ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মহানায়ক সম্মান ২০২৫’ প্রদান করা হয়েছে। এবার এই পুরস্কার পেয়েছেন ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের মেকআপ শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু, প্রোডাকশন ডিজাইনার আনন্দ আঢ্য, বাংলা চলচ্চিত্র-থিয়েটার-টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী অভিনেত্রী গার্গী রায় চৌধুরী, সংগীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী, রূপঙ্কর বাগচী।
ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মহানায়ক শ্রেষ্ঠ সম্মান-২০২৫’ প্রদান করা হয় গুণী পরিচালক গৌতম ঘোষকে। পুরস্কার হিসেবে উত্তরীয়, একটি স্মারক এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) মহানায়কের ৪৫ তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ। এ অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদান করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
আরো পড়ুন:
তিশার সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ালেন খায়রুল বাসার
চলচ্চিত্রে তিশা, সঙ্গী ‘থ্রি ইডিয়টস’ তারকা যোশি
মহানায়ক উত্তম কুমারকে প্রাণের মানুষ, দেশের গর্ব, জাতির গর্ব, সংস্কৃতির গর্ব, চলচ্চিত্রের গর্ব বলে আখ্যায়িত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তার মৃত্যুর ৪৫ বছর পরও আমরা কেউ উত্তম কুমারকে ভুলতে পেরেছি? কোনোদিন পারবও না। নামটাও যেমন উত্তম, কাজেও উত্তম। আমি দেখেছি অনেক বিশিষ্ট শিল্পীরা গানে ঠিকমতো লিপ (ঠোঁট মেলানো) দিতে পারেন না। কিন্তু উত্তম কুমারের গুণ ছিল প্রত্যেকটা গান উনি মুখস্ত করতেন এবং লিপ মেলাতেন। এটাই ওনার বিউটি।”
আফসোস করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার জীবনে খুব আফসোস যে, সুচিত্রা সেন, মাধবী মুখার্জি, সাবিত্রী মুখার্জি, শর্মিলা ঠাকুর, তনুজা, সৌমিত্র চ্যাটার্জির মতো শিল্পীদের চিনি। তাদের সকলের কাছে আমার আসা-যাওয়া ছিল। কিন্তু উত্তম কুমারের সঙ্গে আমার কোনোদিনই দেখা হয়নি। এই না দেখাটা আমাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়।”
ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি তখন চতুর্থ/পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন মায়ের হাত ধরে ভবানীপুরের সিনেমা হলে যেতাম। মা-ই আমাকে নিয়ে যেতেন। তখন চানাচুরের প্যাকেট খেতে খেতে আমি হলের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তাম। আর মা সিনেমা দেখতো। কিন্তু তখনই যে গানগুলো আমি শুনেছিলাম এত অপূর্ব, এত মাধুর্যপূর্ণ সেই গানগুলো আজও আমাদের মুখে ফেরে।”
এ সময়ের টিভি সিরিয়াল থেকে শুরু করে বাংলা সিনেমায় বাংলা গানের ব্যবহার কম হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “স্বর্ণযুগের সেই যে বাংলা গানগুলো তার বাজার কিন্তু কোনোদিনও ফুরায় না। বাংলা গানের যে মাধুর্য সংস্কৃতি, কথা, ভাষা সুর…! সেসময় সলিল চৌধুরী, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, বনশ্রী সেনগুপ্ত, নির্মলা মিশ্র, পুলক ব্যানার্জি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্রদের গানগুলো শোনার পর একটা মুখস্ত করার প্রবণতা ছিল। সে সময় অনুরোধের আসর শুনতে আমাদের রেডিওর সামনে বসতেই হতো। একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এখন সেসব কোথায়?”
পাশাপাশি ভারতীয় বাংলা টিভি সিরিয়ালের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সিরিয়াল নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন দেখি সিরিয়ালগুলোতে সারাক্ষণ শুধু এ ওকে বিষ দিচ্ছে, ও তাকে বিষ দিচ্ছে।”
বাংলা ভাষার উপরে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। তার অভিমত—“বাংলা সংস্কৃতিকে আরো বিকশিত, কুসুমিত করতে হবে। কারণ সভ্যতা ও সংস্কৃতি একটা জাতির মেরুদণ্ড। দিন শেষে আমার মুখ দিয়ে মাতৃভাষাটাই বেরোবে। বাংলা ভাষার উপরে আজকে সন্ত্রাস চলছে। বাংলা ভাষায় যারা কথা বলে তাদের উপরও খুব অত্যাচার হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে এই বাংলা ভাষা পঞ্চম স্থানে, এশিয়াতে দ্বিতীয় স্থানে। প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। সেখানে আজ বাংলা ভাষায় কথা বললেই কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। বাংলা আমাদের জন্মভূমি, কর্মভূমি, মাতৃভূমি। এই ভূমিটা আমাদের রক্ষা করতে হবে।”
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী, অম্বরিশ ভট্টাচার্য্য, চিত্রপরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, শ্রীজাত মুখার্জি, অরিন্দম শীল, মন্ত্রী ও গায়ক বাবুল সুপ্রিয়, সংগীতশিল্পী অদিতি মুন্সি, শ্রীরাধা ব্যানার্জি, মনোময় ভট্টাচার্য, রাজ্যের কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, শোভনদেব চ্যাটার্জি, বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জি প্রমুখ।
কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ, রাশিয়া এবং মিয়ানমারের কনসুল জেনারেলরাও উপস্থিত ছিলেন এ দিনের অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্টরা। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র ম খ যমন ত র চলচ চ ত র অন ষ ঠ ন প রস ক র মন ত র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৮ম ড্যাফোডিল ক্যাপ্টেন কাপ গলফ টুর্নামেন্টে দেশি প্রযুক্তি
দেশি প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও আত্মনির্ভরতার এক অনুপ্রেরণামূলক প্রতিচ্ছবি হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের সবুজ মাঠে এবারের ‘৮ম ড্যাফোডিল ক্যাপ্টেন কাপ গলফ টুর্নামেন্ট ২০২৫’ আয়োজনটি ছিল ব্যতিক্রমী। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয় বরং বন্ধুত্ব, শৃঙ্খলা ও মানসিক প্রশান্তির এক মহামিলনমেলা।
খেলাধুলা ও সুস্থ জীবনধারার প্রসারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা ড্যাফোডিল গ্রুপ এ বছরও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল গর্বিত অংশীদার। গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর ২০২৫), সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ও কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, এসবিপি, ওএসপি, এসজিপি, পিএসসি। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল গ্রুপ ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট ও কেজিসি ভাইস প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের গলফার, সামরিক ও বেসামরিক অতিথিবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।
তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন গলফ ক্লাবের প্রায় ৬৫২ জন গলফার। টুর্নামেন্ট শেষে কর্নেল মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চ্যাম্পিয়ন, কর্নেল মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম রানার আপ এবং মিসেস জিন সুক ইউন লেডিস উইনার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
আরও পড়ুনহার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, মূল্য হারাতে বসেছে ১০ ডিগ্রি২৮ অক্টোবর ২০২৫এই বছরের টুর্নামেন্টে ব্যবহৃত গলফ ছাতাটি ছিল সম্পূর্ণ দেশি উদ্যোগে তৈরি, যা বাংলাদেশের ব্যবসা ও উদ্যোগের জগতে এক নতুন অধ্যায়। এটি প্রমাণ করে বাংলাদেশেও স্পোর্টসের সামগ্রী দেশিভাবে তৈরি ও রপ্তানি করা সম্ভব। এ নিয়ে মো. সবুর খান বলেন, ‘এই ধরনের সব খেলার সামগ্রী আমাদের সাধারণত বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। তবে আমরা চাইলে খেলার সামগ্রীগুলোর ক্ষেত্রে আমদানিমুখী না হয়ে নিজেদের উদ্যোক্তাদের ব্যবহার করে বাইরের দেশে উল্টো রপ্তানি বাড়াতে পারি। এই ছাতার মান হয়তো প্রথমবারেই শতভাগ আন্তর্জাতিক নয়, কিন্তু এই সামান্য ছাতাই আমাদের সাহসের প্রতীক, দেশি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।
বিজ্ঞপ্তি