নওগাঁর পোরশা সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি রাখাল ইব্রাহিমের (৪০) অর্ধগলিত মরদেহ মৃত্যুর তিনদিন পর ফেরত দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শনিবার রাত ৯টায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি হস্তান্তর করা হয়।

নিহত ইব্রাহিম নওগাঁর সাপাহার উপজেলার রোদগ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে। সীমান্তে অবৈধভাবে পশু আনার অভিযোগে ভারতের অভ্যন্তরে তাকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত বুধবার (২ জুলাই) দিবাগত রাতে ইব্রাহিম মহিষ আনার উদ্দেশ্যে পোরশা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আগ্রাবাদ এলাকায় প্রবেশ করেন। ভোরের দিকে তিনি একজোড়া মহিষ নিয়ে ফিরে আসার সময় ভারতের আগ্রাবাদ বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থলটি ২২৮ নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে প্রায় ৫০০ গজ ভারতের ভেতরে অবস্থিত। ঘটনার পরপরই বিএসএফ লাশ উদ্ধার করলেও প্রথমে গুলির বিষয়টি এবং লাশ উদ্ধারের সত্যতা অস্বীকার করে। বিজিবির বারবার যোগাযোগের পরও তারা দীর্ঘসময় নিরব থাকে।

১৬ বিজিবির সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে একাধিক দফা চিঠি চালাচালি হয়। দুই দিন পর বিএসএফ অবশেষে ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। জানায়, তারা জঙ্গলের মধ্যে লাশটি পেয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে ১৬ বিজিবি ও ৮৮ বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

সীমান্ত হত্যা নিয়ে বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও এবারের ঘটনাটি যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যা করার পর তিন দিন পর্যন্ত লাশ আটকে রেখে বিএসএফ যে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে, তা সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। অর্ধগলিত মরদেহ ফেরত পাওয়ার পর পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

১৬ বিজিবির নিতপুর ক্যাম্প ইনচার্জ সুবেদার মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘটনার পর প্রথমে বিএসএফ গুলি চালনার ঘটনা অস্বীকার করে। পরে আমাদের বারবার যোগাযোগ ও চিঠিপত্র পাঠানোর পর তারা ঘটনার সত্যতা মেনে নেয় এবং একদিন পর লাশ উদ্ধারের কথা জানায়।

সাপাহার থানার ওসি আব্দুল আজিজ বলেন, ঘটনাস্থল যেহেতু ভারতের অভ্যন্তরে, তাই ময়নাতদন্তের কাজ সেখানে সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তীতে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।

স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশি একজন রাখালকে বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা করা হলো, অথচ আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রথমে চুপ ছিল। তিনদিন পর অর্ধগলিত লাশ পেলাম।

বিএসএফ কর্তৃক বারবার বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হচ্ছে। এমন ঘটনা আর যেন না ঘটে, তার জন্য শুধু প্রতিবাদ নয় প্রয়োজন কূটনৈতিক ও মানবাধিকারের জোরালো পদক্ষেপ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নওগ মরদ হ ১৬ ব জ ব ব এসএফ দ ন পর ব রব র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গয়েশপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে। এরপর তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে। 

ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরে যাননি মাসুদ। তিনি অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কাটাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার বেশ কিছু কর্মকান্ডে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরই মাসুদকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। যেহেতু তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই পুলিশ তাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। 

বিষয়টি সামনে আসার পরই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের পক্ষে কিছুই জানানো হয়নি। 

অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ভারত বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও ভোমরা ঘোজাডাঙা সীমান্তে এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরো ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক। 

পুলিশ ও বিএসএফের যৌথ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক বাংলাদেশি নাগরিককে। আটককৃতে ওই ব্যক্তির নাম পঞ্চানন পাল। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা থানার বাসিন্দা। ভারতে তিনি পরিচয় বদল করে রূপায়ণ পাল নামে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও এমনকি ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। 

একইদিনে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তের কাছে সরুপনগর এলাকার তারালি সীমান্ত থেকে বিএসএফের ১৪৩নম্বর ব্যাটালিয়নের হাতে আটক হয়েছেন আরো বাংলাদেশি নাগরিক। 

সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে আটকের পর তাদের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু, তিনজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর সবাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং খুলনার বাগেরহাটের বাসিন্দা।

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেট সীমান্তে বাংলাদেশে ঢুকে খুঁটি উপড়ে ফেলে বিএসএফ, স্থানীয়দের প্রতিবাদ
  • পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে কর্মকর্তা নিয়োগ, বেতন ৫১,০০০ টাকা
  • জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক
  • চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ১৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল বিএসএফ