‘আমাকে আর বাঁচাতে পারবেন না, চেষ্টা কইরেন না’
Published: 25th, July 2025 GMT
‘ভাইয়া আমাকে আর বাঁচাতে পারবেন না, চেষ্টা কইরেন না। আমার ছেলেটাকে দেখবেন।’—ছোট ভাইয়ের এই কথাগুলো কানে বাজছে আবদুল হাকিমের। গত বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বড় ভাইকে আকুতি জানিয়েছিলেন ইমরান হোসেন (২৭)। এর কয়েক ঘণ্টা পর ভাইয়ের সামনেই মৃত্যু হয় ইমরানের।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তিনি সীতাকুণ্ডের একটি ইস্পাত কারখানার তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) হিসেবে চাকরি করতেন। স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ভাটিয়ারী রয়েল গেট এলাকায়। তাঁদের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার তমুরুদ্দিতে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাড়িতে ইমরানের দাফন হয়।
চার ভাইয়ের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। বড় ভাই আবদুল হাকিম চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে থাকেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে হাকিম ছোট ভাইয়ের শয্যার পাশে ছিলেন।
আবদুল হাকিম মুঠোফোনে বলেন, ‘চার দিন ধরে ভাইয়ের জ্বর ছিল। সে আমাকে ফোন দিয়ে বলে ভাইয়া আমার বেশি জ্বর। আমি শুক্রবার তাকে দেখতে গেলাম ভাটিয়ারীতে। এত বেশি জ্বর ছিল যে আমাকে চিনতেই পারছিল না। এরপর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তারপর গত রোববার তাকে আমি আমার বাসার কাছে ফটিকছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দিই।’
হাসপাতালে গত সোমবার থেকে ইমরানের আর জ্বর আসেনি। কিন্তু গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা তাঁকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চমেকে ভর্তির পর থেকে ইমরানের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পেটের ব্যথা ও খিঁচুনি হতে থাকে তাঁর।
আবদুল হাকিম বলেন, ‘তাঁর খিঁচুনির মতো চলে আসে। একপর্যায়ে সে ইশারা করে পানি খাওয়াতে বলে। আমি তাঁর মুখে দু চামচ পানি দিই। এর কিছুক্ষণ পর মারা যায় ভাইটি।’
তিন বছর আগে ইমরানের বিয়ে হয়। তাঁর ১৫ মাসের একটা ছেলে আছে। স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী ফরিদা আকতার ছেলেকে নিয়ে ফটিকছড়িতে ভাশুরের বাসায় ছিলেন। ফরিদা এখন কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। ছেলে সানজিদ এখনো বুঝতে পারছে না তার বাবা নেই। বাবার কোলে সানজিদের ছবিগুলোই এখন ফরিদার সারা জীবনের স্মৃতি।
আবদুল হাকিমেরও বিশ্বাস হচ্ছে না এত কম বয়সে যে ইমরান চলে গেল। হাকিম বলেন, ‘আমার বৃদ্ধা মা বেঁচে আছেন। তিনি কীভাবে ছেলের মৃত্যু মেনে নেবেন। চেষ্টা করেও ভাইকে বাঁচাতে পারলাম না। তার ছেলেটা এতিম হয়ে গেল।’
ডেঙ্গুতে ইমরান হোসেনের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এ বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাই মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু—দুটিই বেশি।
চট্টগ্রামে শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫৯ জন। মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে জুলাই মাসেই মারা যান চারজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ক ম ইমর ন র
এছাড়াও পড়ুন:
পার্বতীপুরে যুবদল-এনসিপির সংঘর্ষে ছয়জন আহত
ছবি : সংগৃহীত