সালমা হায়েক। বিশ্বখ্যাত মেক্সিকান-আমেরিকান অভিনেত্রী। এ কিংবদন্তির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনছেনে শাকিলা ইসরাত।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবার আমি এসেছিলাম ১২ বছর বয়সে, পড়ালেখার জন্য। দুই বছর পড়েছি টেক্সাসের একটি স্কুলে। তারপর ফিরে গেছি নিজের দেশে। আবারও যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছি এর ১০ বছর পর। তবে ইংরেজি ভাষার চর্চা খুব একটা করা হয়নি বলে, শুরুর দিকে চলনসই অল্প কয়েকটি শব্দভান্ডারই সম্বল ছিল আমার। আমেরিকায় থাকার মতো মোটেও পর্যাপ্ত ছিল না তা। সিনেমার সাবটাইটেল দেখে দেখে ইংরেজি শেখার একটা অভ্যাস গড়ে তুলেছিলাম। ভালোই পারি- এমন আত্মবিশ্বাস জন্মালেও, আদতে তা ছিল ফাঁপা! বিষয়টি টের পেয়ে, দেশে ফিরে গিয়ে, তিন মাসের ভাষা শিক্ষার কোর্স করলাম। আর বুঝতে পারলাম, কত কম জানি আমি! আমার উচ্চারণ ছিল যাচ্ছেতাই। মেক্সিকায় কেউই বলে না, ‘তোমার ইংরেজি উচ্চারণ খুবই ভালো’; বরং বলে, ‘হয় তুমি ইংরেজি পারো, নয়তো পারো না : যদি তুমি এ ভাষায় অন্যের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারো, তাতেই যথেষ্ট।’ কিন্তু আমার কাছে একেকটি শব্দ যথাযোগ্যভাবে উচ্চারণ করতে পারাটা জরুরি হয়ে ধরা দিলো। মেক্সিকোতে থাকাকালে যখন বলতাম, ‘আমি হলিউডে যাব’, তখন চারপাশের লোকজন নিশ্চয়ই ফিক করে হেসে ফেলত!
প্রথম অডিশন
অভিনয়ের জন্য আমি প্রথম অডিশন দিই ১৮ বছর বয়সে; মেক্সিকোতে, ‘আলাদিন’ নামের একটি শিশুতোষ নাটকের জেসমিন চরিত্রে। চরিত্রটির জন্য আমার গান গাওয়ার প্রয়োজন ছিল। অথচ আমার ছিল মারাত্মক মঞ্চভীতি। ফলে কাজটি আমি পেলাম ঠিকই, কিন্তু এর ফল হয়ে ওঠল দু:স্বপ্নের মতো। তবু অভিনয় ছেড়ে দিইনি; বরং ঠিক করলাম, মঞ্চে নয়, বরং সিনেমার পর্দায় হবো হাজির। সিনেমায় আমি সত্যিকারের প্রথম অডিশনটিও দিই মেক্সিকোতে। ১৯৯৫ সালের সিনেমা- ‘দ্য অ্যালি অব মিরাকল’। খুব একটা ভালো সিনেমা ছিল না সেটি। ইতোমধ্যে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে ভীষণ খ্যাতি হয়ে গিয়েছিল আমার। তবু, মেক্সিকোতে বলার মতো কোনো ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি তখন না থাকায়, যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।
এক ধরনের অপরাধবোধ
আমার ভেতর সিনেমায় কাজ করার সুতীব্র বাসনা ছিল। যেহেতু নিজ দেশের ইন্ডাষ্ট্রির অবস্থা ভালো নয়, তাহলে, কোথায় গিয়ে ক্যারিয়ার গড়ব? নিশ্চয়ই আমেরিকায়! অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে খুবই বাজে মানের মনে হতো আমার; তবু খুব দ্রুত নাম করে ফেলায়, টাকা কামাতে শুরু করেছিলাম। আপনি যখন টাকা কামাতে থাকবেন, তখন আপনাকে কেউ বলবে না- কাজটা ভালো করেন, নাকি খারাপ। এ নিয়ে মাথা ঘামাবে না কেউ। জানতাম, যদি আমার মধ্যে মেধার কোনো ছিটেফোঁটা থাকে, টাকা তাহলে সেটিকে গলা টিপে মেরে ফেলবে! কখনোই বিখ্যাত কোনো বাজে অভিনেত্রী হওয়ার বাসনা ছিল না আমার! সবাই তাকে চেনে, কেবল এ কারণেই সে ভালো- এমনটা কেউ ভাবতে পারে, এ আশঙ্কা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেত। এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করত মনে। নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম, ‘যে লোকজন তোমাকে ভালোবাসে, বিনিময়ে তাদের তুমি কী দিচ্ছ?’ ফলে ভালো অভিনেত্রী হওয়ার তাড়না ছিল আমার। চাইতাম ভালোর চেয়েও বেশি কিছু হয়ে ওঠতে। তাকে নিজেকে বললাম, ‘তাহলে যাওয়া যাক আমেরিকায়। কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে, নামা যাক সিনেমায়। করা যাক এমনকিছু, যা করেনি অন্য কেউ।’ আর এভাবেই, আমেরিকায় এসে হাজির হলাম। ঠিকমতো ইংরেজি জানি না, গ্রিনকার্ড নেই, আমার কোনো এজেন্ট থাকা লাগবে- জানি না তাও, গাড়ি চালাতে জানি না; সব মিলিয়ে করুণ অবস্থা আমার।
ঝুঁকি নিতে জানলে সাফল্য আসেই
ঠিকমতো ইংরেজি পড়তে পারি না বলে, চোখের সামনে যা পড়ত- চেষ্টা করলাম পড়ার। এমনকি স্ট্রিট সাইনও বাদ গেল না : ‘বাঁয়ে মোড়’! তবু, মেক্সিকো থেকে চেপে বসলাম সরাসরি হলিউডগামী বিমানে। তবে এখানে আসার ঠিক আগের রাতে, পরিচিত এক স্প্যানিশ মেয়ের কাছে ছুটে গেলাম। বললাম, ‘কী করো তুমি এখন?’ বলল, ‘আমি লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকি।’ বললাম, ‘কাল থেকে আমিও লস অ্যাঞ্জেলসে থাকব।’ আমেরিকায় এসে, তার বাসায় ছিলাম শুরুর কয়েকটি দিন। তারপর যতদ্রুত সম্ভব, অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিলাম; পেলাম ড্রাইভিং লাইসেন্স; হলো গাড়ি। কিন্তু সমস্যা হলো, কাজ পেতে চাইলে কোনো এজেন্ট থাকা আবশ্যক; আর এজেন্ট পেতে চাইলে, তাদেরকে দেখাতে হবে নিজের কাজের কোনো ভিডিও। তাই মেক্সিকোতে টেলিভিশনের জন্য করা কাজগুলো থেকে, বেছে বেছে শুধু কান্নার সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে বানালাম একটা ভিডিও ফাইল। কিন্তু লোকজন সেগুলো এমনভাবে দেখছিল, যেন আমি কোনো অ্যালিয়েন!
মেক্সিকোতে দিনগুলো ফুরফুরেই ছিল আমার। প্রচুর টাকা পয়সা ছিল। তুমুল খ্যাতি ছিল। তবু নিজের স্বপ্নের সঙ্গে আপস করিনি আমি। তাই ঝুঁকি নিয়েছি। আর, শেষ পর্যন্ত জেনে গেছি, ঝুঁকি নিতে জানলে সাফল্য আসেই। u
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ ন ত র ছ ল আম র আম র ক য় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত