খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলা দুর্বল করতে পুলিশ নিজেই অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মেডিকেল পরীক্ষা হয়নি। মেডিকেল সনদ ছাড়া ধর্ষণ মামলা কিছুতেই আদালতে টিকবে না। এ ঘটনায় পুলিশ পরিষ্কারভাবে দায়িত্বে অবহেলা করেছে।

আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন। ‘খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় নাগরিক তদন্ত প্রতিবেদন’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নাসরিন সিরাজ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সঞ্চালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রূপসী চাকমা। এ সময় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ফেরদৌস আরা রুমী, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী তানিয়াহ মাহমুদা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি অমল ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

গত ২৭ জুন রথযাত্রা পূজা উৎসব পালন করতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওই শিক্ষার্থী। তাকে আটকে রেখে ভিডিও ধারণের পাশাপাশি হুমকিধমকি দেওয়া হয়। ১২ জুলাই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

পরে ১৬ জুলাই ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীর বাবা ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার ছয় আসামির মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও স্থানীয় বিএনপি নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার ক্ষেত্রে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে নাসরিন সিরাজ বলেন, ‘দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার আলামত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শুধুই আমাদের চোখে ধুলা দেওয়ার জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

নাসরিন সিরাজ বলেন, ‘ধর্ষণের মামলা দুর্বল করতে পুলিশ নিজেই অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগীর কোনো ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়নি। বিষয়টি জানতে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর কাছে মনে হয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগ করতে ভুক্তভোগী ২০ দিন পার করে ফেলেছেন। এখন মেডিকেল রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে।’

নাসরিন সিরাজ আরও বলেন, ‘ধর্ষণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় অবশ্যই ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। মেডিকেল সনদ ছাড়া মামলা কিছুতেই আদালতে টিকবে না। রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে—এই অনুমানের ভিত্তিতে কিছুতেই পুলিশ পরীক্ষা করানোর দায় এড়াতে পারে না। এটা পরিষ্কারভাবে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা। তাই আর বিলম্ব না করে ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা করতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে অভিযোগ করে নাসরিন সিরাজ বলেন, ‘ঘটনা ধামাচাপা দিতে একটি মহল নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামীতে দেশের শাসনক্ষমতা লাভের প্রত্যাশী একটি রাজনৈতিক দল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। ভুক্তভোগীকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ এ ধরনের অপপ্রচার ও সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

নাসরিন সিরাজ বলেন, ‘ত্রিপুরা ছাত্রীটি ধর্ষণের শিকার হয়ে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। আমরা আত্মহত্যার প্ররোচনায় দায়ীদের বিষয়ে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ এ ছাড়া ভুক্তভোগীর চিকিৎসা ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তা ও পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এ ঘটন য় য গ কর পর ক ষ অবহ ল

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ