ভারত-চীন সম্পর্ক তাহলে কি স্বাভাবিক হচ্ছে, পেছনের কারণ কী
Published: 24th, July 2025 GMT
সবকিছু ঠিকমতো এগোলে শিগগিরই ভারত-চীনে সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী মাসে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন সফরের আগেই এই বিষয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশের ধারণা এমনই।
পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ভারত-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে শৈত্য চলছিল, ইদানীং তা অনেকটাই সহজ। পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর গত জুন থেকে দুই দেশ নতুন করে শুরু করেছে মানস সরোবর যাত্রা।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে চীনা পর্যটকদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত। সীমান্ত সমস্যাও অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধিদের ক্রমাগত আলোচনার মধ্য দিয়ে। এবার সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবলভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
পাঁচ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক উড়াল বন্ধ। চীন আগ্রহী হলেও ভারত এখনো সম্মত হয়নি।
বর্তমানে ভারত থেকে চীন বা চীন থেকে ভারত আসতে গেলে তৃতীয় কোনো দেশে থামতে হয়। সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হলে অর্থ ও সময়, দুই-ই বাঁচবে।
চলতি বছরের ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত হবে এসসিওর শীর্ষ সম্মেলন। সেই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগ দেবেন বলে এখনো ঠিক আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের কথায়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান গতিপ্রকৃতিতে মনে করা হচ্ছে, সম্মেলনের অবসরে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগেই সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান চলাচলসংক্রান্ত বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সূত্রটি বলছে, চীন এই বিষয়ে অনেক দিন ধরেই তাদের আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে।
২০২০ সালের গোড়ায় বিশ্বজুড়ে শুরু হয় করোনার প্রকোপ। মার্চে ভারতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক উড়ান বন্ধ রয়েছে। ওই বছর জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে সংঘর্ষের পর চীনা পর্যটকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত। বন্ধ হয়ে যায় মানস সরোবর যাত্রাও।
চলতি বছরের মার্চ থেকে ভারতীয় পর্যটক ও ছাত্রছাত্রীদের চীন ভিসা দেওয়া শুরু করেছে, কিন্তু ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধই রেখেছিল। সীমান্ত আলোচনা যত সদর্থকভাবে এগিয়েছে, ভারতও তত ইতিবাচক মনোভাব নিয়েছে। মানস সরোবর যাত্রা শুরু হওয়ার পর ভারতের ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ চীনকে খুশি করেছে। সরকারিভাবে চীন এই বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশও করেছে। বলেছে, ভারতের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।
ভারত ও চীনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পেছনে বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা বড় কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক’ আচরণ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে ভারতকে বেশ খানিকটা আগ্রহী করে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানকে কাছে টানার সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রবণতা ভারত ভালোভাবে নিচ্ছে না। ট্রাম্পের শুল্কনীতিও ভারতকে চিন্তায় রেখেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের ‘অতিরিক্ত পাকিস্তান ও চীন প্রীতি’ ভারতকে সতর্ক করে রেখেছে।
এই ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত মনে করছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করে তোলা জরুরি। বিশেষ করে গালওয়ানে সংঘর্ষের পর পাঁচ বছর ধরে ভারত-চীন সীমান্তে নতুন করে যখন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি হয়নি।
সংঘাত সত্ত্বেও ভারত ও চীনের মুখ দেখাদেখি একেবারে বন্ধ ছিল না। উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের সেনা ও কূটনৈতিক পর্যায়ে ক্রমাগত আলোচনা হয়েছে। নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক বৈঠকও হয়েছে। তৃতীয় দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। গত মাসে চীনে এসসিও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্মেলনে গিয়ে রাজনাথ সিং দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে। তারপর চীনে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদি চীনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিলে গালওয়ান পরবর্তীকালে তা হবে তাঁর প্রথম চীন সফর। সেই সফরের আগেই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ লওয় ন মন ত র এসস ও চ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।
তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।
আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।
অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।
অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।
আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’
আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগেযতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।