সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই বনের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে অসংখ্য প্রাণের অস্তিত্ব, দেশের অর্থনীতিতেও রয়েছে এর বিশাল অবদান। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও রক্ষাকবচ সুন্দরবন। অথচ সেই বন আজ ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে। একশ্রেণির লোভী ও দুর্বৃত্ত মাছ শিকারি বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে বনের বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করছে আর তাদের এই অপকর্ম ঠেকাতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন বনরক্ষীরা। তাঁরাই যদি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন, সুন্দরবনের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, ২০ জুলাই রাতে শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা বিষ ও জাল নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এমন একটি দলকে থামাতে গিয়ে হামলার শিকার হন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশ যখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তখন এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ এবং বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে মাছ শিকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি। বনরক্ষীরা সাহসিকতার সঙ্গে তিনটি নৌকা জব্দ করলেও হামলাকারীরা লাঠি ও দা নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, সরকারি পোশাক ছিঁড়ে ফেলে এবং মারধর করে জব্দ করা নৌকা ছিনিয়ে নেয়। 

দুঃখজনকভাবে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১০ জুলাই কয়রা টহল ফাঁড়ির বনকর্মীরা একইভাবে হামলার শিকার হন। এর আগে জুন মাসে জব্দ করা নৌকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা এবং গত মার্চে হরিণ শিকারের মামলা দেওয়ায় এক বন কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। এই ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সুন্দরবন আজ কতটুকু অরক্ষিত। 

বনরক্ষীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে বনের সুরক্ষায় কাজ করছেন, অথচ তাঁদেরই হামলার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, শুধু মামলা করেই দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না; অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে বনরক্ষীদের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দরবনের সুরক্ষায় পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অভিযান আরও নিবিড় ও কার্যকর করতে হবে। 

বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার রোধ করতে স্থানীয় মানুষের মধ্যেও গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশ সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে এখানে যুক্ত করতে হবে। বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা বন্ধের একটি সামাজিক আন্দোলন করা জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র বনরক ষ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী

অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়।  ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়। 

আরো পড়ুন:

কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির

অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প

বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।

বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে’
  • সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী