশে এটি ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের অধিক। পুঁজিবাজারে এসএমই-এর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য কিছু দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দ্বৈত কর ব্যবস্থার প্রত্যাহার ও এর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং পণ্যের বৈচিত্রকরণ করা। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এসএমই কোম্পানিগুলোর ব্যাপক অবদান রয়েছে। এসএমই কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সের উপর বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে আরজেএসসি-তে দুই লাখের উপর কোম্পানি রয়েছে এর মধ্যে মাত্র ৩৬০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও সরকারি কোম্পানি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এসময় ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত হতে পারেনি। কিন্তু আশার বিষয় হলো এই সরকার প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজারের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামানকে এই বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই বাজেটে পুঁজিবাজারবান্ধব কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- টার্নওভারের উপর এআইটি কমানো, মার্চেন্ট ব্যাংকের ট্যাক্স কমানো ও তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স এর ব্যবধান বৃদ্ধি করা। বিএসইসি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো হলো- সিসি একাউন্টের ইন্টারেস্ট বিষয়ে সমাধান ও বিও একাউন্টের নবায়ন ফি কমানো। বিএসইসি মার্কেটে শৃঙ্খলা আনার জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। একটি দক্ষ, স্বচ্ছ এবং ন্যায় ভিওিক পুঁজিবাজারের বিকাশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখন একটি সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ডিএসই পুঁজিবাজারের কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে, এই উন্নয়নের রূপান্তরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিগত দিনে মার্কেটে রেগুলেটর অনেক সময় অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ করেছে। এখন পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। বিনিয়োগকারীগণ বাজারে ফিরে আসছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগন সক্রিয় হচ্ছে। বর্তমানে ইক্যুইটি মার্কেটের সাথে বন্ড মার্কেটেকে কিভাবে উন্নয়ন করা যায় এই বিষয়ে ডিসিসিআই-এর সহযোগিতা প্রয়োজন। ডিসিসিআই ক্যাপিটাল মার্কেটের একটি বড় স্টেকহোল্ডার।

তিনি বলেন, আইপিও প্রসেস এর ডিজিটালাইজেশন এর প্রক্রিয়া চলমান। এছাড়াও ভালো কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে নিয়ে আসার জন্য গ্রিণ চ্যানেল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএসইসি এই বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করছে। ডিএসই ও ডিসিসিআই উভয় প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী ও টেকসই করার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান রাখতে পারে। এরই লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে এসএমই উদ্যোক্তাদের এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্তির প্রসেস এবং অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)’র সুবিধা ও তালিকাভুক্তির প্রসেস নিয়ে চেম্বার সদস্যদের সাথে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

এছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি সহজ করা সম্ভব। এছাড়াও এসএমই একটি বিশাল খাত। বেসরকারি খাতের প্রায় ৭৫% এসএমই। তাদের এক্সপোজার আছে, সংযোগ আছে, উন্নয়নের জায়গা আছে। তাই সরকার এ ব্যাপারে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা নিতে পারে তা বিবেচনায় আনতে পারে। ২০০৯ সালে, একটি সমীক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যে, সরকারের ৭.৫ মিলিয়ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। আমরা মনে করি যে, এই অর্থনৈতিক ইউনিট থেকে অধিক পরিমানে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, রাজিব এইচ চৌধুরী, ভাই প্রেসিডেন্ট মো. সেলিম সোলাইমান, সেক্রেটারি জেনারেল (ভারপ্রাপ্ত) এ. কে. এম আসুদুজ্জামান পাটুয়ারি, ডিএসইর পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অব.), সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মো. শাকিল রিজভী, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা