গাজীপুরের কালীগঞ্জে নুবহা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় কাদ্দিহান খন্দকার সাদ্দান (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 

স্বজনরা জানান, ফোঁড়া অপারেশনের ঘণ্টাখানেক পরই তার রক্তবমি শুরু হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় ঢাকায় নেওয়ার পর শিশুটির মৃত্যু হয়। 

সাদ্দান কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের যুবদল নেতা ও প্রকৌশলী খন্দকার ইমনের ছেলে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

শিশুটির পরিবার জানায়, গত ২০ জুলাই সন্ধ্যায় শিশুটি নিতম্বে ব্যথা অনুভব করলে তাকে নুবহা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তার ফোঁড়া হয়েছে, অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। 

ওই রাতেই গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.

মো. মাইনুল ইসলামের নেতৃত্বে মাত্র ১৫ মিনিটে ফোঁড়ার অপারেশন করা হয়।

অপারেশনের কিছুক্ষণ পরই শিশুর রক্তবমি শুরু হয় এবং দ্রুত অবনতি ঘটে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। পরে উত্তরার জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হলে ওইদিন রাত ৩টার দিকে মারা যায় শিশুটি।

স্থানীয়রা বলছেন, কালীগঞ্জে একাধিক প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে চলছে। সেগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে তেমন কোনো নজরদারি নেই। এতে চিকিৎসায় অবহেলা ও মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে।

শিশু সাদ্দানের নানা সৈয়দ আজহারুল আলম বুলবুল বলেন, “নুবহা হাসপাতালের দায়িত্বে অবহেলা ও ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার নাতি মারা গেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

শিশুটির বাবা খন্দকার ইমন বলেন, “অপারেশনের পরপরই আমার ছেলের রক্তবমি শুরু হয়। দ্রুত চিকিৎসা না দেওয়ার কারণেই আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

নুবহা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. মিলন মিয়া এ বিষয়ে বলেন, “শিশুটি আমাদের হাসপাতালে মারা যায়নি। মারা গেছে উত্তরায়।” চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনি হাসপাতালে আসেন, কথা হবে।” এ কথা বলে ফোন কেটে দেন।

অপারেশনের দায়িত্বে থাকা সার্জন ডা. মাইনুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “এখন আমি ব্যস্ত আছি, পরে ফোন দিব।” তবে তিনি পরে ফোন না দিয়ে এসএমএস করে জানান, “অ্যানাস্থেসিস্টকে কল করে বিস্তারিত জানুন।”

অপারেশনে অ্যানাস্থেসিয়া দেওয়া কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. এমরান হোসেন বলেন, “শিশুটিকে শুধু ঘুম পাড়িয়ে ফোঁড়ার অপারেশন করা হয়েছিল। এর দুই ঘণ্টা পর রক্তবমি শুরু হয়। চিকিৎসায় কোনো ভুল বা অবহেলা ছিল না।”

কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, “মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না থাকায় আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।”

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি প্রথম আপনার কাছে শুনলাম। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নুবহা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গাইনী চিকিৎসক রাহিমা সুলতানার ভুল চিকিৎসায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায়ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা/রফিক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ চ ক ৎসক অবহ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে লুক্সেমবার্গও

নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা কয়েকটি দেশ আগেই দিয়েছে। এবার সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার এ প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা তীব্র হওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

গত সোমবার রাতে লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েক মাসে (গাজায়) মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে একটি আন্দোলন গড়ে উঠছে। আন্দোলনকারীরা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নীতিকে (ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকটে) এখনো প্রাসঙ্গিক হিসেবে দেখার দাবি করছেন। লুক্সেমবার্গ সরকার ওই সব দেশের দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যারা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের নীতিতে আগামী সপ্তাহের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

আরও পড়ুনগাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল: জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন২০ ঘণ্টা আগে

ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্যোগের (ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি) তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সোমবার বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ হামাসকে আরও ‘উদ্দীপ্ত’ করছে।

এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন।

ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত সোমবার বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ হামাসকে আরও ‘উদ্দীপ্ত’ করছে।

এ হামলার অজুহাতে ওই দিন থেকেই গাজায় তাণ্ডব শুরু করেছে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৯০৫ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। হতাহতের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে বিবেচনা করে।

আরও পড়ুনফ্রান্স কয়েক মাসের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে: মাখোঁ০৯ এপ্রিল ২০২৫

ইতিমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তাঁদের ওপর জাতিগত নিধন চালিয়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের এর উসকানিদাতা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গত কয়েক মাসে (গাজায়) মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে।লুক ফ্রাইডেন, লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যে দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, সেগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও বেলজিয়ামের নামও আছে।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে ২২১ আইনপ্রণেতার চিঠি২৬ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে লুক্সেমবার্গও