সুপেয় পানির সংকট, ওয়াইফাই সেবার সমস্যাসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা অব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সর্বপ্রথম নির্মিত আলাওল হল।

এতে তীব্র ভোগান্তিতে দিনাতিপাত করছেন হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সমস্যাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকে বারবার অবহিত করলেও তা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যেন তাদের দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হলের সুপেয় পানির সমস্যায় নাকাল শিক্ষার্থীরা। প্রায় ৪০০জন শিক্ষার্থী বিশিষ্ট হলে মাত্র চারটি পানির ফিল্টারের দুইটি অচল হয়ে আছে। ভালো দুটি ফিল্টার থেকেও পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যায় না এবং এগুলো মেরামতের কয়েকদিন পরই ফের নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রায় সময়ই পার্শ্ববর্তী এফআর রহমান হল ও বাহির থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া, সাধারণ ব্যবহৃত পানিতে অতিরিক্ত আয়রন ও ময়লা থাকায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। 

আরো পড়ুন:

জুলাইয়ের সেই রিকশাওয়ালার হাতে ‘দাঁড়িপাল্লা’, সমালোচনার ঝড়

ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: লাশ নিয়ে রাজনীতি চায় না পরিবার

ওয়াইফাই সেবায়ও নাজেহাল অবস্থা। সংযোগের স্পিড কম হওয়ায় ওয়াইফাই যেন নামে আছে কাজে নেই। এতে অনলাইন ক্লাস ও প্রয়োজনীয় ব্যবহারে তীব্র ভোগান্তিতে আছেন শিক্ষার্থীরা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত বারান্দা-ওয়াশরুমগুলো পরিষ্কার করছে না। তারা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী যখন মনে চায়, তখন এসে দায়সারা পরিষ্কার করেন।

হলে দৈনিক কয়েকটি পত্রিকা থাকলেও নেই মূলধারার অন্যান্য পত্রিকাগুলো। হলের সেমিনার লাইব্রেরিতে আগের কিছু বই থাকলেও নেই সময়োপযোগী পর্যাপ্ত বই। এছাড়া হলের খেলাধুলার সরঞ্জামেও রয়েছে সংকট।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকে বারবার সমস্যাগুলো জানানো হলেও নেয়নি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। যেখানে অতি প্রয়োজনীয় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত হচ্ছি, সেখানে প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেখার কেউ নেই।

হলের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আজিম সাগর বলেন, “আমাদের হলে বিশুদ্ধ পানির যথেষ্ট সংকট রয়েছে। হলের এতগুলো শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চারটি পানির ফিল্টার। এর মধ্যে দুটি ফিল্টার বিকল হয়ে আছে। ভালো দুটি ফিল্টার থেকেও পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যায় না। কিছুক্ষণ পানি সংগ্রহ করলেই শেষ হয়ে যায়। আবার এগুলো কয়েকদিন পরপর নষ্ট হয়ে যায়।”

তিনি বলেন, “বিশুদ্ধ পানির সংকটে অনেক শিক্ষার্থীর শরীরে চর্ম রোগের মত বিভিন্ন উপসর্গ দেখা গেছে। আমি নিজেও আক্রান্ত হয়েছি। তাছাড়া গোসলের পানিতে অধিক পরিমাণে আয়রন দেখা যায়। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে বেসিনের পানি খাচ্ছে। আমি খাবার পানি বাহির থেকে আনি। এ বিষয়গুলো হল প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।”

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের বাঁধন কুমার মহন্ত বলেন, “খাবার পানির তীব্র সমস্যায় আমরা বিপর্যস্ত। ওয়াইফাই শুধু নামে আছে, কাজে নেই। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঠিকভাবে পরিষ্কারের কাজ করছে না, হলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। এদিকে পত্রিকা ও লাইব্রেরিতে বইয়ের সংকট। বৃষ্টি আসলে রিডিংরুমের মেঝেতে পানি ভর্তি হয়ে যায়।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রাধ্যক্ষ স্যার মাসে বা দুইমাসে মাত্র এক-দুইবার হলে আসেন। শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির মত মৌলিক সমস্যায় তার কোনো মাথাব্যথা নেই। সর্বোপরি দায়িত্ব পালনে তিনি যথেষ্ট অবহেলা করছেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ পাচ্ছি না।”

আলাওল হলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সৈয়দ হোসেন বলেন, “হলে পানির সমস্যাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। পানিতে অতিরিক্ত আইরন ও ময়লা দেখা যায়। আমরা সমস্যাটি বিশ্বিবিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জানিয়েছি, তারা সমাধান করবে। নেটওয়ার্কিং ডিভাইস নষ্ট হয়ে যাওয়াতে ওয়াইফাই সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না দেখলে আমাদের কিছু করার নেই।”

তবে আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ এনামুল হক বলেন, “হলের সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে কিছু কাজ হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হবে।” তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বিষয়গুলো এড়িয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “হলের বিস্তারিত সমস্যা আমাদের জানানো হয়নি। তবে পানির ফিল্টারের সমস্যাটি আমাদের অবহিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফিল্টারের জন্য একটি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আশা করি, খুব দ্রুতই এ সমস্যা দূর হবে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ সমস য গ ল পর য প ত র সমস য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ