ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং ক্যাম্পাসে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে চলতি সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার আশ্বাস দিয়েছে ইবি প্রশাসন। 

শনিবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে আল কুরআন বিভাগের আহ্বানে ক্যাম্পাসের বটতলায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। মিছিল বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। পরে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশের আশ্বাস পেয়ে দুপুর দেড়টায় মাঠ ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

৭২ বছরে প্রথম রুয়া নির্বাচন: সভাপতি রফিকুল, সম্পাদক নিজাম

ইবিতে বেড়েছে সাপের উপদ্রব, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে’, ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’, ‘প্রশাসনের মানি না, মানবো না’, ‘পুকুরে লাশ ভাসে, প্রশাসন কী করে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাজিদ হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

অবস্থান কর্মসূচিতে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.

আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মিঝি, অধ্যাপক ড. মোহা. জালাল উদ্দিনসহ বিভাগের শিক্ষার্থী ও ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদ হত্যার তদন্তের বিষয়ে যে অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল, সেটা দৃশ্যমান হয়নি। দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছয়দিন সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তদন্ত কাজের কোন গাফিলতি না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।

সাজিদের বন্ধু ইনসান বলেন, “প্রশাসন ছয়দিন সময় দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো রিপোর্ট প্রকাশ করেননি। প্রশাসন যদি গড়িমসি করে তাহলে পরবর্তীতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

খেলাফত ছাত্র মজলিসের শাখা সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ বলেন, “প্রশাসন ব্যর্থতার প্রমাণ করে দিয়েছে। এতদিন সাজিদ হত্যার তদন্ত ছাড়াও নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য দাবি পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না।”

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পর দ্বিতীয় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তবে ছয়দিন সময় দিয়েছিল, কিন্তু তা তো হাওয়া মনে করছে প্রশাসন। যদি দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে নিয়ম ভেঙে আন্দোলন করা হবে।”

ছাত্র ইউনিয়নের ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহমাদ গালিব বলেন, “যে প্রশাসন এতদিন মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি, সেই প্রশাসনকে মৃত ঘোষণা করা হবে।”

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আল কুরআন বিভাগ পরীক্ষা বর্জন করে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বের করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময় ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাস সংস্কারের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিল, কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি। যদি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট না বুঝেন বা শিক্ষার্থীদের কাতারে না আসেন, আপনারা যদি বিপ্লবী প্রশাসনের ভূমিকা রাখতে না পারেন, আল্লাহর ওয়াস্তে নেমে যান।”

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি- সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করুন। তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে, সেটার দ্রুত রিপোর্ট পেশ করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতক্ষণের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করবে, তা স্পষ্ট করুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখব।”

তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় কেউ শিক্ষকদের গায়ে হাত না দেয় এবং বিশৃঙ্খলা না করতে পারে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের জানা আছে, একটা গ্রুপ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। যদি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে এর দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, “সাজিদ হত্যার নয়দিন হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেনি প্রশাসন। জুলাইয়ের পরেও জনগণ বা শিক্ষার্থীদের ম্যানডেট না বোঝেন, তাহলে আগের নজিরের ব্যত্যয় হবে না। আপনাদের নেমে যেতে বাধ্য করা হবে। দ্রুত রিপোর্ট পেশ করে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন, অন্যথায় পালানোর পথ পাবেন না।”

আল কুরআন বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী আমাদের কাছে আমানত। প্রশাসনকে বলবো- আপনারা ছাত্রদের কাতারে চলে আসুন। তাহলে আপানারা সুন্দর থাকবেন এবং ক্যাম্পাসও সুষ্ঠু থাকবে।”

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি বলেন, “আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রথম থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ করছি- একদল ষড়যন্ত্রকারী সাজিদের লাশ নিয়ে বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। আমাদের বিভাগের নেতৃত্বে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে হলেও প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করাবো ইনশাআল্লাহ। আমি প্রশাসনকে বলব- আপনারা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখালে পরিণত ভয়াবহ হবে।”

রুটিন উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, “তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ছুটির দিন বাদে পাঁচদিন কার্যদিবস পেয়েছে তারা। আশা করছি- ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পেলে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার-বুধবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারব।”

গত ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন। অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত আল ক রআন ব ভ গ স জ দ হত য র তদন ত ক ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ব্যবসায়ী নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সন্ত্রাসীদের হামলায় মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে তার ওপর হামলা হয়। নিহত মোস্তফা কামাল একই গ্রামের মৃত মমিন মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোস্তফা কামাল রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে সড়কে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা করে। তারা তার মাথা ও ঘাড়ে কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’

বান্দরবানে যুবককে পাথর দিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার  ২

একজন পথচারী মোস্তফা কামালকে সড়কের পাশে পরে থাকতে দেখে পরিবারের লোকদের খবর দেন। তারা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক মোস্তফা কামালকে মৃত ঘোষণা করেন। 

সরাইল থানার ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, রাতে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের হামলায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ