চবির আলাওল হলে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
Published: 23rd, July 2025 GMT
সুপেয় পানির সংকট, ওয়াইফাই সেবার সমস্যাসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা অব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সর্বপ্রথম নির্মিত আলাওল হল।
এতে তীব্র ভোগান্তিতে দিনাতিপাত করছেন হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সমস্যাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকে বারবার অবহিত করলেও তা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যেন তাদের দেখার কেউ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হলের সুপেয় পানির সমস্যায় নাকাল শিক্ষার্থীরা। প্রায় ৪০০জন শিক্ষার্থী বিশিষ্ট হলে মাত্র চারটি পানির ফিল্টারের দুইটি অচল হয়ে আছে। ভালো দুটি ফিল্টার থেকেও পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যায় না এবং এগুলো মেরামতের কয়েকদিন পরই ফের নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রায় সময়ই পার্শ্ববর্তী এফআর রহমান হল ও বাহির থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া, সাধারণ ব্যবহৃত পানিতে অতিরিক্ত আয়রন ও ময়লা থাকায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
জুলাইয়ের সেই রিকশাওয়ালার হাতে ‘দাঁড়িপাল্লা’, সমালোচনার ঝড়
ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: লাশ নিয়ে রাজনীতি চায় না পরিবার
ওয়াইফাই সেবায়ও নাজেহাল অবস্থা। সংযোগের স্পিড কম হওয়ায় ওয়াইফাই যেন নামে আছে কাজে নেই। এতে অনলাইন ক্লাস ও প্রয়োজনীয় ব্যবহারে তীব্র ভোগান্তিতে আছেন শিক্ষার্থীরা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত বারান্দা-ওয়াশরুমগুলো পরিষ্কার করছে না। তারা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী যখন মনে চায়, তখন এসে দায়সারা পরিষ্কার করেন।
হলে দৈনিক কয়েকটি পত্রিকা থাকলেও নেই মূলধারার অন্যান্য পত্রিকাগুলো। হলের সেমিনার লাইব্রেরিতে আগের কিছু বই থাকলেও নেই সময়োপযোগী পর্যাপ্ত বই। এছাড়া হলের খেলাধুলার সরঞ্জামেও রয়েছে সংকট।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকে বারবার সমস্যাগুলো জানানো হলেও নেয়নি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। যেখানে অতি প্রয়োজনীয় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত হচ্ছি, সেখানে প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেখার কেউ নেই।
হলের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আজিম সাগর বলেন, “আমাদের হলে বিশুদ্ধ পানির যথেষ্ট সংকট রয়েছে। হলের এতগুলো শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চারটি পানির ফিল্টার। এর মধ্যে দুটি ফিল্টার বিকল হয়ে আছে। ভালো দুটি ফিল্টার থেকেও পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যায় না। কিছুক্ষণ পানি সংগ্রহ করলেই শেষ হয়ে যায়। আবার এগুলো কয়েকদিন পরপর নষ্ট হয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “বিশুদ্ধ পানির সংকটে অনেক শিক্ষার্থীর শরীরে চর্ম রোগের মত বিভিন্ন উপসর্গ দেখা গেছে। আমি নিজেও আক্রান্ত হয়েছি। তাছাড়া গোসলের পানিতে অধিক পরিমাণে আয়রন দেখা যায়। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে বেসিনের পানি খাচ্ছে। আমি খাবার পানি বাহির থেকে আনি। এ বিষয়গুলো হল প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।”
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের বাঁধন কুমার মহন্ত বলেন, “খাবার পানির তীব্র সমস্যায় আমরা বিপর্যস্ত। ওয়াইফাই শুধু নামে আছে, কাজে নেই। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঠিকভাবে পরিষ্কারের কাজ করছে না, হলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। এদিকে পত্রিকা ও লাইব্রেরিতে বইয়ের সংকট। বৃষ্টি আসলে রিডিংরুমের মেঝেতে পানি ভর্তি হয়ে যায়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রাধ্যক্ষ স্যার মাসে বা দুইমাসে মাত্র এক-দুইবার হলে আসেন। শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির মত মৌলিক সমস্যায় তার কোনো মাথাব্যথা নেই। সর্বোপরি দায়িত্ব পালনে তিনি যথেষ্ট অবহেলা করছেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ পাচ্ছি না।”
আলাওল হলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সৈয়দ হোসেন বলেন, “হলে পানির সমস্যাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। পানিতে অতিরিক্ত আইরন ও ময়লা দেখা যায়। আমরা সমস্যাটি বিশ্বিবিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জানিয়েছি, তারা সমাধান করবে। নেটওয়ার্কিং ডিভাইস নষ্ট হয়ে যাওয়াতে ওয়াইফাই সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না দেখলে আমাদের কিছু করার নেই।”
তবে আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “হলের বিস্তারিত সমস্যা আমাদের জানানো হয়নি। তবে পানির ফিল্টারের সমস্যাটি আমাদের অবহিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফিল্টারের জন্য একটি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আশা করি, খুব দ্রুতই এ সমস্যা দূর হবে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ সমস য গ ল পর য প ত র সমস য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
কারও ওপর আক্রমণ হলে যৌথভাবে জবাব দেবে পাকিস্তান ও সৌদি আরব
পাকিস্তান ও সৌদি আরব ‘কৌশলগত যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি’ সই করেছে। বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ চুক্তি সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো একটি দেশ আক্রান্ত হলে সেটাকে দুই দেশের ওপর ‘আগ্রাসন’ হিসেবে দেখবে রিয়াদ ও ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রিয়াদের ইয়ামামা প্রাসাদে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে শাহবাজ শরিফের বৈঠক হয়। সেখানে দুই নেতা চুক্তিতে সই করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ জোরদার করার লক্ষ্যে দুই দেশের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নিজেদের সুরক্ষিত করা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি অর্জনের জন্য উভয় দেশের অভিন্ন প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে এই চুক্তিতে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসলামাবাদ ও রিয়াদের মধ্যে ‘প্রায় আট দশকের ঐতিহাসিক অংশীদারত্ব...ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামি সংহতির বন্ধন...অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থ এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার’ ভিত্তিতে এ চুক্তি সই করা হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বলেছে, দু্ই পক্ষ ও তাদের প্রতিনিধিদল উভয় দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক পর্যালোচনা করেছে। একই সঙ্গে দুই পক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এর আগে সৌদি আরব সফররত শাহবাজ শরিফ ইয়ামামা প্রাসাদে পৌঁছালে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সৌদি যুবরাজ। এ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে সৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।