১৯৯৩ সাল। সারা দুনিয়ার সিনেমাপ্রেমীরা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল পর্দায়– লম্বা ঘাড়ওয়ালা ব্র্যাকিওসরাস যখন মাথা তোলে আকাশের দিকে, তখন মনে হয়েছিল যেন আদি পৃথিবীর এক টুকরো ইতিহাস ফিরে এসেছে। সেটিই ছিল ‘জুরাসিক পার্ক’।
স্টিভেন স্পিলবার্গের হাত ধরে ‘জুরাসিক পার্ক’ প্রথমবারের মতো পর্দায় যখন এলো তখন থেকেই এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমাগুলো যেন পরিণত হয়েছে এক নিজস্ব ঘরানায়। কিছু বৈশিষ্ট্য যেন অমোঘভাবে জুড়ে গেছে প্রতিটি কিস্তিতে: একদল বিজ্ঞানী, কিছু অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী চরিত্র, গোপনে বসে থাকা কোনো বিলিয়ন ডলারের করপোরেট ষড়যন্ত্র এবং সর্বোপরি ডাইনোসর। তবে যতবারই পর্দায় তারা এসেছে, ততবারই কিছু সময়ের জন্য হলেও দর্শকদের মনে জেগে উঠেছে এক নিঃশব্দ বিস্ময়, এক অপার মুগ্ধতা।
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ডাইনোসরদের নিয়ে এসেছে আরও ছয়টি সিনেমা। সব সিনেমাই একদম একরকম নয়। কিছু সিনেমা ভয়ের চেয়ে বিস্ময়ের ওপর বেশি জোর দিয়েছে, কিছু আবার নিখাদ থ্রিলের দিকে ঝুঁকেছে। ২০২২ সালের ‘ডমিনিয়ন’ সিনেমায় যেমন একটি দৃশ্যে দেখা যায় বরফে ঢাকা পরিবেশে দুটি ব্র্যাকিওসরাস ধীরে হেঁটে যাচ্ছে, আর মানুষ দাঁড়িয়ে আছে নির্বাক হয়ে। এই দৃশ্যটি ছিল বিরল, কারণ এতে ভয় নয়; বরং ডাইনোসরের প্রতি শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসাই ছিল মুখ্য।
এসব বলার কারণ একটাই– ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ সেই বিস্ময় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। এই সিনেমার গল্পে দেখা যাবে, ডাইনোসরের উপস্থিতি এত সাধারণ হয়ে গেছে যে মানুষ বিরক্ত। রাস্তা বন্ধ করে দেয় তারা, কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, স্টুডিও ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে নতুনভাবে শুরু করতে চাইছে। ‘ডমিনিয়ন’-এর পরে গল্প শুরু হয়েছে, আগের মানব চরিত্রদের কেউ নেই।
এবারের গল্পে দেখা যাবে, মানুষ এখন ডাইনোসর ও তাদের থিম পার্ক নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন পৃথিবী ডাইনোসরদের থাকার জন্য অনুপযুক্ত। ফলে বেশির ভাগ ডাইনোসরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্জন এক দ্বীপে। ডাইনোসরদের সেই দ্বীপে রয়েছে অনেক মিউট্যান্ট। গল্পে দেখা যায় রুপার্ট ফ্রেন্ড অভিনীত ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসায়ী মার্টিন ক্রেবসকে। যে মানুষের জীবনের জন্য বিপ্লব ঘটাতে পারে এমন এক ওষুধ আবিষ্কারের জন্য ডাইনোসরের ডিএনএ চায়। তবে তা হতে হবে অনেক বড়, ভয়ংকর, জীবিত ডাইনোসরের; যা এখন সেই দ্বীপের মধ্যে রয়েছে। এই কাজের জন্য সে ভাড়া করে জোরা বেনেটকে (স্কারলেট জোহানসন)। বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিকে রাজি হয় সে। জোরা সাহায্যের জন্য ডাকে পুরোনো বন্ধু ও বোট-মালিক ডানকান কিনকেইড (মাহারশালা আলি)। সেই বোটে করেই তারা পৌঁছে যায় সেই দ্বীপে, যেখানে তিনটি বিরল ডাইনো প্রজাতি শান্তিতে বসবাস করছে। তাদের সঙ্গে আরও যোগ দেন ডাইনোসরপ্রেমী প্যালিওন্টোলজিস্ট ড.
এবারের সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন গ্যারেথ এডওয়ার্ডস, যিনি ২০১৪ সালের ‘গডজিলা’ এবং ‘রগ ওয়ান: অ্যা স্টার ওয়ার্স স্টোরি’র জন্য খ্যাত। তাঁর ভাষায়, ‘এই সিনেমা শুধু ভয় আর ধ্বংসের নয়–এখানে সৌন্দর্যও আছে, অনেক গভীরতায়।’
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন এক দৃশ্য– যেখানে ব্র্যাকিওসরাসের একটি পরিবার সূর্যের আলোয় ভেজা ঘাসের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছে। তাদের লেজ যেন বাতাসে দুলে ওঠা এক রাজকীয় রিবন। এমন দৃশ্যগুলো যেন আবার মনে করিয়ে দেয়, ডাইনোসরেরা কেবল ভয় নয়, তারা প্রকৃতির এক অনন্য অলৌকিকতা। এ ছাড়াও আছে কিছু বিপদের মুখে ফেলার দৃশ্য, যেটি কিছু দর্শকের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তবে এটিই তো জুরাসিক পার্কের ট্র্যাডিশন।
পরিশেষে বলা যায়, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ শুধু আরেকটি অ্যাকশনপ্যাকড সিনেমা নয়। এটি এক রূপক গল্প; যেখানে মানুষের লোভ, বিজ্ঞানের সীমাহীন হস্তক্ষেপ এবং প্রকৃতির অবহেলিত শ্রদ্ধার একটি দুঃস্বপ্ন জাগানিয়া প্রতিচ্ছবি। এটি মনে করিয়ে দেয় মানুষ সবসময় কেন্দ্র নয়, প্রকৃতি তার চেয়েও বড়। আর ডাইনোসররা শুধু ভয় দেখানোর জন্য নয়, তারা এক বিস্ময়, এক শিক্ষা। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত