সবকিছু ঠিকমতো এগোলে শিগগিরই ভারত-চীনে সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী মাসে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন সফরের আগেই এই বিষয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশের ধারণা এমনই।

পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ভারত-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে শৈত্য চলছিল, ইদানীং তা অনেকটাই সহজ। পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর গত জুন থেকে দুই দেশ নতুন করে শুরু করেছে মানস সরোবর যাত্রা।

আজ বৃহস্পতিবার থেকে চীনা পর্যটকদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত। সীমান্ত সমস্যাও অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধিদের ক্রমাগত আলোচনার মধ্য দিয়ে। এবার সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবলভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

পাঁচ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক উড়াল বন্ধ। চীন আগ্রহী হলেও ভারত এখনো সম্মত হয়নি।

বর্তমানে ভারত থেকে চীন বা চীন থেকে ভারত আসতে গেলে তৃতীয় কোনো দেশে থামতে হয়। সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হলে অর্থ ও সময়, দুই-ই বাঁচবে।

চলতি বছরের ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত হবে এসসিওর শীর্ষ সম্মেলন। সেই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগ দেবেন বলে এখনো ঠিক আছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের কথায়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান গতিপ্রকৃতিতে মনে করা হচ্ছে, সম্মেলনের অবসরে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগেই সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান চলাচলসংক্রান্ত বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সূত্রটি বলছে, চীন এই বিষয়ে অনেক দিন ধরেই তাদের আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে।

২০২০ সালের গোড়ায় বিশ্বজুড়ে শুরু হয় করোনার প্রকোপ। মার্চে ভারতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক উড়ান বন্ধ রয়েছে। ওই বছর জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে সংঘর্ষের পর চীনা পর্যটকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত। বন্ধ হয়ে যায় মানস সরোবর যাত্রাও।

চলতি বছরের মার্চ থেকে ভারতীয় পর্যটক ও ছাত্রছাত্রীদের চীন ভিসা দেওয়া শুরু করেছে, কিন্তু ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধই রেখেছিল। সীমান্ত আলোচনা যত সদর্থকভাবে এগিয়েছে, ভারতও তত ইতিবাচক মনোভাব নিয়েছে। মানস সরোবর যাত্রা শুরু হওয়ার পর ভারতের ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ চীনকে খুশি করেছে। সরকারিভাবে চীন এই বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশও করেছে। বলেছে, ভারতের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।

ভারত ও চীনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পেছনে বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা বড় কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক’ আচরণ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে ভারতকে বেশ খানিকটা আগ্রহী করে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানকে কাছে টানার সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রবণতা ভারত ভালোভাবে নিচ্ছে না। ট্রাম্পের শুল্কনীতিও ভারতকে চিন্তায় রেখেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের ‘অতিরিক্ত পাকিস্তান ও চীন প্রীতি’ ভারতকে সতর্ক করে রেখেছে।

এই ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত মনে করছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করে তোলা জরুরি। বিশেষ করে গালওয়ানে সংঘর্ষের পর পাঁচ বছর ধরে ভারত-চীন সীমান্তে নতুন করে যখন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি হয়নি।

সংঘাত সত্ত্বেও ভারত ও চীনের মুখ দেখাদেখি একেবারে বন্ধ ছিল না। উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের সেনা ও কূটনৈতিক পর্যায়ে ক্রমাগত আলোচনা হয়েছে। নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক বৈঠকও হয়েছে। তৃতীয় দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। গত মাসে চীনে এসসিও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্মেলনে গিয়ে রাজনাথ সিং দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে। তারপর চীনে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদি চীনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিলে গালওয়ান পরবর্তীকালে তা হবে তাঁর প্রথম চীন সফর। সেই সফরের আগেই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ লওয় ন মন ত র এসস ও চ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৩ জন পেহেলগামের হামলাকারী: পার্লামেন্টে অমিত শাহ

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত তিন বন্দুকধারী ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার অভিযানটি চালানো হয়।

আজ মঙ্গলবার ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দেওয়া বক্তব্যে অমিত শাহ এসব কথা বলেন।

তিন মাসেরও বেশি আগে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পেহেলগামের বৈসরানে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালান। ওই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হন।

অমিত শাহ বলেন, ‘আমি পার্লামেন্টে জানাতে চাই, বৈসরানে যে তিন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।’ তাঁর দাবি, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। জাতিসংঘ এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।

অমিত শাহ আরও বলেন, ‘হামলায় তাঁদের জড়িত থাকার ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে বিস্তারিত প্রমাণ আছে।’

ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাশ্মীরের দাচিগাম এলাকার পাহাড়ে গতকাল ওই অভিযান চালানো হয়েছে। শ্রীনগর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে দাচিগামের অবস্থান।

এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে থাকা বন্দুকধারীরা হঠাৎ বেরিয়ে এসে পর্যটকদের ওপর গুলি চালান। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই ভারতীয়। একজন নেপালি ছিলেন।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে পর্যটকদের গুলি করার আগে কী হয়েছিল, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা২৫ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের অভিযোগ, এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ আছে। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পেহেলগামে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত মে মাসে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে চার দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে তারা দুটি যুদ্ধসহ বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

আরও পড়ুনপেহেলগামে হামলায় জড়িত সবাইকে এবার পাকিস্তানি নাগরিক বলে দাবি ভারতের২৪ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’, শিক্ষার্থীরা পাবেন ২ ক্যাটাগরিতে
  • ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৩ জন পেহেলগামের হামলাকারী: পার্লামেন্টে অমিত শাহ