নির্ধারিত দামে সার মেলে না, ক্ষোভে ফুঁসছে কাঁকনহাটের কৃষক
Published: 24th, July 2025 GMT
সার বিক্রিতে অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটের কৃষকেরা। তাদের অভিযোগ, এলাকার বিসিআইসির ডিলার তাদের সরকার নির্ধারিত দামে সার দেন না। বেশি টাকা দিলে সার দেন, তা না হলে ফিরিয়ে দেন। আটকে রাখা সার তিনি পাচার করে দেন অন্য উপজেলায়। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কৃষকেরা বিক্ষোভ করেছেন।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কৃষকেরা কাঁকনহাট বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে পৌর শহরে তীব্র যানজট শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে কর্মসূচি শেষ করে। সমাবেশ থেকে কাঁকনহাটের বিসিআইসি ডিলার মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানানো হয়। তা না হলে আরো বড় কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। সমাবেশে কাঁকনহাট ও আশপাশের এলাকার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক অংশ নেন।
সমাবেশে কৃষক মেহেদী হাসান জানান, জি কে ট্রেডার্স পরিচালনা করেন তুহিনা আক্তার নামের এক নারী। তিনি বাড়তি টাকা ছাড়া সার দেন না। বাড়তি টাকা নেয়ায় তিনি সার বিক্রির কোনো রশিদ দেন না। বাধ্য হয়ে কৃষকদের সার নিতে হয়। আবার ৫ বস্তা সার চাইলে তিনি ১০ কেজি দিয়ে ফিরিয়ে দেন। আবার অনেককে সার না দিয়েই ফিরিয়ে দেন। আটকে রাখা সার তিনি বেশি তানোর উপজেলায় বেশি দামে সরবরাহ করেন।
আরো পড়ুন:
গাংনীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু
রেকর্ড উৎপাদন, বেড়েছে মজুত, তবুও চালের বাজারে উত্তাপ
কৃষকেরা জানান, সরকার নির্ধারিত ১ বস্তা ডিএপি সারের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা। তুহিনা আক্তার নেন ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ হলেও তিনি নেন দেড় হাজার টাকা। এছাড়া ১ হাজার টাকার পটাশের দাম নেন ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি কৃষকদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন।
সমাবেশে কৃষক মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি নিজে চাষাবাদের পাশাপাশি ট্রাক থেকে মাল নামাই। নিজে শত শত বস্তা সার তুহিনা আক্তারের গুদামে ঢুকাই। কিন্তু দুদিন পরই তিনি বলতে থাকেন সার নেই। তিনি নাকি বাইরে থেকে বেশি দামে সার আনেন। এ কথা বলে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেন।’’
সমাবেশে কৃষকেরা দাবি করেন, বাড়তি টাকা নেয়ার প্রতিবাদ করলে নারী নির্যাতন মামলা দেয়ার হুমকি দেন। ফলে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পান না। তবে এবার তারা সাহস করে তুহিনার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা এখন মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের দোকানে গিয়ে তুহিনা আক্তারকে পাওয়া যায়নি। দোকানে ছিলেন তার বাবা তাহাসেন আলী। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমরা ন্যায্য দামেই কৃষকের কাছে সার বিক্রি করি। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’’
গোদাগাড়ী উপজেলার ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে জি কে ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এরপর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি বুধবার (২৩ জুলাই) শুনানি করেছেন। উভয়পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ষকদ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী