রাজনৈতিক নেতারা কোনোভাবেই নতুন কোনো পথে হাঁটছে না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) সহ-উপাচার্য সাঈদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, অনেকে বলতে পারেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পুরোনো কায়দায় হাঁটছে। কিন্তু বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামী এখন সবচেয়ে বড় জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠন। বিএনপির মাঠের রাজনীতি, সরকারের সঙ্গে দলটির বোঝাপড়া, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তাদের কার্যক্রম—কোনো কিছু কি বলে যে তারা নতুন পথে হাঁটছে? জামায়াত কি কোনোভাবে নতুন পথে হাঁটছে? সেই তো চ্যানেল দখল, সেই তো ব্যাংক দখল।

বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সাঈদ ফেরদৌস এ কথা বলেন। এ গোলটেবিলের আয়োজন করে প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সাঈদ ফেরদৌস বলেন, জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব যখন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা (রাজনৈতিক দল) তো সেটা রাখেনি। তারা একটা দুর্বল ও অস্থায়ী সরকারকে চাপ দিয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন করাতে চেয়েছিল। জাতীয় সরকার তৈরি করা কিংবা এই সরকারকে শক্তিশালী করার কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকা বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো পালন করেনি।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, এত বড় একটা শক্তিকে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরিয়ে দিয়েছে। নানা পক্ষের দাবি, তাদের হস্তক্ষেপ, ইন্ধন ও পরামর্শ ছিল। কিন্তু শেষ বিচারে দলমত–নির্বিশেষে মানুষ মাঠে নেমেছে। এমনকি আওয়ামী কর্তৃত্বের মধ্যে যাঁরা বসবাস করতেন, তাঁদেরও মাঠে দেখা গেছে।

২০২৪ সালের ২ আগস্ট আয়োজিত ‘দ্রোহ যাত্রা’র স্মৃতিচারণা করেন সাঈদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘দ্রোহ যাত্রার আয়োজক ছিল ৩৩টি সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তখন ভাবছিলাম, ৩৩টি সংগঠনের ৩০০ জন আর শিক্ষক নেটওয়ার্কের গোটা ত্রিশেক মিলিয়ে লোক হবে সাড়ে তিন শ। প্রেসক্লাবের ছোট জায়গায় দাঁড়াতেই পারব না। আমরা যখন ওখানে নামলাম, কিসের আয়োজক, আমাদের কোনো পাত্তাই থাকল না। সেটা ভালো লাগার অনুভূতি ছিল।’

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড আশাবাদ থাকলেও খুব দ্রুতই সেই আশাবাদ উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে বলে জানান অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করল, যদি এটা গণ–অভ্যুত্থানের সরকার হয়, তাহলে কী অর্থে এটা বিপ্লবের সরকার? এই আলোচনাপ্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী ছিল? কোন উপদেষ্টা কী প্রক্রিয়ায় এসেছেন, কীভাবে বাছাই হয়েছে? এটা আমাদের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা আমাদের সরকার, কিন্তু আমাদের কারও সঙ্গে এর যোগাযোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, পুরো সময়ে বাহিনীগুলোর সংস্কার নিয়ে কেউ কথা বলেনি, অনেক বলার পরও শিক্ষা কমিশন হয়নি।

তরুণ নেতৃত্বের ব্যাপারে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘তারা হয়তো ব্যবসার জন্য দু-তিন লাখ টাকার পুঁজি খুঁজছিল। অথচ তাদের কোটি টাকা দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কে তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত করল? জুলাই নেতৃত্বের গায়ে দাগ লাগিয়ে দেওয়া, তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত করা, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। আমি বলছি না যে তাদের কোনো এজেন্সি নেই, তারা মাসুম বাচ্চা বা তাদের গায়ে অন্যরা দাগ লাগিয়ে দিচ্ছে। দলমত–নির্বিশেষে আদর্শিক অবস্থা, লড়াইয়ের জেনুইনিটি—এসব বিচার করলে সেখানেও নানা রকম মানুষ পাবেন। কিন্তু আমি মনে করি, খুব সুচতুরভাবে সমাজের নানা ধরনের শক্তিশালী স্টেকহোল্ডাররা এই নেতৃত্বের গায়ে দাগ লাগিয়েছে।’

বর্তমান সরকারের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, একটা ছোট্ট রাজনৈতিক দলেরও সারা দেশে যে পরিমাণ নেটওয়ার্ক থাকে, সবচেয়ে বড় এনজিওতেও সে পরিমাণ নেটওয়ার্ক বা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে না। জুলাইয়ের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। লাগামছাড়া হয়েছে বাজারের সিন্ডিকেট। সরকারের উচিত ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরি করা। নিয়ম করে বসে সিন্ডিকেটকে বাগে আনা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে কাজ করা।

সিভিল সোসাইটি দিয়ে গঠিত সরকার দুনিয়ার সবাইকে অসৎ ভাবে, এটাই বড় সংকট বলে মন্তব্য করেন সাঈদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘তাঁরা সরকারি চাকরিজীবী, রাজনীতিবিদ, আমলা, আমলাতন্ত্র—সবাইকে অসৎ বলতে চান। তাহলে সরকার কার ওপর নির্ভর করবে? সেখানে অসততা নেই আমি বলছি না। কিন্তু আমলাতন্ত্রে বহু নিবেদিতপ্রাণ সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী আছেন।’

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে আরও বক্তব্য দেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজ, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক জাহেদ উর রহমান, উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা, তরুণ গবেষক সহুল আহমদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন টওয় র ক র জন ত ক সরক র র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারীপুরের সাবেক দুই ডিসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

শিবচরে পদ্মা সেতু রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মাদারীপুরের সাবেক দুই জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই)  দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ সংক্রান্ত নোটিশ মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ অভিযুক্তদের কাছে পাঠিয়েছে ।

দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন জন্য দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানকে দলনেতা ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান অপুকে সদস্য করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

খুকৃবির সাবেক উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কুবির নতুন ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, তথ্য চেয়েছে দুদক

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য এবং চাহিদাপত্র চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন- মাদারীপুর সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম, সাবেক জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ঝোটন চন্দ্র, মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস।

‎মোহাম্মদ সুমন শিবলী, প্রমথ রঞ্জন ঘটক, ‎আল মামুন, মো. নাজমুল হক সুমন, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ‎কানুনগো (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, রেজাউল হক এবং মাদারীপুর কালেক্টরেট রেকর্ড রুম শাখার রেকর্ড কিপার মানিক চন্দ্র মন্ডল।

দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “মাদারীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও ড. রহিমা খাতুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও বিভিন্ন চাহিদাপত্র চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নোটিশ অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ