নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন বা কীভাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ পাবেন, তা নিয়ে দলগুলো এখনো একমত হতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এ–সংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব উঠে এসেছে। প্রস্তাবগুলো নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

একসময় সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান ছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যবস্থাটি বাতিল করা হয়।

গত বছরের ডিসেম্বরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা–সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের দুটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তত্ত্ববধায়ক ব‍্যবস্থা বাতিলের আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তি পৃথক রিভিউ আবেদন করেছেন। আবেদনগুলো শুনানির অপেক্ষায় আছে।

তবে সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম পর্বের আলোচনায় সবগুলো দল একমত হয়েছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকা উচিত। কিন্তু একটি–দুটি বাদে অন্য দলগুলো কমিশনের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা উপস্থাপন করেনি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, বা কীভাবে হবেন, সেটা নির্ধারণ করা জরুরি। প্রধান উপদেষ্টাই উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যদের মনোনীত করবেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। প্রধান উপদেষ্টাসহ সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্য নিয়ে কাজ করবে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবে নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা—এই তিন অঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)।

তবে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এনসিসি গঠনের প্রস্তাব থেকে সরে আসে কমিশন। এর বদলে তারা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব আসে। এনসিসি না থাকায় সংবিধান সংস্কার কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে রূপরেখা প্রস্তাব করেছিল, তা আর আলোচনায় রাখা হয়নি।

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী মাধ্যমে যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল, সেই রূপরেখা গতকালের আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়। তবে এটি কমিশনের প্রস্তাব ছিল না। এ ছাড়াও প্রথম পর্বে আলোচনার মাধ্যমে আসা একটি এবং নাগরিক সমাজের একটি প্রস্তাব আলোচনার জন্য তোলা হয়। আলোচনায় আরও কিছু বিষয় ওঠে আসে।

সংবিধানে যা ছিল

ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৮(গ) ধারায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এই সরকার হবে। উপদেষ্টা থাকবেন সর্বোচ্চ ১০ জন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্য উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেবেন।

প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, তা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেওয়া ছিল। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন প্রধান উপদেষ্টা। যদি এটি না হয় তাহলে তাঁর আগে অবসরে যাওয়া সর্বশেষ প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। যদি কোনো অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি পাওয়া না যায় বা দায়িত্ব নিতে রাজি না হন, তাহলে আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হবেন প্রধান উপদেষ্টা। এটিও না হলে তার আগে অবসরে যাওয়া বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করা হবে। যদি আপিল বিভাগের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকেও পাওয়া না যায় তাহলে রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একজন যোগ্য নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। এটাও সম্ভব না হলে রাষ্ট্রপতি নিজে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এই বিধানটি উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, হুবহু আগের বিধান ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। বিএনপি, এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি দল বিচার বিভাগকে এই প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার পক্ষে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ দল কোনো পর্যায়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়ার বিপক্ষে। তবে বিএনপি মনে করে, সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতির বিষয়টি বিবেচনা করা যায়। কারণ, আগামীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে গোপন ব্যালটে, এ বিষয়ে অনেকটা ঐকমত্য হয়েছে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ২০ সদস্যের একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিল। তারা সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশ গৃহীত না হলে রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রণয়নের সুপারিশ করেছিল। তাদের এই প্রস্তাব নিয়ে এখন পর্যন্ত সেভাবে আলোচনা হয়নি।

এনসিপির প্রস্তাব

গত ২৫ মে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঐকমত্য কমিশনের কাছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেছিল। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, আইনসভার নিম্নকক্ষ তথা সংসদ ভেঙে দেওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে ১১ সদস্যের একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সর্বদলীয় কমিটিতে সংসদীয় দলগুলোর সদস্যসংখ্যা নির্ধারিত হবে। সংসদীয় কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যেকোনো দলকে ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোটের অধিকারী হতে হবে।

আইনসভার যেকোনো কক্ষের (উচ্চকক্ষ বা নিম্নকক্ষ) সদস্য এই কমিটির সদস্য হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল ও অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী/তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনজন করে মোট ৯ জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে। কোন দল কোন কোন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে, জনগণের কাছে তা খোলাসা করতে হবে।

প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একটি নাম চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। কমিটি ৮-৩ ভোটে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একজন ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত করবে।

এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা না গেলে উচ্চকক্ষ ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।

ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় এনসিপির এই প্রস্তাবও আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেছে কমিশন। কোনো কোনো দল এনসিপির এই প্রস্তাবকে মোটামুটি সমর্থন করছে। যেমন বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন গতকালের আলোচনায় বলেছেন, এনসিপির প্রস্তাবের কাছাকাছি যাওয়া যায়।

আরও যা আছে আলোচনায়

ঐকমত্য কমিশনের গতকালের আলোচনায় আরও কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে। কেউ কেউ বলেছেন, আগে সংবিধানে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের যেসব বিকল্প ছিল তার একটি ছিল, রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একজন যোগ্য নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা যেতে পারে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি করা যেতে পারে, এর সভাপতি হবেন সংসদের স্পিকার। এই কমিটি আলোচনা করে প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন তা ঠিক করবে।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম পর্বের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। গত ১৮ মে দলের নায়েবে আমি সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছিলেন। তাদের প্রথম প্রস্তাব ছিল, সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন প্রধান উপদেষ্টা। আর দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, তা ঠিক করতে একটি অনুসন্ধান কমিটি করা। প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতি হবেন এই অনুসন্ধান কমিটির সদস্য। তারা প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবে। অবশ্য ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী তাদের এই প্রস্তাব সামনে আনেনি।

এ ছাড়া নাগরিক কোয়ালিশন নামে একটি নাগরিক প্লাটফর্মও ঐকমত্য কমিশনের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা দিয়েছিল। এটি কমিশন গতকালের আলোচনায় উপস্থাপন করে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংসদ বিলুপ্তির দুই মাস আগে ১০ সদস্যের সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে। যেখানে সরকারি দল থেকে ছয়জন এবং বিরোধী দল থেকে পাঁচজন সদস্য থাকবে। সরকারি ও বিরোধী দল প্রত্যেকে তিনজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটির অন্তত ৮ সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন হবে। যদি কমিটি একমত হতে ব্যর্থ হয়, তবে ছয়জন মনোনীত ব্যক্তির মধ্যে থেকে উচ্চকক্ষ ‘‌র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতিতে একজনকে নির্বাচন করবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আরও আলোচনা করবে ঐকমত্য কমিশন। গতকালের আলোচনা শেষে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিন্ন মত পোষণ করে। তিনি বলেন, কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কাছাকাছি এসেছে।

আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব দল একমত: অধ্যাপক আলী রীয়াজ১৭ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়ক সরকারে একমত, রূপরেখা নিয়ে মতভিন্নতা ১৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চনক ল ন অবসরপ র প ত র প রস ত ব র ষ ট রপত ক সরক র র ন য় গ কর প রথম প এনস প র ব যবস থ সদস য র কম ট র হয় ছ ল ক ত কর র পর খ র শ কর কর ছ ল র একট ইসল ম রপত ক করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা

সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”

“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”

“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি। 

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”

এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”

‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল
  • অধ্যাপক আলী রীয়াজের নতুন বই প্রকাশিত
  • সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক, কতটা যৌক্তিক