জাতীয় বাছাইয়ে সেরা ৩০ জন পেল পুরস্কার, চূড়ান্ত বাছাই ২৯ ও ৩০ জুলাই
Published: 26th, July 2025 GMT
জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক আয়োজন ‘এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড’-এর ২০তম আসরের জাতীয় বাছাইয়ে ৩০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ২৯ ও ৩০ জুলাই পাঁচজনকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হবে। তারা আগামী সেপ্টেম্বর রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় ওপেন ওয়ার্ল্ড অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর আফতাবনগরের ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় বাছাই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে স্কুল ও কলেজের ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। দিনব্যাপী পরীক্ষা শেষে বিকেলে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ ১৫-৩০ বছরের তরুণ। তাঁদের বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিতে পারদর্শী করতে পারলে সসীম সম্পদ ও সীমিত এলাকা নিয়েও অসাধারণ অগ্রগতি সম্ভব।
আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের চেয়ারম্যান মিখাইল গাব্রিলভ বলেন, মহাবিশ্ব ও প্রকৃতিকে জানার বেশ আকর্ষণীয় উপায় জ্যোতির্বিজ্ঞান। এখানকার সবাই ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হবে না, কিন্তু সবাই বিজ্ঞানের সমুদ্রে অনেক ভালো অভিজ্ঞতা লাভ করবে।
স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শামস রহমান বলেন, ‘শুধু মাটির নিচের ও ওপরের সম্পদ নিয়েই আমরা কাজ করি। ইদানীং ব্লু ইকোনমি (সুনীল অর্থনীতি) নিয়েও বাংলাদেশ কিছু কাজ করছে। কিন্তু মহাকাশে কী আছে, সে ব্যাপারে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। আমার বিশ্বাস, শুধু বিলাসিতা নয়, মানবজাতির জন্য সেই সম্পদ আহরণে যে জ্ঞান দরকার, নিজেদের স্বপ্নপূরণের জন্যই তাঁরা সেটা অর্জন করবে। আজকে উপস্থিত শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে এই পথে নেতৃত্ব দেবে।’
জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ বলেন, বিজ্ঞানী হওয়া খুব বড় কথা নয়, বিজ্ঞানমনস্ক হওয়াই বড় কথা। প্রযুক্তির কিছু জিনিস শিখলে যে কেউ বিজ্ঞানী হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হতে হলে অনেক কিছু জানতে হবে, পড়তে হবে। বিশ্বকে বুঝতে হবে। দর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতিও বুঝতে হবে।
পুরস্কার বিজয়ী শিক্ষার্থীরা ফটোসেশনে অংশ নেয়। ঢাকা, ২৬ জুলাই.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রদর্শনী, কুইজ, সুডোকুতে জমজমাট বিজ্ঞান উৎসব
তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্বে চলছে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান প্রজেক্টের প্রদর্শনী।
এ ছাড়া কুইজ, রুবিকস কিউব ও সুডোকু প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে তারা। এর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে বিশেষজ্ঞদের থেকে বিজ্ঞানবিষয়ক বক্তব্য শোনা।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে এ উৎসব চলবে বিকেল পর্যন্ত।
আয়োজনে বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কিশোর তরুণদের বিজ্ঞান, এআইয়ের মতো বিজ্ঞানের নতুন বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে। চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটানোই এই উৎসবের উদ্দেশ্য।
বিকাশ লিমিটেডের ইভিপি অ্যান্ড হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান হুমায়ুন কবির বলেন, এ দেশের মানুষের মেধা আছে, বুদ্ধি আছে যা কাজে লাগাতে হবে। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া বেশি জরুরি। এ দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় বিদেশি পরামর্শকদের পেছনে। তাই এ দেশের মেধাকে এ জায়গা ধরতে হবে। চিন্তা করতে হবে, সমস্যা সমাধান করতে হবে, প্রোগ্রামিং করতে হবে।
কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, বিজ্ঞান জানতে হবে, বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। ভালো ছাত্র হতে হলে প্রচুর পড়তে হবে, নানা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতে হবে। ভালো মানুষ হতে হবে।
‘রোবটরা কি পৃথিবী দখল করে নেবে’—এ বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। তিনি বলেন, ‘রোবট কি মানুষের জায়গা দখল করে নেবে? রোবট কিন্তু তার অনুকূল পরিবেশ না পেলে সে কিছু করতে পারে না; কিন্তু মানুষ তা পারে। নিজের বুদ্ধিকে শাণ দিতে হবে।’
আয়োজনে ‘জিন এবং ডিএনএ’—যে ভাষায় লেখা আমাদের গল্প’ নিয়ে কথা বলবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান। এ ছাড়া কার্টুন ও কমিকস নিয়ে কার্টুনিস্ট নাসরিন সুলতানা ‘কালিতুলিতে গল্পবিজ্ঞান’ নিয়ে কথা বলেন। গান পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ অন্তু।
জাতীয় বিজ্ঞান উৎসবে ৭০টির বেশি স্কুলের আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে প্রজেক্ট প্রদর্শনী ও বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতায়। প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি ক্যাটাগরিতে অংশ নিচ্ছে। আর কুইজের নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে রয়েছে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এবং মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে নবম থেকে দশম শ্রেণি ও ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে আয়োজনের সূচনা করেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও জেমস পেরেরা, বিকাশ লিমিটেডের ইভিপি অ্যান্ড হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট হুমায়ূন কবির, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
এ পর্বের বিজয়ীদের জন্য থাকছে ল্যাপটপ, ট্যাব, বই, বিজ্ঞান বাক্স, ট্রফি, মেডেল, সার্টিফিকেটসহ অনেক পুরস্কার। এ ছাড়া দিনব্যাপী থাকবে রোবট শো, সায়েন্স আনপ্লাগড (বিজ্ঞান বক্তৃতা), বিজ্ঞান ম্যাজিক, প্রশ্নোত্তর পর্ব, গান, তারকাকথনসহ অনেক আয়োজন।
বিজ্ঞান উৎসবের যেকোনো খবর জানতে চোখ রাখুন bigganchinta.com-এ, বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসব ও বিজ্ঞানচিন্তার ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে এবং প্রথম আলো ও বিজ্ঞানচিন্তার প্রিন্ট সংস্করণে।