ব্র্যাক ব্যাংক টানা পঞ্চমবার দেশের শীর্ষ টেকসই ব্যাংকের তালিকায়
Published: 22nd, July 2025 GMT
পাঁচ বছর ধরে শীর্ষ টেকসই ব্যাংকের তালিকায় স্থান বজায় রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে টেকসই ব্যাংকিংয়ের রেটিং চালু করার পর থেকে প্রতিবছর তালিকায় অবস্থান ধরে রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই ব্যাংকিং রেটিং পাঁচটি সূচকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করে থাকে। এগুলো হলো সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইনডেক্স, করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর), গ্রিন রিফাইন্যান্স, কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটি ইনডেক্স এবং ব্যাংকিং সার্ভিস কাভারেজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া এই স্বীকৃতি ব্র্যাক ব্যাংকের সুশাসন, দায়িত্বশীল ঋণদান ও ঝুঁকি বিবেচনায় মূলধন ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার প্রতিফলন।
২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক টেকসই অর্থায়নে ৯৪ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণকৃত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ শতাংশ। সবুজ অর্থায়নে ব্যাংকটি দিয়েছে ১৭ শতাংশ ঋণ, যা রেগুলেটরি লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশর তুলনায় অনেক বেশি।
ব্র্যাক ব্যাংকই বাংলাদেশের প্রথম ব্যাংকগুলোর একটি, যারা পার্টনারশিপ ফর কার্বন অ্যাকাউন্টিং ফাইন্যান্সিয়ালসের (পিসিএএফ) স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে নিজেদের স্কোপ ১, ২ ও ৩ কার্বন নিঃসরণের শতভাগ তথ্য প্রকাশ করেছে। এটিই দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা আইএসএসবি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ইনডিপেনডেন্ট আইএফআরএস এস-১ ও এস-২ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (ইএসআরএম) ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যাংকের সব কার্যক্রমে টেকসইতা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে। এ ছাড়া ব্যাংকটি ইএসজি কমপ্লায়েন্স এবং ঝুঁকি হ্রাস নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ঋণদান প্রক্রিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) পারফরম্যান্স স্ট্যান্ডার্ড যুক্ত করেছে।
ইএসজি-অ্যালাইনড অর্থায়নের পরিসর বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক দেশজুড়ে ৫০টি সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স হেল্প ডেস্ক চালু করেছে, যা ক্লায়েন্টদের টেকসই ঋণসুবিধা এবং গ্রিন রিফাইন্যান্স স্কিম সম্পর্কে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে।
ব্র্যাক ব্যাংকের সিএসআর কার্যক্রম সমাজে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তৈরির লক্ষ্যে পরিচালিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি, জলবায়ু সহনশীলতা এবং প্রান্তিক নারীদের উচ্চশিক্ষার মতো উদ্যোগসমূহ। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আড়াই হাজার কৃষককে জলবায়ু সহনশীল কৃষিপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এমন সব টেকসই উদ্যোগের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ব্লুমবার্গের সাসটেইনেবিলিটি স্কোরে ৪৩.
ব্র্যাক ব্যাংকের বৈচিত্র্যময় উদ্যোগ ও অর্জন সম্পর্কে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যেই সাসটেইনেবিলিটি নিহিত। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, দায়িত্বশীল ব্যাংকিং মানেই টেকসই ব্যাংকিং। টেকসই উন্নয়নের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখতে আমরা পরিবেশবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ইন য ন স ট কসই ব য লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।
অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’
অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যানএনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।
জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’
আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।
এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।
আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগেএনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’