টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি ব্রিজের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও ঠিকাদারের গাফিলতিতে ধীর গতিতে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। ব্রিজের গার্ডার ভাঙার বিষয়ে বুয়েটসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক বছর আগে তদন্ত করলেও রহস্যজনক কারণে তা প্রকাশ করেনি। অথচ এ বিষয়ে ঠিকাদারের পক্ষেই সাফাই গাইলেন এলজিইডি কর্মকর্তা।

জানা গেছে- যমুনা সেতু মহাসড়কে চাপ ও ঝুঁকি কমানো, কালিহাতীর সাথে টাঙ্গাইল সদর ও ভূঞাপুর উপজেলার মানুষের যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতে সল্লায় লৌহজং নদীর উপর ২৫০ মিটার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য সেতুটির কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মে মাসে। ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়া কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ব্রিজের কাজ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। 

এছাড়াও একই নদীতে দুই কিলোমিটার উত্তরে ৩৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬৪ মিটার আরেকটি সেতুর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ।

সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, ব্রিজগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় নৌকার জন্য ১০ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এতে শিক্ষার্থীরা সময় মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। এছাড়া দুর্ঘটার আশঙ্কা তো রয়েছেই।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান মিয়া বলেন, “সল্লা ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় আমার মতো শত শত শিক্ষার্থীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে নৌকা থেকে পড়ে আহত হচ্ছে। এছাড়াও নৌকার জন্য অপেক্ষায় প্রতিনিয়িত স্কুলে যেতে দেরি হয়। পরীক্ষার সময়ও পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।”

স্থানীয় গফুর সিকদার, সজল মিয়া ও রাসেল রানা অভিযোগ করে বলেন, সল্লা ব্রিজে নিম্নমানের কাজের কারণে ব্রিজের গার্ডার ধসে পড়েছিল। এটা নিয়ে বুয়েটসহ সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করলেও রহস্যজনক কারণে তা প্রকাশ করা হয়নি। দীর্ঘ সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় রোগী, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সল্লা সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেক আলী মোল্লা বলেন, “কর্তৃপক্ষের গাফিলতির পাশাপাশি নিম্নমানের কাজও করা হচ্ছে। ব্রিজের উভয় পাশে অন্তত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ ও একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কারণে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের পারাপার করতে হয়। নৌকায় পারাপার হতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্রিজের কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।”

মেসার্স চৌধুরী এন্টার প্রাইজ এন্ড মেসার্স দুর্গা এন্টার প্রাইজ জেবি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার নাহিদুল ইসলাম লিটন বলেন, “ইতিমধ্যে সল্লা ব্রিজের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হবে ব্রিজটি। এছাড়া ব্রিজের কাজ নিম্নমানের করার কোন সুযোগ নেই।”

টাঙ্গাইল জজ কোর্টের আইনজীবী আব্দুল মালেক বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে রাষ্ট্রের ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি জনভোগান্তিও বাড়ে কয়েক গুণ। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরি। অন্যথায় এ রকম অনিয়ম, দুর্নীতি ঠিকাদাররা করেই যাবে। ফলে রাষ্ট্রের ব্যয় বাড়লেও জনদুর্ভোগ লাঘব হবে না।”

তবে কালিহাতীর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ হোসেন ঠিকাদারের প্রশংসা করে বলেন, “দুটি ব্রিজেই কোন নিম্নমানের কাজ হয়নি। এক বছর আগে বুয়েটসহ সংশ্লিষ্টরা গার্ডার ধসে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত করলেও সেটি আমরা হাতে পাইনি। সল্লা ব্রিজের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হলেও জোকারচর ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর জোকারচর ব্রিজের ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় সেটির টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। এ ব্রিজের পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে।”

ঢাকা/কাওছার/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ষ হয় হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ