তথাকথিত পৌরুষের বদলে ইসলাম থেকে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার ১০ উপায়
Published: 27th, July 2025 GMT
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অহংকারের পার্থক্য বোঝা জরুরি। আধুনিক সময়ে কিছু ভুল ধারণা, যেমন তথাকথিত ‘রেড পিল’ পুরুষত্ব আত্মবিশ্বাসকে অহংকারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মবিশ্বাস হলো নম্রতা ও নৈতিকতার সঙ্গে নিজের ক্ষমতায় বিশ্বাস, যা আল্লাহর প্রতি ভরসা থেকে উৎসারিত।
মুসলিম পুরুষেরা কীভাবে ইসলামি নীতির আলোকে অর্থপূর্ণ আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন, তার ১০টি উপায় আলোচনা করা হলো। এ পদ্ধতিগুলো কেবল ব্যক্তিগত উন্নতিই নয়, সম্প্রদায় ও সমাজের জন্যও কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।সুরা তালাক, আয়াত: ৩১.তাওয়াক্কুল: আল্লাহ ভরসা
ইসলামে আত্মবিশ্বাসের মূলে রয়েছে তাওয়াক্কুল, অর্থাৎ আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা। এটি এমন একটি মানসিকতা, যেখানে একজন পুরুষ নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করেন, কিন্তু ফলাফল আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেন। কোরআন বলে, ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩)
একজন অবিবাহিত পুরুষ বিয়ের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হলে নিজেকে অযোগ্য মনে করতে পারেন, যা তাঁর আত্মবিশ্বাস ক্ষুণ্ন করে। কিন্তু তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে তিনি বুঝবেন, এটি আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ, তিনি তাঁর জন্য উত্তম কিছু রেখেছেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করো, তবে তিনি তোমাদের রিজিক দেবেন, যেমন পাখিদের দেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৩৪৪)
আরও পড়ুনইন্দোনেশিয়ার ‘গ্রিন ইসলাম’-এর বার্তা১১ জুন ২০২৫২. নিজের শক্তি ও দুর্বলতা মূল্যায়নআত্মবিশ্বাস গড়তে আত্মসচেতনতা অপরিহার্য। কোরআন আমাদের নিজেদের সম্পর্কে চিন্তা করতে বলে, ‘তারা কি নিজেদের সম্পর্কে চিন্তা করে না?’ (সুরা রুম, আয়াত: ৮)।
নিজের শক্তি, দুর্বলতা, মূল্যবোধ ও বিশ্বাস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে একজন পুরুষ তাঁর জীবনকে ইসলামি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পারেন।
ধরা যাক, একজন পুরুষ বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারে যে তাঁকে গৃহস্থালির কাজ, রান্নার দক্ষতা বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনা শিখতে হবে। এ দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর উন্নতি করলে তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এ প্রক্রিয়া কেবল বিয়ের জন্য নয়, চাকরি, ফিটনেস বা অন্য কোনো ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
একজন পুরুষ বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারে যে তাঁকে গৃহস্থালির কাজ, রান্নার দক্ষতা বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনা শিখতে হবে।৩. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাশারীরিক ও মানসিক সুস্থতা আত্মবিশ্বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘একজন শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, তবে উভয়ই ভালো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৬৪)।
শারীরিক ফিটনেস একজন পুরুষকে তাঁর পরিবারের জন্য দীর্ঘজীবী ও সক্রিয় থাকতে, সন্তানদের সঙ্গে খেলতে এবং সম্প্রদায়ের সেবা করতে সক্ষম করে। মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অতীতের ট্রমা, যেমন পারিবারিক সমস্যা বা ব্যর্থ সম্পর্ক, মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
এ সমস্যাগুলো সমাধানে আত্মপর্যালোচনা বা প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত। মানসিক সুস্থতা একজন পুরুষকে তাঁর সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে সাহায্য করে এবং তাঁর আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।
৪. ইসলামি জ্ঞান অর্জনজ্ঞান আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান (ইলম) অর্জন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪)।
কোরআন, হাদিস ও ইসলামি শিক্ষার গভীর জ্ঞান একজন পুরুষকে তাঁর দ্বীনের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে এবং জীবনের সিদ্ধান্তে আত্মবিশ্বাসী করে।
ইসলামি জ্ঞান তাঁকে নৈতিক দ্বিধা সমাধানে, সম্প্রদায়ের সেবায় ও ইমানের প্রচারে সাহায্য করে। একজন পুরুষ যিনি কোরআনের তাফসির বা হাদিস শিখেছেন, তিনি জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আল্লাহর নির্দেশনার ওপর ভরসা করতে পারেন।
একজন শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, তবে উভয়ই ভালো।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৬৪এ জ্ঞান তাঁর আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জীবনযাপনে উৎসাহিত করে (ড. মুহাম্মদ আল-আরিফি, ইসতামতি’ বি–হায়াতিক, ২০১১, পৃ. ১৫০, দারুস সালাম, রিয়াদ)।
আরও পড়ুনইসলাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্ম২৪ জুলাই ২০২৫৫. সাজসজ্জা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতাসাজসজ্জা ও পরিচ্ছন্নতা আত্মবিশ্বাসের সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৭৯৯)।
একজন পুরুষ যখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ভালোভাবে সাজানো পোশাক পরেন এবং নিয়মিত সাজসজ্জা করেন, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাসী বোধ করেন।
নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, চুল কাটা বা পরিষ্কার পোশাক পরা একজন পুরুষকে সামাজিক পরিবেশে আরও স্বাচ্ছন্দ্য ও আত্মবিশ্বাসী করে। ব্যয়বহুল পোশাক নয়, পরিচ্ছন্নতা ও শালীনতার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ অভ্যাসগুলো একজন পুরুষের ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করে এবং তাঁর আত্মমর্যাদা বাড়ায়।
৬. ভয়ের মুখোমুখি হওয়াভয়ের মুখোমুখি হওয়া আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর একটি শক্তিশালী উপায়। ইসলাম আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসী হতে শেখায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী ব্যক্তি সেই নয় যে কুস্তিতে জয়ী হয়, বরং সেই যে ক্রোধের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১১৪)।
এখানে সাহস ও আত্মনিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব বোঝা যায়।
একজন পুরুষ যিনি কোরআনের তাফসির বা হাদিস শিখেছেন, তিনি জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আল্লাহর নির্দেশনার ওপর ভরসা করতে পারেন।একজন পুরুষ যখন তাঁর ভয়, যেমন প্রকাশ্যে কথা বলা, ব্যর্থতার আশঙ্কা বা সামাজিক দায়িত্ব মোকাবিলা করেন, তখন তিনি তাঁর মানসিক শক্তি বাড়ান। তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে তিনি জানেন যে আল্লাহ তাঁর সঙ্গে আছেন। এ অভিজ্ঞতা তাঁর আত্মবিশ্বাসকে অভূতপূর্বভাবে বাড়ায়।
৭. ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়াইসলামে ব্যর্থতাকে শেষ নয়; বরং শিক্ষার সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। কোরআন বলে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের পর স্বস্তি আছে।’ (সুরা শারহ, আয়াত: ৬)।
ব্যর্থতার সময় আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া এবং নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া একজন পুরুষকে আরও শক্তিশালী করে।
ধরা যাক, একজন পুরুষ ব্যবসায় ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি তাঁর ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে, নতুন দক্ষতা শিখে এবং আবার চেষ্টা করেন। এ প্রক্রিয়া তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে। কারণ, তিনি বুঝতে পারেন যে ব্যর্থতা সাময়িক, কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা ও আল্লাহর ওপর ভরসা স্থায়ী।
আরও পড়ুনইসলাম সম্পর্কে কীভাবে শিখবেন০৮ জুন ২০২৫৮. সাফল্য উদ্যাপনসাফল্য উদ্যাপন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যদি তা নম্রতা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে করা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, আল্লাহ তার নেয়ামত বাড়িয়ে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮১৪)।
শক্তিশালী ব্যক্তি সেই নয় যে কুস্তিতে জয়ী হয়, বরং সেই যে ক্রোধের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১১৪একজন পুরুষের উচিত তাঁর অর্জন, যেমন চাকরিতে পদোন্নতি, পড়াশোনায় সাফল্য বা পারিবারিক দায়িত্ব পালন—আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উদ্যাপন করা। এটি তাঁর আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং তাঁকে আরও বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।
৯. আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এমন দক্ষতা অর্জনকিছু দক্ষতা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে—
প্রকাশ্যে কথা বলা: জুমার খুতবা দেওয়া বা সম্প্রদায়ের সভায় বক্তৃতা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
অর্থ ব্যবস্থাপনা: আর্থিক স্বাধীনতা একজন পুরুষকে পরিবারের দায়িত্ব পালনে আত্মবিশ্বাসী করে।
নেতৃত্ব ও সমস্যা সমাধান: এ দক্ষতা তাঁকে সম্প্রদায়ের জন্য কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম করে।
আত্মরক্ষা: শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার জন্য এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
এ দক্ষতাগুলো শেখা একজন পুরুষকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ও আত্মবিশ্বাসী করে (মুহাম্মদ আল-শারাওয়ি, হাউ টু বি সাকসেসফুল, ২০১৩, পৃ. ৯৮, দারুল ফিকর, বৈরুত)।
একজন পুরুষের উচিত তাঁর অর্জন, যেমন চাকরিতে পদোন্নতি, পড়াশোনায় সাফল্য বা পারিবারিক দায়িত্ব পালন—আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উদ্যাপন করা।১০. আখলাকি গুণাবলিআখলাক বা নৈতিক গুণাবলি আত্মবিশ্বাসের মূল ভিত্তি। এর মধ্যে রয়েছে—
সততা (সাদাকাহ): সত্যবাদিতা সম্পর্কে শক্তিশালী করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
ধৈর্য (সবর): চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানসিক শক্তি দেয়।
কৃতজ্ঞতা (শোকর): আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
নম্রতা (তাওয়াযু): নম্রতা সম্পর্ককে সুন্দর করে ও আত্মমর্যাদা বাড়ায়।
ক্ষমা (আফও): ক্ষমাশীলতা মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস দেয়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি উত্তম নৈতিকতা পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮৯৫২)।
এসব গুণ একজন পুরুষকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী ও সমাজে সম্মানিত করে।
নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্ম করে।সুরা নাহল, আয়াত: ১২৮সারকথা
আত্মবিশ্বাস একটি গুণ, যা রাতারাতি অর্জিত হয় না। এটি নিয়মিত চর্চা ও ইসলামি নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতির ফল। তাওয়াক্কুল, আত্মসচেতনতা, শারীরিক-মানসিক সুস্থতা, জ্ঞান অর্জন, সাজসজ্জা, ভয় মোকাবিলা, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা, সাফল্য উদ্যাপন, দক্ষতা অর্জন ও আখলাকি গুণাবলি—এসবই একজন মুসলিম পুরুষকে আত্মবিশ্বাসী, নম্র ও কল্যাণকর জীবনযাপনে সহায়তা করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্ম করে।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১২৮)।
সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডটকম
আরও পড়ুনহীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে১৭ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: একজন প র ষ য র ওপর ভরস ত র জন য আল ল হ ত স জসজ জ দ র বল জ বন র বল ছ ন স ফল য ক রআন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে ১২৩ ‘চাঁদাবাজের’ তালিকা নিয়ে তোলপাড়
রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম সংবলিত একটি তালিকা রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক দিন থেকে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এতে বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম পরিচয় আছে। একইভাবে পতিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন ও জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে। বাকিগুলোর নাম ঠিকানা দেওয়া আছে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের সুবিধাবাদী বলা হয়েছে।
এই তালিকার ১৮ জনের নাম সম্প্রতি একজন আবাসন ব্যবসায়ীর দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় আছে। সেই মামলায় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের প্রধান আসামি করা হয়েছে। এই মামলার প্রতিবাদে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
এই তালিকা পুলিশের নাকি সরকারের অন্য কোনো সংস্থার তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে এক নেতা দাবি করেছেন, এই তালিকা পুলিশ করেছে। তিনি তালিকায় পুলিশের স্বাক্ষর দেখেছেন। তবে মানুষের হাতে হাতে যে তালিকা ঘুরছে তাতে পুলিশের কোনো স্বাক্ষর নেই।
তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গাজিউর রহমান আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ছাড়াও সরকারের অন্যান্য সংস্থা তালিকা করে থাকে। তালিকাটি তিনি দেখেননি। না দেখে বলতে পারবেন না। সরকারি কোনো সংস্থার তালিকা এভাবে ছড়িয়ে পড়ার কথা নয়। তবে তিনি মনে করেন, তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা যদি সত্যিই চাঁদাবাজ হয়ে থাকে তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনাদেরও উচিত পুলিশকে এদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই তো জনগণ রাস্তায় নেমেছিল। সেটা হওয়া দরকার। বিএনপির ওপর মহলও তো চাঁদাবাজদের সমর্থন করছে না।’
তালিকায় ছাত্রদলের এক নেতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের অনুসারীদের মামলার ভয়ভীতি ও বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে চাঁদাবাজি করেছেন তিনি। মহানগর বিএনপির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। মহানগর বিএনপির এক সদস্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, নগরের বোয়ালিয়া থানাধীন ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি করেন তিনি। নগরের ভুবনমোহন পার্কে সাইকেলের গ্যারেজ আছে। জামায়াতের একজনকে ‘ক্যাডার’ উল্লেখ করে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভূমি দখল ও কেনাবেচা, বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তিদের হুমকি-ধমকি ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা দিয়ে চাঁদা আদায় করেন তিনি। জামায়াতের আরও যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সবার নামে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাঁদের একজনের বিরুদ্ধে মাদক কারবারির অভিযোগ আনা হয়েছে।
আগে আওয়ামী লীগ বর্তমানে বিএনপি করেন এমন একজনকে দেশীয় অস্ত্রধারী ক্যাডার, গভীর রাতে রাস্তায় চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন থেকে চাঁদাবাজি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এই তালিকা দেখে হতবাক হয়েছেন। কোন সংস্থা বা কে করেছেন, জানা নেই, তবে সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, এই তালিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হতে পারে দু-একজন জড়িত, কিন্তু ঢালাওভাবে নাম দেওয়া-এটা হতে পারে না। কিছু কিছু লোককে তাঁরা চাঁদাবাজ হিসেবে চেনেন, তালিকায় তাঁদের নাম নেই। তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজদের শনাক্ত করা তো খুবই সোজা। দেখতে হবে কারা ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নামে ঢালাও মামলা করেছে। হয়তো পাঁচজন বা দশজন লোক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা নাম দিয়েছে ৪০০ জনের। যারা এই সব মামলার বাদী তারাই তো চাঁদাবাজ। তবে যারা অপরাধ করেছে তাদের নামে মামলা করা অপরাধ নয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় প্রশাসনের লোকজন কাকে ফিডব্যাক দিচ্ছে এটা বোধগম্য হচ্ছে না। তারা চাচ্ছে দেশে আবার স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। এটা তাদের চক্রান্তের একটা অংশ হতে পারে। এরা তিন-চারটা করে পদোন্নতি নিয়েছে। আগে আওয়ামী লীগ সাজতে গিয়েছিল, এখন ভালো মানুষ সাজতে যাচ্ছে। মুখোশধারী এরা।’ তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এই তালিকার বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। পুলিশ কমিশনার তাকে কোথাকার কী কল রেকর্ড-এই সব দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি পুলিশ কমিশনারকে বলেছেন, ‘আপনি তদন্ত করেন আবার।’
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, যাদের নাম তালিকায় আছে, তাঁদের সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ বয়কট করা হয়েছে। নেতাদেরও বলে দেওয়া হয়েছে কারও কাছে যেন তারা ঘেঁষতে না পারেন। এরপরেও সুযোগ পেলেই কারও পাশে দাঁড়িয়ে হয়তো ছবি তুলে প্রচার করে তাঁরা।