Prothomalo:
2025-07-31@06:29:04 GMT

আরেক জুলাইয়ে দাঁড়িয়ে 

Published: 26th, July 2025 GMT

আজ যখন আরেক জুলাইয়ে দাঁড়িয়ে ফিরে তাকাই, অভ্যুত্থানের কথা মনে করি, তখন অনেক স্মৃতিবিস্মৃতির ভিড়ে কেমন যেন ন্যুব্জ অনুভব করি। সম্ভবত সে কারণেই এক বছরে কী আমাদের সামষ্টিক অর্জন, বস্তুনিষ্ঠ বা নৈর্ব্যক্তিকভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা বেশ কঠিন মনে হয়। খুব কাছ থেকে বড় কোনো কিছুকে দেখলে অনেক সময় তাকে তার সমগ্রতায় দেখতে পাওয়া মুশকিল হয়। যাঁরা জুলাই অভ্যুত্থানকে নেতিবাচকভাবে দেখেন, তাঁরাও স্বীকার করবেন যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া এক বিরাট ঘটনা। তাই নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জুলাইকে বিশ্লেষণ করতে গেলে তা অপূর্ণই থাকবে। সম্ভবত আমরা সবাই অন্ধ হয়ে হাতির বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। মাত্র এক বছরের মাথায় ‘জুলাই আমাদের কী দিল’, এই প্রশ্নের নির্মোহ উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। জুলাই ও তৎপরবর্তী একটা বছর যাদেরকে ক্রমাগত ট্রমা দিয়ে গিয়েছে, তাদের পক্ষে তো আরও নয়। তবু চেষ্টা করা জরুরি, সেই চেষ্টাটাই এই লেখায় করছি।

নানা অভিধায় শেখ হাসিনার শাসনকে অভিহিত করা হয়েছে গত ১৬ বছরে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শেখ হাসিনার শাসনামল মূলত ছিল একটা মাফিয়ারাজ। একজন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মাফিয়া তখনই একটা সমাজে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়, যখন প্রথাগত প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ নিজেকে বাঁচাতে তখন মাফিয়ার শরণাপন্ন হতে, তাকে শাসক হিসেবে মেনে নিতে একরকম বাধ্য হয়। সে অর্থে শেখ হাসিনার তুলনা যতটা চলে হিটলার, মুসোলিনির সঙ্গে, তার থেকে বেশি চলে নরিয়েগা বা নায়েব বুকেলের সঙ্গে। শেখ হাসিনা যে বারবার বিবিধ রীতি ও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পেরেছেন, তা কিন্তু মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশের নীরব সম্মতিতেই। যাঁরা মাফিয়াশাসিত সমাজ ও রাষ্ট্রগুলোর ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছেন তাঁদের জানার কথা, মাফিয়ার পতনের পরবর্তী যে সময়টা, তা সাধারণত হয়ে থাকে সবচেয়ে সহিংস। একটা বিশাল মাফিয়া নেটওয়ার্ক রাতারাতি অকেজো হয়ে গেলে ছোট ছোট গুন্ডা–মাস্তানেরা আঁধার থেকে আলোতে আসে। আর তারপর শুরু হয় দখল নেওয়ার প্রতিযোগিতা। এলাকার বাজার থেকে দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়—কিছুই সেই কাড়াকাড়ির প্রক্রিয়ার বাইরে থাকে না। ফলে গত এক বছরে এই দখলের প্রতিযোগিতায় সহিংসতা যে চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে, এটা আমাদের অনুমান করতে পারা উচিত ছিল। মনে রাখা দরকার ছিল, আওয়ামী লীগের বাইরে বাকি সবাই গৌতম বুদ্ধ হলে শেখ হাসিনার আপাদমস্তক অগণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে এত অনায়াসে এত বড় অংশের মানুষের নীরব সম্মতি উৎপাদন করা সম্ভব ছিল না। 

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনার পরিবারের ৭ সদস্যের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের পৃথক ছয়টি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম ও সুলতান মাহমুদ।

আগামী ১১ ও ১৩ আগস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ঠিক করা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যরা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি)।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের পৃথক ছয়টি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে অভিযোগ গঠনের পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ২০ জুলাই পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি এই আদালতে বদলি হয়।

দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে মামলাগুলো বিচারের জন্য অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় গত এপ্রিলে শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। তিনটি মামলায় তাঁদের ছাড়াও সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদসহ ১৬ জন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।

২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লটের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করে দুদক।

পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত ১০ মার্চ অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ