মধ্যবিত্তের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগ উপাদান সঞ্চয়পত্র। এখানে টাকা মার খাওয়ার ঝুঁকি নেই। মাস বা বছর শেষে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়। তাই অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার সংসার খরচের চাপ কমাতে কিছু টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে রাখে। আবার চিকিৎসার খরচের মতো হঠাৎ দুর্যোগেও সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ বেশ কাজে লাগে। সন্তানের পড়াশোনার খরচও অনেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় চালান।

মধ্যবিত্তের কথা চিন্তা করে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দিয়েছে সরকার। জুনে ঘোষিত বাজেটে এই সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে এ নির্দেশনা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুবিধা কী

১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনলে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। এই ছাড় দেওয়ায় বেশ কিছু সুবিধা পাবেন ক্রেতারা। এগুলো হলো—

১.

বিনিয়োগের সুযোগ সহজ হবে। এখন অনেক মধ্যবিত্ত, যাঁরা হয়তো এখনো রিটার্ন জমা দেননি (অথবা করযোগ্য আয় নেই), তাঁরা সহজেই ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।

২. করের ঝামেলা ছাড়া নিরাপদ সঞ্চয়ের সুযোগ বাড়ল। অনেকেই রিটার্ন না দেওয়ার ভয়ে বিনিয়োগ করতেন না। এখন সেই ভয় দূর হয়েছে, ফলে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

৩. নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা হলো। নারীরা পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনেন। অনেক নারী, যাঁদের আয় নিয়মিত নয় বা আয়কর রিটার্ন নেই, তাঁরা এখন সহজে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

৪. ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা বাড়বে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য নির্দিষ্ট আয়ের উৎস হিসেবে সঞ্চয়পত্রের গুরুত্ব আরও বাড়বে। ভবিষ্যতের জরুরি খরচ (শিক্ষা, চিকিৎসা ও অবসরকাল) মেটাতে এই বিনিয়োগ কার্যকর।

৫. কিছুদিন আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানো হয়েছে। এতে সঞ্চয়পত্র–বিমুখ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত রিটার্ন জমা প্রমাণপত্রে ছাড় দেওয়ায় এখন মধ্যবিত্তরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। রিটার্ন জমার ন্যূনতম খরচ (আইনজীবীর সম্মানী, কাগজপত্র জোগাড়ের খরচ ইত্যাদি) কমবে।

কত ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। এগুলো হলো—পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র। তবে পরিবার সঞ্চয়পত্রের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শুধু নারীরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

মুনাফা কত

গত জুলাই থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের জন্য সঞ্চয়পত্রে নতুন মুনাফার হার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কিছুটা কমানো হয়েছে। নতুন হার অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার হবে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

দেখা যাচ্ছে, কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার তুলনামূলকভাবে বেশি। বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার কম। এ ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ পরিমাণ বা এর কম হলে সুদহার বেশি হবে। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার কমে আসবে।

সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ সঞ্চয়পত্রে এত দিন সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এ মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ করা হয়েছে।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পঞ্চম বছর শেষে অর্থাৎ মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এ ছাড়া তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ত ল খ ট ক র কম ব ন য় গ ম ন ফ র হ র ১১ দশম ক ১০ ল খ ট ক পর ব র স র জন য র খরচ

এছাড়াও পড়ুন:

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুল পরিচালিত এসএসসি প্রোগ্রামের মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখায় ২০২৬-২০২৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভর্তির যোগ্যতা জেএসসি পাস হতে হবে। জেএসসি ছাড়াদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

ভর্তির দরকারি তারিখ—

১. অনলাইনে ভর্তি এবং আবেদনের তারিখ শেষ তারিখ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৬।

২. অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের সনদবিহীন ভর্তি-ইচ্ছুকদের ভর্তি পরীক্ষা : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।

৩. ওরিয়েন্টেশন ও টিউটোরিয়াল ক্লাস শুরু : ১৫ মে ২০২৬।

ভর্তির যোগ্যতা—

১. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণ হতে হবে। (ভর্তির তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

২. সরাসরি অনলাইন ভর্তির জন্য: osapsnew.bou.ac.bd

ভর্তির যোগ্যতা(জেএসসি ছাড়া) —

১. যেসব শিক্ষার্থীর জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের সনদপত্র নেই তারাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৪ বছর (৩১/১২/২০২৫ তারিখে)।

২. এসব আবেদনকারীকে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বাউবি কর্তৃক নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

৩. এ জন্য ভর্তির প্রাথমিক আবেদন ফরম ফি বাবদ ৩০০ টাকা দিতে হবে।

৪. ভর্তি পরীক্ষার বিষয়, মানবণ্টন, তারিখ ও পরীক্ষা কেন্দ্র এবং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য বাউবি’র ওয়েবসাইট, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং স্টাডি সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে। (অনলাইনে আবেদনের তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

প্রয়োজনীয় কাগজ যা লাগবে—

১. দুই কপি ছবি।

২. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণের সনদ।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।

ভর্তি ও অন্যান্য ফি—

অনলাইন আবেদন ফি: ১০০ টাকা,

রেজিস্ট্রেশন ফি : ১০০ টাকা,

কোর্স ফি (প্রতি কোর্স ৫২৫ টাকা): ৩৬৭৫ টাকা,

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) ব্যবহারিক ফি: ১০০ টাকা,

একাডেমিক ক্যালেন্ডার ফি:৫ টাকা,

ডিজিটাল আইডি কার্ড ফি: ২০০ টাকা,

পরীক্ষা ফি (প্রতি কোর্স ৫০ টাকা) : ৩৫০ টাকা,

প্রথম বর্ষ নম্বরপত্র ফি : ৭০ টাকা,

মোট আবেদন ফি: ৪৬৯৬ টাকা।

বিজ্ঞান শাখার জন্য দুটি ব্যবহারিক কোর্সের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. অষ্টম শ্রেণি বা সমমান পাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং জন্ম তারিখ ইত্যাদি প্রদত্ত সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী একই রকম হতে হবে।

২. জেএসসি বা জেডিসি পাসের ক্ষেত্রে জেএসসি বা জেডিসি সনদ অনুযায়ী হতে হবে। ২০২০ সাল কিংবা তার পরবর্তীতে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণি পাশ সনদে বা প্রমাণকে বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। সনদবিহীনদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী হতে হবে।

৩. তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা কোর্স ফির শতকরা ৬০ ভাগ ছাড় পাবেন।

# বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি
  • সঞ্চয়পত্র কেনার পর যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর
  • সঞ্চয়পত্র জালিয়াতির ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১
  • সঞ্চয়পত্রে জালিয়াতির ঘটনায় ছাত্রদল নেতার নাম
  • সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাবেক ছাত্রদল নেতার নাম