মঞ্চে নাটক দেখার আনন্দ আছে। সবচেয়ে বেশি আনন্দ হচ্ছে, ঘটনা ঘটে সামনে। এখানে কোনো যান্ত্রিক আড়াল নেই। ঘটনা যদি হয় আশপাশের সময়ের, তাহলে আনন্দ আরও বেড়ে যায়। তবে নাটকের কাহিনি অনেক আগের হোক কিংবা বানানো– তাঁর ইন্টারপ্রিটেশন যদি কাছের সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতি নির্দেশ করে তাতেও দর্শকের আগ্রহ অধিক হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে প্রদর্শিত হয়েছে নাটক ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি’। খ্রিষ্টের জন্মের ৪০০ বছর আগের কাহিনি নিয়ে নাট্যদল ‘দৃশ্যপট’ প্রযোজনা করেছে এই নাটক। বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসকে নিয়ে তাঁর ছাত্র প্লেটোর লেখা ‘আপোলোগিয়া সোক্রাতুস’ অবলম্বনে শিশির কুমার দাশ সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে রচনা করেছেন ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি’।
নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আলী মাহমুদ। নাটক শুরু হয় পেলোপনেশীয় যুদ্ধে এথেন্সের পরাজয়ের সময়কে ধরে। তখন সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে পড়ে। নাটকের কাহিনি চলে আসে আমাদের চেনাজানা পরিমণ্ডলে। সামরিক শক্তির কেন্দ্র স্পার্টার নির্দেশে ৩০ জন লোক নিয়ে গড়ে ওঠে স্বৈরতন্ত্র। তাদের ওপর ন্যস্ত করা হয় নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং নতুন আইন তৈরির দায়িত্ব। দেশের আইনশৃঙ্খলার ভার তুলে দেওয়া হয় একাদশ পরিষদের হাতে। যাদের তুলনা হতে পারে স্বৈরতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি গঠন করা নিজস্ব বাহিনী। তাদের দেওয়া হয় অপরিসীম ক্ষমতা। ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি’ নাটকে আমরা দেখতে পাই সমসাময়িক দৃশ্যাবলি। পৃথিবীতে একক শাসন টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় অনুগত বুদ্ধিজীবী। এথেন্স রাজ্যের স্বৈরাচারী শক্তি, তাদের অন্যায় কাজের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন আদায় করতে চাইছিল। তারা সক্রেটিসকে আদেশ করে একজন নিরীহ নাগরিককে ধরে আনতে। এই কাজ নিজেরাই করতে পারত কিন্তু তারা বর্তমান সময়ের মতোই অবলম্বন করল এক হীন রাজনৈতিক কৌশল। সক্রেটিসকে দিয়ে এই কাজটা করাতে পারলে রাজ্যের মানুষদের বোঝানো সহজ হবে যে, সক্রেটিস তাদের সমর্থক।
সক্রেটিস এই দুর্বৃত্তায়নের কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। বলা হয় তিনি তরুণদের উস্কে দিয়ে বিপথে নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের দেশদ্রোহী করে তুলছেন। তিনি রাষ্ট্র স্বীকৃত দেবতাদের অস্বীকার করেন।
প্রহসনের সাজানো বিচারে সক্রেটিসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাঁকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। রায় ঘোষণা এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার মাঝে বন্দিশালা থেকে সক্রেটিসের পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর শিষ্যরা। কিন্তু তিনি পালিয়ে যেতে রাজি হননি। সক্রেটিস হেমলক বিষ পানে মৃত্যুবরণ করে অমর হয়ে যান।
আপস নয়, নিজ বিবেক দিয়ে পরিচালিত হওয়ার কথা বলেছেন সক্রেটিস। তিনি নিজ জবানবন্দিতে উচ্চারণ করে গেছেন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের কথা আর মানুষের মুক্তির সত্য। সেই সত্যের সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি’।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুতে এআই ব্যবহারে থাকবে শিথিলতা, তবে অপব্যবহার করা যাবে না: নির্বাচন কমিশন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে। তবে এর অপব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জুলফিকার মাহমুদ।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর আচরণবিধিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের এক দাবির জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির ৭–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা যাবে না। আমরা যারা ছোট সংগঠন, আমাদের তহবিল সীমিত। আমরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য এআই ব্যবহার করে দু-এক মিনিটের ভিডিও বানিয়ে প্রচার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের দাবি, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন শিথিল নীতি গ্রহণ করে।’
মুরাদ আরও বলেন, বিগত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখার জন্য যতগুলো ভোটকক্ষ থাকবে, সব কটি সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখতে হবে। সবার জন্য সেই সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ভোট গ্রহণকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরে জাতীয় গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জকসুর নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে বিভিন্নজনের চরিত্র হনন করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিলাম। তোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এআই ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে প্রচার–প্রসারে, তবে অপব্যবহার করা যাবে না। আর সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।