গত ২৭ এপ্রিলের সকালটা ছিল সত্যিই অসাধারণ। টেকনাফের শামলাপুর এলাকায় শতাধিক কাছিমের বাচ্চাকে দেখলাম সাগরে ফিরে যেতে। বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন জলপাইরঙা কাছিমের বাচ্চাগুলোকে নিজ হাতে ছেড়ে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম। গত চার মাসে এ সংখ্যা এখন ১০ হাজার। ভাবতেই অবাক লাগছে, একটি ছোট্ট উদ্যোগ থেকে এ বছর ১০ হাজার ৫৩টি কাছিম সমুদ্রে ফিরে গেছে। আমার কাছে এ বছর সবচেয়ে সেরা খবর এটিই। বাচ্চাগুলো সমুদ্রে ফিরে গিয়ে কী অবস্থায় আছে, তা আমাদের জানা নেই। তবে এরা যে ডিম থেকে ফুটে বাচ্চা হয়ে নিজ বিচরণস্থলে ফিরতে পেরেছে, এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!

প্রতিবছর আমাদের সৈকতগুলোতে শীতকালে শত শত মা কাছিম আসে ডিম পাড়তে। শত কিলোমিটার সৈকত এলাকায় তারা দিনের পর দিন অপেক্ষা করে ডিম পাড়ার জন্য। সৈকতের বালুচরে যখন তারা নিরাপদ মনে করে, তখনই ডিম পাড়ে। আমাদের সৈকতগুলো তাদের জন্য এখন মোটেও নিরাপদ জায়গা নেই। পুরো অঞ্চলেই মানুষের পদচারণ, কুকুরের অত্যাচার, জেলেদের মাছ ধরার জাল আর হোটেলের ঝলমলে আলো। সব মিলিয়ে তাদের ডিম পাড়ার জায়গা নেই বললেই চলে। আর কাছিমগুলো ডিমগুলো পাড়তে পারলেও বেশির ভাগ সময় ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ রকম বাস্তবতায় টেকনাফের শামলাপুর সৈকত এলাকায় বেসরকারি সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) প্রায় ৪০ কিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে কাছিমের ৫টি হ্যাচারি করেছে। মূলত তারা কাছিমের ডিমগুলো থেকে নিরাপদে যেন বাচ্চা পাওয়া যায়, তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বছর এ কাজে সহযোগিতার জন্য আইইউসিএন ও জিআইজেড এগিয়ে এসেছে।

গত শীত মৌসুমে পুরো এলাকায় পাওয়া গেছে ১২৯টি মা কাছিমের বাসা। সেখান থেকে কোডেকের কর্মীরা সংগ্রহ করেছেন ১৪ হাজার ৭২২টি ডিম। ডিমগুলো সংগ্রহের পর প্রাকৃতিকভাবেই ডিমগুলো বালুর ভেতর পুঁতে রাখা হয়। প্রতিটি কাছিমের বাসা থেকে আনা ডিমগুলো আলাদা করে রাখা হয়, যাতে ডিমগুলো থেকে বেশি বাচ্চা পাওয়া যায়। এ বছর সব মিলিয়ে বাচ্চা পাওয়া গেল ১০ হাজার ৫৩টি। বাচ্চা ফোটার হার প্রায় ৬৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সব বাচ্চাই নিরাপদে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সাগরে বাচ্চা ছেড়ে দেওয়ার পর বাচ্চাগুলো কোথায় যায়? গবেষণা বলছে, এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর প্রথম সাত দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় বাচ্চারা তেমন কিছু খায় না। সাঁতার কাটা শেখে। কাছিমের বাচ্চার নিজস্ব একটা বৈশিষ্ট্য আছে। ফোটার পরপরই এরা সাগরে ফিরে যেতে চায়। ভাটার সময় এদের ছাড়লে আরও ভালো। এ সময় এরা একটানা সাঁতার কাটে। এক ইঞ্চি আকারের এই বাচ্চারা মূলত খুঁজতে থাকে তাদের নিজস্ব বিচরণভূমি। এই এলাকাটি গভীর সমুদ্র, যেখানে প্লাঙ্কটনসহ তাদের খাবার আছে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে এই পথটুকুন যেতে বেশির ভাগ কাছিমের বাচ্চারই মৃত্যু হয়। বেঁচে থাকে শতকরা দেড় ভাগ। এই কাছিমগুলো বড়। বিচরণ করে সমুদ্রজুড়ে। তারপর প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী কাছিমরা আবার ফিরে আসে একই জায়গায়। যেখান থেকে তার জন্ম হয়েছিল। এটি কাছিমের জীবনের গল্প।

বাচ্চা কাছিম কোথায় যায়, তা আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই। তবে মা কাছিম ডিম পেড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে—এ খবর আমরা জানি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি আমরা টেকনাফের শামলাপুর সৈকত থেকে ৪টি কাছিমের শরীরে স্যাটেলাইট যন্ত্র বসিয়ে দিই। মূলত মা কাছিমগুলো ডিম পেড়ে কোথায় যাচ্ছে, তার গতিবিধি দেখাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। এর মধ্যে একটি কাছিম ১৪৪ দিনে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে শ্রীলঙ্কার উত্তর-পূর্ব উপকূলের মুল্লাইথিভু জেলায় পৌঁছেছে। এরা আমাদের সমুদ্র এলাকা ছেড়ে এখন ভারত মহাসাগরে রয়েছে। অন্য তিনটি কাছিমও কমবেশি দুই কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করেছে। পরের শীতে তারা ডিম পাড়তে নিশ্চয় আবার ফিরে আসবে আমাদের সৈকতে।

একটি মা কাছিমের শরীরে তার গতিবিধি দেখার জন্য স্যাটেলাইট যন্ত্র বসিয়ে দিয়েছেন গবেষকেরা। কাছিমটি প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে ভারত মহাসাগরের শ্রীলঙ্কার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থান করছে।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১০ হ জ র আম দ র স র স কত র জন য ন র পদ এল ক য় এ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে তৈরি হচ্ছে রাজকীয় চেয়ার

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেওয়ার জন্য কক্সবাজারের উখিয়ায় তৈরি হচ্ছে সেগুন কাঠের ৭ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার একটি রাজকীয় চেয়ার। পুরো চেয়ারে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ। এই চেয়ারের সঙ্গে আরো তিনটি চেয়ার তৈরি হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ তিন নেতা তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সালাহউদ্দিন আহমদের জন্য।

চেয়ারগুলো তৈরি করাচ্ছেন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী বাজারের বাসিন্দা ও স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ভালোবাসা থেকেই তার এ উদ্যোগ। 

জয়নাল আবেদীন বলেন, “২০১৭ সালে খালেদা জিয়া যখন রোহিঙ্গাদের দেখতে উখিয়ায় আসেন, তখন কাছ থেকে তাকে দেখার সুযোগ পাই। তখনই সিদ্ধান্ত নেই, তাকে একটি চেয়ার উপহার দেব। পরে আরো তিন নেতাকে চেয়ার উপহার দেওয়ার চিন্তা করি।”

আরো পড়ুন:

দুই বছর ধরে নেতৃত্বহীন বরগুনা জেলা বিএনপি

বিএনপির সঙ্গে কোনো দলের দ্বন্দ্ব নেই: ফকির মাহবুব 

চেয়ারগুলোর কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে উচ্চমানের সেগুন কাঠ দিয়ে। বড় চেয়ারে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ টাকা, বাকি তিনটির প্রতিটিতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাঠ ও খোদাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। রঙের কাজ শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। চেয়ার তৈরিতে সাতজন কারিগর কাজ করেছেন, যাদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে কারুকাজের জন্য।

চেয়ারগুলো আগামী আগস্ট মাসে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠানো হবে বলে জানান জয়নাল। তবে খালেদা জিয়া উপহার গ্রহণ না করলে তিনি চেয়ারের গায়ে হাত দেবেন না, নিজের বাসায় তা সংরক্ষণ করবেন বলেও জানান তিনি।

উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, “জয়নাল আবেদীন দলের একজন ত্যাগী নেতা। আওয়ামী লীগের আমলে ১২টি মামলায় কারাভোগ করেছেন। ভালোবাসা থেকেই তিনি চেয়ারগুলো তৈরি করছেন।”

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ