সন্ধ্যা নামলেই সুন্দরবনের খাল আর গহিন বনে নামে আরেক রকম ভয়। নদীর পানিতে তখন বইতে থাকে বিষ। নিস্তব্ধ অন্ধকারে শোনা যায় শুধু পানির খলখল আর দূর থেকে ভেসে আসা মাছ ধরতে নামা কিছু মানুষের ফিসফাস।

২০ জুলাই রাতে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা খবর পান, খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন–সংলগ্ন ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের কিছু লোক বিষ, জাল আর নৌকা নিয়ে বনের দিকে নামছে। অথচ সরকারি নিয়মে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস পুরো সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ।

টহল ফাঁড়ি থেকে ছোট্ট ট্রলার ছেড়ে শাকবাড়িয়া নদী ধরে এগোলেন চার বনরক্ষী। রাত তখন আরও গাঢ়, চারপাশে নিস্তব্ধতা। দূর থেকে দেখা গেল, বনের গা ঘেঁষে লোকালয়ের ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের নদীর তীরে কেওড়াবাগানের আড়ালে তিনটি নৌকা সাজানো। নৌকায় করে ভেসাল জাল, কর্কশিটভর্তি বরফ, বিষসহ পুরো প্রস্তুতি চলছে সুন্দরবনে ঢোকার।

শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান ছিলেন সেই টহল দলের নেতৃত্বে। তিনি বলেন, ‘আমরা কাছাকাছি পৌঁছাতেই নৌকায় থাকা লোকগুলো নেমে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আমরা চার বনরক্ষী তখন নিঃশব্দে নৌকাগুলো জব্দ করে টহল বোটের সঙ্গে বেঁধে ফেললাম। ভাবছিলাম, কাজ শেষ। কিন্তু হঠাৎ রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ছায়ার মতো ফিরে আসে সেই জেলেরা। সাথে লাঠি, দা আর অশ্রাব্য গালিগালাজ। ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের ওপর। আমাদের সরকারি পোশাক ছিঁড়ে ফেলে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। হামলাকারীরা মারধরের মধ্যেই জব্দ নৌকাগুলোও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’

বন বিভাগের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন জানান, ‘শাকবাড়িয়া ফাঁড়িটি আমার স্টেশনের আওতাধীন। ওই রাতে খবর পেয়ে দ্রুত পৌঁছাই। বনরক্ষী ছিলেন চারজন, হামলাকারী ছিল ২০ জনের মতো। আহতদের কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা করিয়েছি।’

সুন্দরবনের বড় বস্তা খাল থেকে বনরক্ষীরা ৫টি বিষের বোতল ও ১২০ কেজি বিষে ধরা চিংড়ি উদ্ধার করেন। গত ৩ জুলাই সুন্দরবনের জোংড়া টহল ফাঁড়ি এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র বনরক ষ টহল ফ

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা