৩ দিন পর অর্ধগলিত লাশ ফেরত দিল বিএসএফ
Published: 6th, July 2025 GMT
নওগাঁর পোরশা সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি রাখাল ইব্রাহিমের (৪০) অর্ধগলিত মরদেহ মৃত্যুর তিনদিন পর ফেরত দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শনিবার রাত ৯টায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি হস্তান্তর করা হয়।
নিহত ইব্রাহিম নওগাঁর সাপাহার উপজেলার রোদগ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে। সীমান্তে অবৈধভাবে পশু আনার অভিযোগে ভারতের অভ্যন্তরে তাকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত বুধবার (২ জুলাই) দিবাগত রাতে ইব্রাহিম মহিষ আনার উদ্দেশ্যে পোরশা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আগ্রাবাদ এলাকায় প্রবেশ করেন। ভোরের দিকে তিনি একজোড়া মহিষ নিয়ে ফিরে আসার সময় ভারতের আগ্রাবাদ বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনাস্থলটি ২২৮ নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে প্রায় ৫০০ গজ ভারতের ভেতরে অবস্থিত। ঘটনার পরপরই বিএসএফ লাশ উদ্ধার করলেও প্রথমে গুলির বিষয়টি এবং লাশ উদ্ধারের সত্যতা অস্বীকার করে। বিজিবির বারবার যোগাযোগের পরও তারা দীর্ঘসময় নিরব থাকে।
১৬ বিজিবির সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে একাধিক দফা চিঠি চালাচালি হয়। দুই দিন পর বিএসএফ অবশেষে ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। জানায়, তারা জঙ্গলের মধ্যে লাশটি পেয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে ১৬ বিজিবি ও ৮৮ বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও এবারের ঘটনাটি যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যা করার পর তিন দিন পর্যন্ত লাশ আটকে রেখে বিএসএফ যে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে, তা সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। অর্ধগলিত মরদেহ ফেরত পাওয়ার পর পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
১৬ বিজিবির নিতপুর ক্যাম্প ইনচার্জ সুবেদার মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘটনার পর প্রথমে বিএসএফ গুলি চালনার ঘটনা অস্বীকার করে। পরে আমাদের বারবার যোগাযোগ ও চিঠিপত্র পাঠানোর পর তারা ঘটনার সত্যতা মেনে নেয় এবং একদিন পর লাশ উদ্ধারের কথা জানায়।
সাপাহার থানার ওসি আব্দুল আজিজ বলেন, ঘটনাস্থল যেহেতু ভারতের অভ্যন্তরে, তাই ময়নাতদন্তের কাজ সেখানে সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তীতে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।
স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশি একজন রাখালকে বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা করা হলো, অথচ আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রথমে চুপ ছিল। তিনদিন পর অর্ধগলিত লাশ পেলাম।
বিএসএফ কর্তৃক বারবার বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হচ্ছে। এমন ঘটনা আর যেন না ঘটে, তার জন্য শুধু প্রতিবাদ নয় প্রয়োজন কূটনৈতিক ও মানবাধিকারের জোরালো পদক্ষেপ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নওগ মরদ হ ১৬ ব জ ব ব এসএফ দ ন পর ব রব র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী
অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়। ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়।
আরো পড়ুন:
কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির
অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প
বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।
বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ