আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অহংকারের পার্থক্য বোঝা জরুরি। আধুনিক সময়ে কিছু ভুল ধারণা, যেমন তথাকথিত ‘রেড পিল’ পুরুষত্ব আত্মবিশ্বাসকে অহংকারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মবিশ্বাস হলো নম্রতা ও নৈতিকতার সঙ্গে নিজের ক্ষমতায় বিশ্বাস, যা আল্লাহর প্রতি ভরসা থেকে উৎসারিত।

মুসলিম পুরুষেরা কীভাবে ইসলামি নীতির আলোকে অর্থপূর্ণ আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন, তার ১০টি উপায় আলোচনা করা হলো। এ পদ্ধতিগুলো কেবল ব্যক্তিগত উন্নতিই নয়, সম্প্রদায় ও সমাজের জন্যও কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।সুরা তালাক, আয়াত: ৩১.

তাওয়াক্কুল: আল্লাহ ভরসা

ইসলামে আত্মবিশ্বাসের মূলে রয়েছে তাওয়াক্কুল, অর্থাৎ আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা। এটি এমন একটি মানসিকতা, যেখানে একজন পুরুষ নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করেন, কিন্তু ফলাফল আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেন। কোরআন বলে, ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩)

একজন অবিবাহিত পুরুষ বিয়ের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হলে নিজেকে অযোগ্য মনে করতে পারেন, যা তাঁর আত্মবিশ্বাস ক্ষুণ্ন করে। কিন্তু তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে তিনি বুঝবেন, এটি আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ, তিনি তাঁর জন্য উত্তম কিছু রেখেছেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করো, তবে তিনি তোমাদের রিজিক দেবেন, যেমন পাখিদের দেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৩৪৪)

আরও পড়ুনইন্দোনেশিয়ার ‘গ্রিন ইসলাম’-এর বার্তা১১ জুন ২০২৫২. নিজের শক্তি ও দুর্বলতা মূল্যায়ন

আত্মবিশ্বাস গড়তে আত্মসচেতনতা অপরিহার্য। কোরআন আমাদের নিজেদের সম্পর্কে চিন্তা করতে বলে, ‘তারা কি নিজেদের সম্পর্কে চিন্তা করে না?’ (সুরা রুম, আয়াত: ৮)।

নিজের শক্তি, দুর্বলতা, মূল্যবোধ ও বিশ্বাস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে একজন পুরুষ তাঁর জীবনকে ইসলামি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পারেন।

ধরা যাক, একজন পুরুষ বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারে যে তাঁকে গৃহস্থালির কাজ, রান্নার দক্ষতা বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনা শিখতে হবে। এ দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর উন্নতি করলে তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এ প্রক্রিয়া কেবল বিয়ের জন্য নয়, চাকরি, ফিটনেস বা অন্য কোনো ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

একজন পুরুষ বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারে যে তাঁকে গৃহস্থালির কাজ, রান্নার দক্ষতা বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনা শিখতে হবে।৩. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা আত্মবিশ্বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘একজন শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, তবে উভয়ই ভালো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৬৪)।

শারীরিক ফিটনেস একজন পুরুষকে তাঁর পরিবারের জন্য দীর্ঘজীবী ও সক্রিয় থাকতে, সন্তানদের সঙ্গে খেলতে এবং সম্প্রদায়ের সেবা করতে সক্ষম করে। মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অতীতের ট্রমা, যেমন পারিবারিক সমস্যা বা ব্যর্থ সম্পর্ক, মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

এ সমস্যাগুলো সমাধানে আত্মপর্যালোচনা বা প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত। মানসিক সুস্থতা একজন পুরুষকে তাঁর সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে সাহায্য করে এবং তাঁর আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।

৪. ইসলামি জ্ঞান অর্জন

জ্ঞান আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান (ইলম) অর্জন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪)।

কোরআন, হাদিস ও ইসলামি শিক্ষার গভীর জ্ঞান একজন পুরুষকে তাঁর দ্বীনের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে এবং জীবনের সিদ্ধান্তে আত্মবিশ্বাসী করে।

ইসলামি জ্ঞান তাঁকে নৈতিক দ্বিধা সমাধানে, সম্প্রদায়ের সেবায় ও ইমানের প্রচারে সাহায্য করে। একজন পুরুষ যিনি কোরআনের তাফসির বা হাদিস শিখেছেন, তিনি জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আল্লাহর নির্দেশনার ওপর ভরসা করতে পারেন।

একজন শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, তবে উভয়ই ভালো।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৬৪

এ জ্ঞান তাঁর আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জীবনযাপনে উৎসাহিত করে (ড. মুহাম্মদ আল-আরিফি, ইসতামতি’ বি–হায়াতিক, ২০১১, পৃ. ১৫০, দারুস সালাম, রিয়াদ)।

আরও পড়ুনইসলাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্ম২৪ জুলাই ২০২৫৫. সাজসজ্জা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা

সাজসজ্জা ও পরিচ্ছন্নতা আত্মবিশ্বাসের সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৭৯৯)।

একজন পুরুষ যখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ভালোভাবে সাজানো পোশাক পরেন এবং নিয়মিত সাজসজ্জা করেন, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাসী বোধ করেন।

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, চুল কাটা বা পরিষ্কার পোশাক পরা একজন পুরুষকে সামাজিক পরিবেশে আরও স্বাচ্ছন্দ্য ও আত্মবিশ্বাসী করে। ব্যয়বহুল পোশাক নয়, পরিচ্ছন্নতা ও শালীনতার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ অভ্যাসগুলো একজন পুরুষের ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করে এবং তাঁর আত্মমর্যাদা বাড়ায়।

৬. ভয়ের মুখোমুখি হওয়া

ভয়ের মুখোমুখি হওয়া আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর একটি শক্তিশালী উপায়। ইসলাম আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসী হতে শেখায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী ব্যক্তি সেই নয় যে কুস্তিতে জয়ী হয়, বরং সেই যে ক্রোধের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১১৪)।

এখানে সাহস ও আত্মনিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব বোঝা যায়।

একজন পুরুষ যিনি কোরআনের তাফসির বা হাদিস শিখেছেন, তিনি জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আল্লাহর নির্দেশনার ওপর ভরসা করতে পারেন।

একজন পুরুষ যখন তাঁর ভয়, যেমন প্রকাশ্যে কথা বলা, ব্যর্থতার আশঙ্কা বা সামাজিক দায়িত্ব মোকাবিলা করেন, তখন তিনি তাঁর মানসিক শক্তি বাড়ান। তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে তিনি জানেন যে আল্লাহ তাঁর সঙ্গে আছেন। এ অভিজ্ঞতা তাঁর আত্মবিশ্বাসকে অভূতপূর্বভাবে বাড়ায়।

৭. ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া

ইসলামে ব্যর্থতাকে শেষ নয়; বরং শিক্ষার সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। কোরআন বলে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের পর স্বস্তি আছে।’ (সুরা শারহ, আয়াত: ৬)।

ব্যর্থতার সময় আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া এবং নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া একজন পুরুষকে আরও শক্তিশালী করে।

ধরা যাক, একজন পুরুষ ব্যবসায় ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি তাঁর ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে, নতুন দক্ষতা শিখে এবং আবার চেষ্টা করেন। এ প্রক্রিয়া তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে। কারণ, তিনি বুঝতে পারেন যে ব্যর্থতা সাময়িক, কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা ও আল্লাহর ওপর ভরসা স্থায়ী।

আরও পড়ুনইসলাম সম্পর্কে কীভাবে শিখবেন০৮ জুন ২০২৫৮. সাফল্য উদ্‌যাপন

সাফল্য উদ্‌যাপন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যদি তা নম্রতা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে করা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, আল্লাহ তার নেয়ামত বাড়িয়ে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮১৪)।

শক্তিশালী ব্যক্তি সেই নয় যে কুস্তিতে জয়ী হয়, বরং সেই যে ক্রোধের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১১৪

একজন পুরুষের উচিত তাঁর অর্জন, যেমন চাকরিতে পদোন্নতি, পড়াশোনায় সাফল্য বা পারিবারিক দায়িত্ব পালন—আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উদ্‌যাপন করা। এটি তাঁর আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং তাঁকে আরও বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।

৯. আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এমন দক্ষতা অর্জন

কিছু দক্ষতা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে—

প্রকাশ্যে কথা বলা: জুমার খুতবা দেওয়া বা সম্প্রদায়ের সভায় বক্তৃতা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

অর্থ ব্যবস্থাপনা: আর্থিক স্বাধীনতা একজন পুরুষকে পরিবারের দায়িত্ব পালনে আত্মবিশ্বাসী করে।

নেতৃত্ব ও সমস্যা সমাধান: এ দক্ষতা তাঁকে সম্প্রদায়ের জন্য কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম করে।

আত্মরক্ষা: শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার জন্য এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

এ দক্ষতাগুলো শেখা একজন পুরুষকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ও আত্মবিশ্বাসী করে (মুহাম্মদ আল-শারাওয়ি, হাউ টু বি সাকসেসফুল, ২০১৩, পৃ. ৯৮, দারুল ফিকর, বৈরুত)।

একজন পুরুষের উচিত তাঁর অর্জন, যেমন চাকরিতে পদোন্নতি, পড়াশোনায় সাফল্য বা পারিবারিক দায়িত্ব পালন—আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উদ্‌যাপন করা।১০. আখলাকি গুণাবলি

আখলাক বা নৈতিক গুণাবলি আত্মবিশ্বাসের মূল ভিত্তি। এর মধ্যে রয়েছে—

সততা (সাদাকাহ): সত্যবাদিতা সম্পর্কে শক্তিশালী করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

ধৈর্য (সবর): চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানসিক শক্তি দেয়।

কৃতজ্ঞতা (শোকর): আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।

নম্রতা (তাওয়াযু): নম্রতা সম্পর্ককে সুন্দর করে ও আত্মমর্যাদা বাড়ায়।

ক্ষমা (আফও): ক্ষমাশীলতা মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস দেয়।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি উত্তম নৈতিকতা পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮৯৫২)।

এসব গুণ একজন পুরুষকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী ও সমাজে সম্মানিত করে।

নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্ম করে।সুরা নাহল, আয়াত: ১২৮

সারকথা

আত্মবিশ্বাস একটি গুণ, যা রাতারাতি অর্জিত হয় না। এটি নিয়মিত চর্চা ও ইসলামি নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতির ফল। তাওয়াক্কুল, আত্মসচেতনতা, শারীরিক-মানসিক সুস্থতা, জ্ঞান অর্জন, সাজসজ্জা, ভয় মোকাবিলা, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা, সাফল্য উদ্‌যাপন, দক্ষতা অর্জন ও আখলাকি গুণাবলি—এসবই একজন মুসলিম পুরুষকে আত্মবিশ্বাসী, নম্র ও কল্যাণকর জীবনযাপনে সহায়তা করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্ম করে।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১২৮)।

সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডটকম

আরও পড়ুনহীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে১৭ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একজন প র ষ য র ওপর ভরস ত র জন য আল ল হ ত স জসজ জ দ র বল জ বন র বল ছ ন স ফল য ক রআন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির