পর্যায়ক্রমে উপজেলায় আদালত সম্প্রসারণে একমত দলগুলো
Published: 8th, July 2025 GMT
অধস্তন আদালত পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করার বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এ ক্ষেত্রে ছয়টি বিষয় বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়। এ ছাড়া জরুরি অবস্থা জারির বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক স্বার্থে এই বিধান ব্যবহার না করার বিষয়েও মতৈক্য হয়েছে। তবে এ–সংক্রান্ত নতুন বিধানে কী কী থাকবে, তা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল দিনব্যাপী এ দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়। গতকাল ছিল দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার দশম দিন। এদিন ৩০টি দল আলোচনায় অংশ নেয়।
কিছু প্রেক্ষাপট বিবেচনা ও নিশ্চিত করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত স্থায়ী আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিল বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এর আগে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা, দ্বীপ এলাকা ও চৌকি এলাকা বিবেচনায় কিছু উপজেলায় অধস্তন আদালত স্থানান্তর করা যেতে পারে। তবে উপজেলা পর্যায়ে অবকাঠামো নেই, কারাগার নেই।
বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টে বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে এ বিষয়ে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করা হবেআলী রীয়াজ, সহসভাপতি, ঐকমত্য কমিশনজাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন প্রস্তাব করেন, প্রতিটি উপজেলায় না হলেও সংসদীয় আসনভিত্তিক আদালত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
আলোচনায় কেউ কেউ উপজেলা পর্যায়ে আদালত নেওয়া হলে মামলা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এমন আশঙ্কার চেয়ে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, উপজেলায় আদালত স্থানান্তর হলে দুর্নীতি বাড়বে, এমন কেন ভাবা হচ্ছে। দুর্নীতি কোথায় হচ্ছে না। তিনি বলেন, সেবা সহজ করা, মামলার চাপ কমানো এবং দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ করতে হবে।
পরে উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থানান্তরের বিষয়ে ঐকমত্য হয়। আলোচনা শেষে বিকেলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, দলগুলো উপজেলা পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছে। তবে দল ও জোটগুলো এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে।
আলী রীয়াজ জানান, ছয়টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো—১.
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক কর্মকর্তার তথ্য অনুসারে, দেশের ২৩টি জেলার ৪৩টি উপজেলায় ৭১টি চৌকি আদালত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। গতকালের আলোচনায় বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগের দিন তিনি বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে স্থানান্তর করতে হবে। কিন্তু সাংবাদিকদের সামনে সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় এটি উল্লেখ করা হয়নি।
গতকালের আলোচনা শেষে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টে বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে এ বিষয়ে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
জরুরি অবস্থা জারির বিধান
বিদ্যমান সংবিধানে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এ ঘোষণার বৈধতার জন্য আগেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। ঐকমত্য কমিশন গতকালের আলোচনায় এ বিধান–সংক্রান্ত একটি নতুন প্রস্তাব হাজির করে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আগেই মন্ত্রিসভার লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। তবে বেশ কিছু মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন বা স্থগিত করা যাবে না।
সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থার মেয়াদকালে আইনের চোখে সবার সমতার বিধান লঙ্ঘন করা যাবে না; ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী–পুরুষ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো বৈষম্য করা যাবে না; ধর্ম পালন বা প্রচারের অধিকার সীমিত করা যাবে না; জীবনের অধিকার রক্ষার বাধ্যবাধকতা থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না এবং কোনো ব্যক্তিকে যথেচ্ছভাবে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না; কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন করা বা তাঁর সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি দেওয়া যাবে না; কোনো ব্যক্তির ওপর ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের সময় প্রযোজ্য অর্থদণ্ডের চেয়ে বেশি বড় ধরনের জরিমানা আরোপ করা যাবে না; চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার অধিকারের ওপর কোনো ধরনের বাধানিষেধ আরোপ করা যাবে না।
আলোচনায় প্রায় সব দল বিদ্যমান বিধান পরিবর্তনের পক্ষে মত দেয়। তবে জরুরি অবস্থা জারির পর মৌলিক অধিকার বলবৎ থাকবে কি না, জরুরি অবস্থার মেয়াদ সর্বোচ্চ কত দিন হবে, মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন হবে নাকি শুধু প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা বৈধতা পাবে—এসব প্রশ্নে মতভিন্নতা দেখা দেয়।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচবার জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। প্রতিবারই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ক্ষমতা রক্ষার জন্য। তিনি প্রস্তাব করেন, সরকারি দল ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করবেন। মৌলিক অধিকার–সংক্রান্ত বিষয়ে আরও আলোচনার দরকার আছে।
এনসিপির জাবেদ রাসিন জরুরি অবস্থা জারির বিধানকে তিন ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দেন। প্রথমত, যুদ্ধাবস্থা বা বহিঃ আক্রমণ, এটি হলে সংসদের অনুমোদন নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, মহামারি বা দুর্যোগ পরিস্থিতি, এটি হলে মন্ত্রিসভার মাধ্যমে ঘোষণা করা যায়। আর অভ্যন্তরীণ গোলযোগ—এ ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না।
এই আলোচনার শেষ পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা সহজে শেষ হবে না। জরুরি অবস্থা জারির বিধান সংশোধনের বিষয়ে সবাই একমত। কী কী সংযোজন–বিয়োজন হবে, তা পরবর্তী সংসদে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যায়।
একপর্যায়ে এনসিপির জাবেদ রাসিন বলেন, প্রায়ই পরবর্তী সংসদে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন কীভাবে, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তাহলে আলোচনা ভেঙে দেন, আমরা চলে যাই।’
আলোচনার এক পর্যায়ে সালাহউদ্দিন আহমদ কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে ছয়–সাত দিন আলোচনা হচ্ছে, আমার তো আপনাদের উদ্দেশ্য নিয়েই সন্দেহ হচ্ছে।’
আলোচনা শেষে বিকেলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা কোনো পরিস্থিতিতেই যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। বিদ্যমান সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদের (ক), (খ), (গ)–এর ক্ষেত্রে সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন করার ব্যাপারেও দলগুলো একমত। আগামী বৃহস্পতিবার আলোচনা শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ ব ভ গ য় পর য য় র প রস ত ব স থ ন ন তর র জন ত ক উপজ ল য় দ বল ন চ ত কর মন ত র র জন য হয় ছ ল গতক ল দলগ ল অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কেচ জেলার শেরবান্দি এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অভিযান চলাকালে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। একই অভিযানে ‘ভারত-সমর্থিত’ পাঁচজন সন্ত্রাসীও নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। খবর সামা টিভির।
আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানায়, শেরবান্দি এলাকায় সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধ্বংসে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছিল। এ সময় একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর গাড়ি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, এতে পাঁচজন সেনা নিহত হন।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানকে সহজেই হারিয়ে ‘সুপার ফোরে’ এক পা ভারতের
ব্যাটিং ব্যর্থতায় পাকিস্তানের মামুলি সংগ্রহ
নিহত সেনারা হলেন- ক্যাপ্টেন ওয়াকার আহমদ (লোরালাই), নায়েক আসমাতুল্লাহ (ডেরা গাজী খান), ল্যান্স নায়েক জুনায়েদ আহমদ (সুক্কুর), ল্যান্স নায়েক খান মোহাম্মদ (মারদান) এবং সিপাহী মোহাম্মদ জাহুর (সোয়াবি)।
আইএসপিআর বলেছে, পাকিস্তানের সাহসী অফিসার ও সেনাদের ত্যাগ দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূলের দৃঢ় সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়ছে। শুধু গত এক সপ্তাহেই খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন অভিযানে অন্তত ১৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে খাইবার পাখতুনখোয়ার লালকিলা মাইদান এলাকায় ‘ভারত সমর্থিত সন্ত্রাসী’দের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সাতজন সেনা সদস্য নিহত হন।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, এসব অভিযানে তারা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং অপারেশন চলমান থাকবে।
ঢাকা/ফিরোজ