রাজধানীর গুলশান এলাকায় আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজি করার অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক তিন নেতাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷ একই ঘটনায় আটক হওয়া আরও দুজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ৷
শনিবার রাতে পৃথক পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই পাঁচ নেতাকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে এই দুই সংগঠন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে পুনর্গঠিত কাঠামোতে চলছে৷ আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একটি অংশের উদ্যোগে গত ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ৷

শনিবার রাত আটটার দিকে গুলশান থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ৷ গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, গত ১৭ জুলাই গুলশানে শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিয়াদ, অপুসহ কয়েকজন৷ সেদিন বাসায় ছিলেন শাম্মী আহমেদের স্বামী৷ তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন রিয়াদ, অপুসহ অন্যরা৷ পরে শাম্মী আহমেদের স্বামী ১০ লাখ টাকা চাঁদাও দেন৷ পরে শনিবার রাত আটটার দিকে চাঁদার বাকি টাকা আনতে যান তাঁরা৷ পুলিশ আগে থেকে এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের আটক করে৷

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো.

সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তাঁদের সঙ্গে কোনো রকম সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনাও দেন তাঁরা৷

চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার অন্য দুজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে প্রথম আলোকে জানান রিফাত রশিদ৷ তিনি বলেন,‘চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমাদের নীতি জিরো টলারেন্স৷’

ছাত্রসংসদের দুই নেতা বহিষ্কার

শনিবার রাতে পৃথক দুটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের দুই নেতা স্থায়ী বহিষ্কারের কথা জানান গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও সদস্যসচিব জাহিদ আহসান৷ তাঁরা হলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ও সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান৷

দুটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে কতিপয় ব্যক্তি সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গেলে সেখানে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় নেতা জানে আলম অপু ও আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়৷ গঠনতন্ত্রের ধারা ৩.১ অনুযায়ী, সংগঠনের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও সদস্যসচিব জাহিদ আহসানের নির্দেশনায় তাঁদের সংগঠনের সব পর্যায়ের দায়িত্ব ও সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ছাত্রসংসদ অনুরোধ জানাচ্ছে৷

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও সদস য আহম দ র স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

আসামি শতবর্ষী ইদ্রিস শেখের আদালতে হাজিরা ও প্রিজন ভ্যানে যাত্রা

তখন সময় দুপুর ১২টা ৩ মিনিট। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৃতীয় তলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর এজলাস কক্ষ থেকে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে একজন পুলিশ সদস্য হাত ধরে সিঁড়ির কাছে নিয়ে যেতে থাকেন। সেই বৃদ্ধের ডান হাতে একখানা লাঠি। লাঠির ওপর ভর দিয়ে তিনি সিঁড়ির কাছে যেতে থাকেন।

সিঁড়ির কাছে যাওয়ার পর তিনি কোনোভাবেই সেই সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় আসতে পারছিলেন না। দুজন পুলিশ কনস্টেবল অশীতিপর এই বৃদ্ধের দুই বাহু ধরে রাখেন।

পরে ইদ্রিস শেখের দুই বাহু ধরে দ্বিতীয় তলায় আনা হয়। তখন ইদ্রিস শেখ হাঁপাচ্ছিলেন। পরে দুজন কনস্টেবল আবার ইদ্রিস শেখের দুই বহু ধরে রাখেন। এরপর খুব সাবধানে দুই তলার সিঁড়ি দিয়ে ইদ্রিস শেখ লাঠির ওপর ভর করে নিচতলায় নামেন। তৃতীয় তলা থেকে নিচতলায় নামতে ইদ্রিস শেখের সময় লেগেছে পাঁচ থেকে সাত মিনিট। ইদ্রিস শেখকে যখন নিচতলার সিঁড়ি দিয়ে হাজতখানার সামনে আনা হয়, তখন তাঁর ছেলে বাবুল শেখ কেঁদে ফেলেন।

বাবুল শেখ তখন চিৎকার দিয়ে বলে ওঠেন, ‘আমার বাবার বয়স এখন ১২০ বছর। এই ১২০ বছর বয়সেও আমার বাবাকে জেলের ঘানি টানতে হবে।’

প্রিজন ভ্যানে ইদ্রিস শেখ। মঙ্গলবার ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে

সম্পর্কিত নিবন্ধ