পৃথিবী সূর্যের চারপাশে নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরছে। আবার নিজের অক্ষেও নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জুলাই মাসে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি কিছুটা বেড়েছে। এর ফলে পৃথিবীর দিনের পরিধি কিছুটা ছোট হয়ে পড়ছে। আর তাই ১০ জুলাই কম সময়ের দিনের দেখা মিলেছে। ভবিষ্যতের দিনের সময় আরও ছোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর দ্রুত ঘূর্ণনের কারণে বিশ্বব্যাপী সময় সমন্বয় করার প্রয়োজন হতে পারে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, এই গ্রীষ্মে পৃথিবীর ঘূর্ণন তুলনামূলকভাবে দ্রুততর হচ্ছে বলে দিনের সময় কিছুটা ছোট হচ্ছে। ১০ জুলাই এখন পর্যন্ত বছরের সবচেয়ে ছোটদিন রেকর্ড করা হয়েছে। সেদিন দিনের দৈর্ঘ্য সাধারণ সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৩৬ মিলিসেকেন্ড কম ছিল। ২২ জুলাই দিনের দৈর্ঘ্য কম ছিল ১ দশমিক ৩৪ মিলিসেকেন্ড। আগামী ৫ আগস্ট দিনের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ২৫ মিলিসেকেন্ড কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুনপৃথিবীর গভীরে কী রয়েছে০২ নভেম্বর ২০২৩

এক দিনের দৈর্ঘ্য গড়ে ৮৬ হাজার ৪০০ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা হয়। গতিশীল অবস্থার কারণে এই সময়ে পরিবর্তন আসে। সূক্ষ্ম এই সময়ের পরিবর্তনের বড় আকারের প্রভাব দেখা যায় না। যদিও ছোট সময়ের বিচ্যুতি স্যাটেলাইট নেভিগেশন, টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার সিস্টেম ও বিশ্বব্যাপী আর্থিক নেটওয়ার্কের ওপর প্রভাব তৈরি করে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির পদার্থবিদ জুডাহ লেভাইন জানিয়েছেন, সূক্ষ্ম এই পরিবর্তনের জন্য ১৯৫৫ সালে পারমাণবিক ঘড়িনির্ভর সমন্বিত সর্বজনীন সময় বা ইউটিসি আন্তর্জাতিক সময় গণনার মান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অতি-নির্ভুল সময়ের হিসাব করতে এই ঘড়ি ব্যবহার করা হয়। উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির প্রযুক্তির জগতে মিলিসেকেন্ডের পার্থক্যও গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনমহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী কত ক্ষুদ্র ১৭ এপ্রিল ২০২৫

প্রসঙ্গত, পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি নানাভাবে প্রভাবিত হতে পারে। হিমবাহ গলে যাওয়া থেকে ভরের পরিবর্তন হয়। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি পরিবর্তিত হতে পারে। এল নিনো ও লা নিনার মতো প্রাকৃতিক ঘটনাও পৃথিবীর ঘূর্ণনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আর তাই ইউটিসির সময়ের হিসাবে পৃথিবীর প্রকৃত ঘূর্ণনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে ১৯৭২ সাল থেকে লিপ সেকেন্ড যোগ করা হচ্ছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সময় র

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ

পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। তবে এই দূরত্ব স্থির নয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, চাঁদ প্রতিবছর প্রায় ৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার হারে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই ঘটনা কোনো আকস্মিক পরিবর্তন নয়। এই দূরে সরে যাওয়ার পেছনে একটি ধীরগতির প্রক্রিয়া রয়েছে, যা কোটি কোটি বছর ধরে চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানী স্টিফেন ডিকারবি জানান, জোয়ার-ভাটার শক্তি ও কৌণিক ভরবেগের কারণে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। সূর্য ও চাঁদের মহাকর্ষীয় টানের কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। চাঁদের আকর্ষণশক্তির কারণে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের দিকে থাকে সেখানে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে। বিপরীত দিকেও একই রকম জোয়ার সৃষ্টি হয়। এতে পৃথিবীর দুই পাশে দুটি জোয়ারের স্ফীতি তৈরি হয়। পৃথিবী তার নিজ অক্ষের ওপর প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘোরে। ফলে এই জোয়ারের স্ফীতি চাঁদের আকর্ষণের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারণে এই স্ফীতি চাঁদকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে চাঁদ অতিরিক্ত শক্তির মাধ্যমে তার কক্ষপথকে সামান্য প্রসারিত করছে।

আরও পড়ুনপৃথিবী থেকে চাঁদের অন্য পাশ দেখা যায় না কেন০২ মে ২০২৫

জোয়ারের স্ফীতি যখন চাঁদকে টেনে সামনে নিয়ে যায়, তখন চাঁদ পাল্টা টানে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির ওপর বিশেষ ধরনের ব্রেক তৈরি করে। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি ধীরে ধীরে কমে আসছে। এতে দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিসেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পুরো প্রক্রিয়া পদার্থবিজ্ঞানের কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ নীতির ওপর নির্ভরশীল। এই নীতি অনুসারে, কোনো আবদ্ধ সিস্টেমের মোট কৌণিক ভরবেগ স্থির থাকে। যখন পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির কৌণিক ভরবেগ কমে যায়, তখন চাঁদের কক্ষপথের কৌণিক ভরবেগ বেড়ে যায়। আর কক্ষপথের কৌণিক ভরবেগ বাড়লে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায়।

আরও পড়ুনচাঁদে সময় কি দ্রুত না ধীরে চলে০২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, চাঁদ যে গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে, তা নিয়ে আপাতত বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে কোটি কোটি বছর পর এর ফলে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। তখন জোয়ার-ভাটার তীব্রতাও কম হবে। এই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া কেবল চাঁদ বা পৃথিবীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহ ও তাদের উপগ্রহের মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা যায়।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ