রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ৪৪তম ব্যাচে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী।

সোমবার (৩০ জুন) রাত সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ওয়েবসাইটে ৪৪তম বিসিএসের প্রকাশিত ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সুপারিশ প্রাপ্তদের মধ্যে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিভাগের মেহেদী হাসান (পঞ্চম), জহির রায়হান, অ্যাপ্লাইড ক্যামিস্ট্রি ও ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গোলাম কিবরিয়া আকাশ, আইসিই বিভাগের শামিমা আক্তার, ইংরেজি বিভাগের রিজওয়ানা শতভী, মার্কেটিং বিভাগের আরিফ ইশতিয়াক, ইইই বিভাগের রিয়াদ খান এবং এসিসিই বিভাগের আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আরো পড়ুন:

বাঁচতে চান তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী শ্রাবণী 

রাবি ফোকলোর বিভাগ সংস্কারের দাবিতে ফের বিক্ষোভ

পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন ফার্মেসি বিভাগের মুজাহিদুল ইসলাম (দশম), প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগের তানভীর আনজুম (১৮তম) ও ইইই বিভাগের রাকিব রবিন। পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন ইংরেজি বিভাগের এসএম সোহেল রানা (চতুর্থ)।

এছাড়াও কারিগরি শিক্ষা ক্যাডার হয়েছেন ম্যানেজম্যন্ট স্টাডিজ বিভাগের নাজমুল জাহিদ ও এনামুল হক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যাবস্থাপনা বিভাগের তমা রায়, ইংরেজি বিভাগের ইসলাম শশী ও শাহাদাত হেসেন শিমুল।

শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন ইতিহাস বিভাগের আব্দুল হাকিম পাটোয়ারী (প্রথম), বাদশা রায়হান ও রফিকুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের শাহাদুজ্জামান শিশির (দ্বিতীয়), জাহাঙ্গীর আলম নিশান, সাইফুল আল আমান, রাসেল আহমেদ, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যাবস্থাপনা বিভাগের নাজমুল হাসান শাওন, বাংলা বিভাগের রাফিউল আলম, খালেদা ফেরদৌস লিমু, ইংরেজি বিভাগের ফুয়াদ হাসান শিশির, ইনজামুল হক মিল্লাত, আব্দুর রশীদ, গণিত বিভাগের সোহান আলী, শাহজাদা আল মামুন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের আক্তারুজ্জামান সুজন, আক্তারুজ্জামান রনি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের হাবিব উল্লাহ, আল আমিন হোসাইন, ইমরান শেখ, ফলিত গণিত বিভাগের রাকিবুল হাসান,নাজমুল হাসান এবং প্রণিবিদ্যা বিভাগের রাজিয়া সুলতানা ইভা।

লাইভস্টক ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিভাগের শুভ কুমার (তৃতীয়), সেলিম হোসেন, জুপি সরকার, ফাতেমাতুল জান্নাত, গোলাম সরওয়ার সজল, মাহাবুবুর রহমান, মো.

শেখ সাদি, আল মামুন জুয়েল, ফয়সাল ইসলাম, পারভেজ হোসেন। টানা দুইবার লাইভস্টক ক্যাডার হয়েছেন একই বিভাগের মোহাম্মদ রুবেল।

এছাড়াও আনসার ক্যাডার হয়েছেন ইংরেজি বিভাগের শাহারিয়ার রনি, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের পারভেজ মিয়াজি। খাদ্য ক্যাডার হয়েছেন বায়ো-কেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়েলজি বিভাগের মাহমুদুল হাসান।

পররাষ্ট্র ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাই অনেক খুশি। বাবা-মা অনেক খুশি। আমার স্ত্রীও অনেক খুশি। সবার থেকে ভালো রেসপন্স পাচ্ছি।”

নিয়োগপ্রাপ্ত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৪তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত সব শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তোমাদের এই গৌরবময় সাফল্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।”

তিনি আরো লেখেন, “এই অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক গৌরবকে আরো সমুন্নত করেছে। আশা করি, এই সফলতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এবং আগামীর চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব স এস ৪৪তম ব ব স এস ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সব বাধা পেরোনো উল্লাস

জন্ম থেকেই দুই হাত ও দুই পা বাঁকা। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারতেন না। শৈশবে স্কুলে যেতেন বাবার কোলে চড়ে। সহপাঠীরা মাঠে খেলতেন, তিনি পাশে দাঁড়িয়ে দেখতেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যেন বারবার পথরোধ করেছে তাঁর। তবু দমে যাননি উল্লাস পাল। অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নকে সঙ্গী করে অবশেষে ছুঁয়ে ফেলেছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য, ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন এই জীবনযোদ্ধা। এর আগে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
উল্লাস পালের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের কার্তিকপুর গ্রামে। মৃৎশিল্পী উত্তম কুমার পাল ও আন্না রানী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। 
জন্মগ্রহণের পর দুই পায়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শেখা হয়নি। দুই হাত দিয়েও স্বাভাবিক কাজ করতে পারতেন না। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেন উল্লাস। ভারতে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পর ডান পায়ের কিছুটা উন্নতি হয়। তাহলেও স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেননি কখনোই।
উল্লাসের প্রাথমিক শিক্ষার শুরু ১৯৯৯ সালে, কার্তিকপুর পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাবা প্রতিদিন তাঁকে কোলে করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। লেখার কাজ করতেন বাম হাতে। এসএসসি পাস করেন ২০১০ সালে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে, পান জিপিএ ৫। এরপর যান ঢাকায়। ইচ্ছা ছিল ঢাকা কলেজে পড়ার। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে সুযোগ পাননি। ঢাকা নর্দান কলেজ থেকে ২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে বিবিএ এবং পরে এমবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর ৪০তম ও ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন। ৪০তম বিসিএসে পাস করলেও কোনো পদে সুপারিশ পাননি। তবে ৪১তম বিসিএসে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নড়িয়া সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। লক্ষ্য ছিল প্রশাসন ক্যাডার।  ৪৪তম বিসিএসে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।
উল্লাস পাল বলেন, ‘আমি রেজাল্ট দেওয়ার কথা শুনে প্রশাসন ক্যাডারে আমার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার মিলাচ্ছিলাম। যখনই আমার নম্বরটি মিলে যায়, আনন্দে চোখ দিয়ে জল বের হয়ে যায়। আমার পরিবারের সবাই দারুণ খুশি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় সমাজের অনেকেই ঠাট্টা-মশকরা করেছে। আবার অনেকেই প্রচণ্ড ভালোবেসেছে। আমি কখনও দমে যাইনি। লক্ষ্য স্থির রেখে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।’
যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, সমাজ চাইলেই তাদের জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন উল্লাস। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, যারা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে, সমাজের কেউ যেন তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব না দেখায়।’
উল্লাসের মা আন্না রানী পাল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই উল্লাস অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। সে পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল। সবাই ওকে নিয়ে গর্বিত।’
ছেলেকে বড় করে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি জানিয়ে উত্তম কুমার পাল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই উল্লাসকে বিশেষভাবে যত্ন করে বড় করেছি। লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহের জন্য আজ সে এই সাফল্য অর্জন করেছে।’
উল্লাসের মেধাবী। তাঁর মতো সৎ, আত্মমর্যাদাশীল ছেলে সত্যিই কম দেখেছেন মন্তব্য করে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি চাই, ও (উল্লাস) ওর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আরও এগিয়ে যাক।’
উল্লাস পালের বন্ধু অসীম পাল। একসঙ্গে স্কুলে যেতেন। বললেন, উল্লাসের চলাফেরায় যে প্রতিবন্ধিতা ছিল, সেটি কখনোই তার মনের জোরকে দুর্বল করতে পারেনি। ক্লাসে সবসময় সবার আগে থাকত। কেউ একটি বিষয় এক ঘণ্টা পড়লে উল্লাস সেটি তিন ঘণ্টা পড়ত। 
অসীম বলেন, ‘আমি কাছ থেকে দেখেছি, ওর (উল্লাস) জেদ, স্বপ্ন, আর লড়াই। আমি গর্ব করে বলি, উল্লাস শুধু আমার বন্ধু না, ও আমাদের সময়ের এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত পাবনার আশিক-গৌরব-ধ্রুব
  • সাইকেল মেকানিকের ছেলে আশিক এখন বিসিএস ক্যাডার
  • সব বাধা পেরোনো উল্লাস
  • শিক্ষাজীবনে কোটা নেননি শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস, বিসিএসে পেলেন প্রশাসন ক্যাডার
  • ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ, ক্যাডার হলেন ১৬৯০ জন
  • ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার হলেন ১৬৯০ জন
  • ৪৪তম বিসিএসে ১৬৯০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ করল পিএসসি