চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজনকে নিয়ম ভঙ্গ করে উপসহকারী প্রকৌশলী, কর আদায়কারী, সড়ক তদারককারী, অনুমতিপত্র পরিদর্শক, হিসাব সহকারী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সত্যতা পেয়েছে দুদক। আজ সোমবার বিকেলে চসিক কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১–এর একটি দল।

এতে নেতৃত্ব দেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর সহকারী পরিচালক মো.

এমরান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের অবৈধভাবে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়োগ ও পদোন্নতিসংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

এর আগে গত ৪ জুলাই প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘শ্রমিক থেকে “এক লাফে” প্রকৌশলী, কর আদায়কারী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দুই বছরে, যখন মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী; মূলত তখনই পদোন্নতি নিয়ে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব নেন এবং গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পতন হলে ১৯ আগস্ট তাঁকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁর শেষ দুই বছরে নিয়োগ পাওয়া ১৮৮ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে চসিক। সেই তালিকায় দেখা গেছে, শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েই এক লাফে উচ্চ গ্রেডের পদে পদায়ন করা হয়েছে অন্তত ৬৪ জনকে। চসিকের জনবলকাঠামো অনুযায়ী, শ্রমিক পদ ২০তম গ্রেডের। কিন্তু সেখান থেকে ১০ম গ্রেডের উপসহকারী প্রকৌশলী, ১৬তম গ্রেডের কর আদায়কারী বা অনুমতিপত্র পরিদর্শক পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ ধরনের পদোন্নতিতে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

চসিকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তখনকার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কিছু কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতাদের সুপারিশেই এসব নিয়োগ হয়েছিল। ঘনিষ্ঠদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাঁদের পদায়ন করা হয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। নিয়োগ ও পদোন্নতির এই প্রক্রিয়ায় কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। নেওয়া হয়নি লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা।

শ্রমিক থেকে ‘প্রকৌশলী’

মো. রোকনুজ্জামান শ্রমিক পদে যোগদান করেছিলেন ২০২৩ সালের ১৮ জুন। যোগদানের দিনেই তাঁকে সাগরিকা টেস্টিং ল্যাবের ল্যাব ইনচার্জ (উপসহকারী প্রকৌশলী) হিসেবে পদায়ন করা হয়। রোকনুজ্জামান পুরকৌশলে ডিপ্লোমা করেছেন। পরে একই বিষয়ে স্নাতক করেন।

রশিদ আহমেদ নামের আরেকজন নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। যোগদানের ১৯ দিনের মাথায় তাঁকে বিদ্যুৎ শাখায় উপসহকারী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। তিনি ডিপ্লোমা করেছেন।

এইচএসসি পাস করা জাহেদুল আহসান গত বছরের ৩১ জানুয়ারি শ্রমিক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার ১৭ দিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে উপসহকারী প্রকৌশলী করা হয়। নিয়োগের ১৪ দিনের মাথায় শ্রমিক থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী হয়েছেন এস এম রাফিউল হক মনিরীও।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্মচারী বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে দুভাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। একটি হচ্ছে সরাসরি ও অন্যটি পদোন্নতির মাধ্যমে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৮০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। পদোন্নতির পেতে প্রার্থীকে সড়ক তদারককারী বা বাতি পর্যবেক্ষক পদে ১২ বছর চাকরি করতে হবে। কিন্তু এই চারজনের ক্ষেত্রে এগুলোর কোনোটিই মানা হয়নি বলে জানান সিটি করপোরেশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদক যেসব নথিপত্র চেয়েছে, আমরা সেসব সরবরাহ করেছি। আরও কিছু নথিপত্র আগামীকাল দেব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপসহক র প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সম্মত ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা করতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত জানানোর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি প্রতিনিধিদলকে কাতারে পাঠাচ্ছেন।

গাজা থেকে এএফপি জানিয়েছে, এই দল যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে রোববার রওনা দিবে। তবে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির খসড়া নিয়ে হামাস যে সংশোধনী দিয়েছে, তা ইসরায়েলের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’।

আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রায় ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ থামাতে নতুন করে চেষ্টা শুরু করেছেন।

এদিকে এমন প্রচেষ্টা চলার সময়ে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার ইসরাইলি হামলায় সেখানে অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন।

হামাস শুক্রবার জানিয়েছিল, তারা ‘অবিলম্বে ও আন্তরিকভাবে’ আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত এবং প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তাদের জবাব পাঠানো হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হামাস কাতারি প্রস্তাবে যে পরিবর্তন চাচ্ছে, তা গতরাতে আমাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব পরিবর্তন ইসরায়েলের কাছে মেনে নেওয়ার মতো নয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রস্তাবিত আলোচনায় অংশ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে কাতারি প্রস্তাবের ভিত্তিতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে সংলাপ চালিয়ে যেতে বলেছেন, যেটিতে ইসরায়েল ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে।’

হামাস এখনো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে তাদের জবাব প্রকাশ্যে জানায়নি। তবে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবটি হামাসের কাছে পৌঁছেছে।

আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনি দু’টি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এ সময় হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মি মুক্তি দেবে এবং কয়েকটি মৃতদেহ ফেরত পাঠাবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কাছে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে।

তবে তারা জানিয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকে আরও কিছু শর্ত তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের রূপরেখা, আলোচনার সময় পুনরায় যুদ্ধ শুরু না হওয়ার নিশ্চয়তা ও জাতিসংঘের নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি।

হামাস ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এরপরই ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করতে এবং  সব জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে।

এর আগে কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দফা সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। তখন ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত আনা হয়েছিল।

২০২৩ সালের হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল। এদের মধ্যে এখনো ৪৯ জন গাজায় রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, এদের মধ্যে ২৭ জন মারা গেছেন।

মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক বদর আবদেল আতি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় প্রধান প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। 

আলোচনায় সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং ‘চুক্তিতে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে নতুন করে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। মূল কারণ হলো, হামাস চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। তবে তা মানতে নারাজ ইসরায়েল। এই যুদ্ধ গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা কারিমা আল-রাস বলেছেন, ‘হামাস ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে শুনে মানুষ খুশি। আমরা আশা করছি, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসবে এবং ত্রাণ ঢুকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ ময়দার (খাবার) অভাবে মারা যাচ্ছে; আর যুবকরা নিজেদের সন্তানদের জন্য ময়দা জোগাড় করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে।’

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, শনিবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ৪২ জন নিহত হয়েছেন।

গাজায় গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও অনেক এলাকায় প্রবেশে বাধার কারণে বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার দেওয়া নিহতের সংখ্যা ও বিস্তারিত তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি এএফপি।

এএফপি’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নির্দিষ্ট স্থানের তথ্য ছাড়া তারা হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবে না।

ইসরায়েলের সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ নাগরিক।

এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৩৮৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি হলেন আলমগীর হোসেন
  • ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে, এটা কি গাজায় যুদ্ধ থামাতে পারবে
  • ইয়েমেনের ৩ বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • দ্বন্দ্বের অবসান, শুটিংয়ে গড়াচ্ছে শুভ-সোহিনীর ‘লহু’
  • ২৬ মাসে কাটা হয়েছে ১৩ লাখ গাছ, সবচে বেশি কোথায়, ঢাকায় কত
  • গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাজি ইসরায়েল
  • গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সম্মত ইসরায়েল
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ১৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত