স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় নাগরিকেরা কোথায়
Published: 28th, July 2025 GMT
বাংলাদেশের স্থানীয় শাসনব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। এ প্রতিবেদনে প্রাসঙ্গিক অনেক বিষয় আলোচনা করা হলেও এ লেখায় আমি মূলত স্থানীয় শাসনব্যবস্থায়, বিশেষ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংঘবদ্ধ নাগরিকদের ভূমিকা নিয়ে কী বলা হয়েছে, তা পর্যালোচনা করব। একই সঙ্গে স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় সংঘবদ্ধ নাগরিকদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে ধারণাগত যুক্তি তুলে ধরব।
কমিশন রিপোর্টে নাগরিকদের উল্লেখ ও ভূমিকা: সংখ্যাতাত্ত্বিক চিত্র ও আমাদের পর্যবেক্ষণকমিশনের প্রায় তিন লাখ শব্দের এ প্রতিবেদনে নাগরিককেন্দ্রিক শব্দের ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। ‘ওয়ার্ড সভা’ (যা একটি ওয়ার্ডভিত্তিক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম) মাত্র দুটি স্থানে চার-পাঁচটি শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে ওয়ার্ড সভা ব্যবস্থায় জনগণের ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই।
নাগরিকদের ব্যক্তি বা সামষ্টিক ‘জবাবদিহি’ শব্দটি চার-পাঁচবার উল্লেখ করা হলেও স্থানীয় সরকার কীভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে, সেটির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বা প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হয়নি। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আশ্চর্যজনকভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা শব্দটি একবারও উল্লেখ করা হয়নি!
একইভাবে কমিশন রিপোর্টে বাজেট সম্পর্কে জনগণের আলোচনার পরিবেশ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হলেও বিদ্যমান পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমাদের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় নাগরিক অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার বিদ্যমান পদ্ধতি হলো ‘উন্মুক্ত বাজেট সভা’। এ বিষয়ের কোনো উল্লেখ কমিশন রিপোর্টে নেই।
বাজেট–প্রক্রিয়ায় জনগণ কীভাবে অংশ নেবেন, সে বিষয়েও কোনো আলোচনা নেই। কিছু জায়গায় স্থায়ী কমিটি পুনরায় কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। তবে সেখানে জনগণের অংশগ্রহণ (আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনায়) কীভাবে হবে, সেটার কোনো আইনগত ভিত্তি বা প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
দার্শনিক ও ধারণাগত ভিত্তি: কমিশন রিপোর্টে নাগরিকেরা কোথায়কমিশন বলছে, ‘গণতন্ত্র সত্যিকার অর্থে অভাবী, অশিক্ষিত, অসৎ সমাজে সহজে সফল হয় না।’
এখানে দুটি পর্যবেক্ষণ করা যায়: প্রথমত, রিপোর্টের এলিট মনোভাব এবং নাগরিকদের সক্ষমতার প্রতি খুবই দুর্বল আস্থা।
দ্বিতীয়ত, নাগরিকদের, বিশেষত গরিব নাগরিকদের, এজেন্সি বা সক্ষমতা নিয়ে সারা বিশ্বের অভিজ্ঞতা এবং সে–সংক্রান্ত গবেষণা ও তাত্ত্বিক আলোচনার ফলাফলের প্রতিফলন রিপোর্টে ঘটেনি।
বাংলাদেশের ওয়ার্ড সভার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, গ্রামের গরিব মানুষকে যখন সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তখন সভায় তাঁদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়, এমনকি কখনো কখনো স্বতঃস্ফূর্ত। এ বাস্তবতা এখানে পুরোপুরি আমলে আনা হয়নি।
এ ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচনী গণতন্ত্র ও সার্বিক সুশাসনের ব্যর্থতাকে গরিব ও নিরক্ষর মানুষের ঘাড়ে চাপানোটা বাস্তবতাবর্জিত চিন্তা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার কৌশলগত দিক থেকে একদমই অকার্যকর।
এর চেয়ে বরং দার্শনিক ও ধারণাগতভাবে যখন আমরা মেনে নেব যে সাধারণ মানুষের সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আছে এবং তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক স্বার্থ বুঝতে সক্ষম, তখনই আমাদের পক্ষে স্থানীয় পর্যায়ে এমন প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা করা ও গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা সাধারণ নাগরিকের সামষ্টিক স্বার্থ ও আশা–আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ করে দেবে। দুঃখজনকভাবে কমিশন এই দার্শনিক ও ধারণাগত ভিত্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়নি।
স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় কমিশন বর্তমানের প্রেসিডেনশিয়াল কাঠামো বাদ দিয়ে সংসদীয় কাঠামোর সুপারিশ করেছে। কমিশন এখানে কয়েকটি ধারণার ওপর ভিত্তি করে তাদের সুপারিশ দিয়েছে।
একটি ধারণা হলো এলিট রাজনৈতিক প্রতিনিধিরাই মূলত সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিয়ামক। এই রাজনৈতিক এলিটদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন—ক্ষমতাকে একজনের মধ্যে না রেখে তাঁদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে, যার অর্থ ‘এলিট সঞ্চালতা’ তৈরি করা।
কমিশন অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের (নাগরিকদের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র) প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেনি। আগের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, বর্তমানের প্রেসিডেনশিয়াল কাঠামো থেকে সংসদীয় কাঠামোতে গেলে শুধু এলিট সঞ্চালনাই হবে। এর অর্থ হচ্ছে, আমরা শাসনকাঠামোতে নতুন এলিট পাব।
এতে করে জনগণের কাছে জবাবদিহি কীভাবে বাড়বে আর ভালো সরকার কীভাবে পাওয়া যাবে, সেটা পরিষ্কার নয়। এই নতুন ও পুরোনো এলিটদের গোষ্ঠীতন্ত্রের উদ্ভব হতে বেশি দিন লাগবে না, যদি না একই সঙ্গে খুব কার্যকর সামষ্টিক নাগরিক জবাবদিহি তৈরি করা যায়।
কমিশনের মূল ঝোঁক নির্বাচনী গণতন্ত্রের দিকে। কিন্তু এই ‘এক দিনের গণতন্ত্র’ হলো ব্যক্তিনির্ভর; একে না হলে ওকে বেছে নেওয়ার সুযোগ (বাইনারি চয়েজ); মোটাদাগের জবাবদিহি; প্রার্থীর অতীত কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন (রেট্রোস্পেকটিভ ভোটিং) এবং প্রার্থীর কাছে ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা (প্রসপেকটিভ ভোটিং)। স্থানীয় নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এগুলো মূলত অপ্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে যদি আমরা দলনিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা ভাবি (স্থানীয় নির্বাচন অবশ্যই দলনিরপেক্ষ হতে হবে)।
কমিশন আরও বলেছে, ‘একক ব্যক্তির নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের স্থলে কর্তৃত্ব, ভূমিকা ও ক্ষমতা অনেকের মধ্যে বিতরণের একটি ব্যবস্থা করা গেলে শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের নতুন পরিসর সৃষ্টি করা যায় কি না, তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটা সুযোগ থাকা চাই।’
আমরা এখানে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি দেখছি। মেম্বার থেকে চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনার কথা ভেবে অতিধনী এলিটরা নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নামবে, যা বর্তমানে (মেম্বার নির্বাচনে) গ্রামীণ মধ্যবিত্তকেন্দ্রিক ছিল। এতে সামগ্রিক নির্বাচনী খরচ আকাশচুম্বী হবে এবং নিম্নমধ্যবিত্ত অথবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে গরিব মানুষের মেম্বার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রায় নির্বাসিত হবে।
প্রস্তাবিত সংসদীয় কাঠামোতে যাঁরা চেয়ারম্যান হতে চাইবেন, নির্বাচন-উত্তর পর্যায়ে তাঁদের রাজনৈতিক খরচ অনেক বেড়ে যাবে। কারণ, তাঁরা তখন অন্য মেম্বারদের ভোট কিনতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন।
প্রস্তাবিত নির্বাহী গ্রুপ তৈরির বিষয়টিও টাকার খেলায় পর্যবসিত হবে। সংসদীয় পদ্ধতিতে, আগেকার প্রেসিডেনশিয়াল ব্যবস্থা (২০১৬–এর আগে) চেয়ারম্যান ভোটারদের কাছে যে সরাসরি নির্বাচনী জবাবদিহির সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, সেটি আর থাকবে না।
প্রস্তাবিত নতুন ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ে টাকার রাজনীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটাবে এবং নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতির আরও অধঃপতন ঘটবে।
কমিশনের মূল ভাবনা রাজনৈতিক এলিটকেন্দ্রিক। কমিশন স্থানীয় প্রশাসনব্যবস্থার সর্বস্তরে রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছে। এতে কমিশন সর্বস্তরে রাজনৈতিক এলিটকেন্দ্রিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ভাবলেও কমিশনের চিন্তায়, এই স্তরগুলোতে সামষ্টিক নাগরিকদের প্রাতিষ্ঠানিকতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে।
একইভাবে কমিশন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের অ্যাসোসিয়েশনকে শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও নাগরিকদের প্রসঙ্গটি ভাবা হয়নি।
অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র: দার্শনিক ও ধারণাগত ভিত্তিকমিশনের বিপরীতে আমরা স্থানীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রবর্তনের ওপর জোর দিচ্ছি। গণতন্ত্র বলতে আমরা বুঝি জনগণের সার্বভৌমত্ব, যা বাস্তবায়িত হয় বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে: পরোক্ষ নির্বাচন, প্রত্যক্ষ নির্বাচন, আলোচনাপ্রসূত গণতন্ত্র এবং সামষ্টিক নাগরিকদের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র।
স্থানীয় পর্যায়ে এই সব কটিই থাকতে পারে, তবে গরিব জনসাধারণের জন্য শেষ দুটি পদ্ধতি অধিক কার্যকর হবে বলে আমরা মনে করি। এর মানে হলো, আমরা নাগরিক-প্রতিনিধিকে নাগরিকদের প্রতিনিধির চেয়ে অধিকতর গুরুত্ব দিতে চাই।
আমাদের প্রস্তাবে, সামষ্টিক নাগরিকেরা রাষ্ট্রের বাইরে ও ভেতরে—উভয় জায়গাতেই অবস্থান করবেন এবং শুধু জবাবদিহি আদায় করবেন না; বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতেও জড়িত থাকবেন।
বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রবর্তনের জন্য একটি বড় বাধা হচ্ছে প্রাসঙ্গিক আইনের অভাব। আমরা কমিশনের এ পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত। এখানে এমন কোনো আইন নেই, যার মাধ্যমে জনগণের সুপারিশ, মতামত বা বক্তব্যকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করে জনপ্রতিনিধিদের অনুসরণে বাধ্য করা যাবে।
বর্তমানে বিদ্যমান নাগরিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে নাগরিকদের ক্ষমতায়নবর্তমানে নাগরিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে নাগরিকেরা অতিমাত্রায় উপেক্ষিত হয়ে আছে। যেমন স্থায়ী কমিটিগুলোতে নাগরিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং তাদের ভূমিকা অনেকটা প্রতীকী। এগুলো মূলত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে।
আমরা মনে করি, নাগরিক প্রতিনিধিদের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার ভেতরে রাখতে হবে। এ বিষয়ে কমিশন কোনো বিস্তারিত আলোচনা করেনি। আমাদের বিবেচনায় ওয়ার্ড সভা এবং উন্মুক্ত বাজেট সভায় বর্তমানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক অংশগ্রহণ পদ্ধতির বদলে সামগ্রিক পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে।
এই দুটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে মূলত অকার্যকর: সভা ঘটার প্রামাণ্য কাগজপত্র প্রায় সব ক্ষেত্রেই বানানো; সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ নয়, যেহেতু এগুলোর বাস্তবায়নের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। এগুলোকে কার্যকর করতে হলে নিচ থেকে (সামষ্টিক নাগরিক দ্বারা) এবং ওপর থেকে (স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশন, স্থানীয় পরিষদের উপরিস্তরে সামষ্টিক নাগরিক ফোরাম এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা) নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়ার্ড সভাকে কোনোভাবেই উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না, যেমনটা কমিশন সুপারিশ করেছে। একে ওয়ার্ড পর্যায়েই রাখতে হবে। গরিব মানুষের জবাবদিহি আদায়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে একে যদি শক্তিশালী করতে হয়, তাহলে ব্যক্তি পরিচিতিভিত্তিক স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে এর অবস্থান থাকা জরুরি—কোনো দূরবর্তী ও নৈর্ব্যক্তিক বৃহত্তর সমাজে নয়। এতে স্থানীয় প্রতিনিধিরা পরিচিত নাগরিকদের কাছে আরও বেশি করে দায়বদ্ধ হতে বাধ্য হবেন।
কমিশনের ‘ভোটার সমাবেশ’ ধারণার সঙ্গে আমরা একমত নই। একসঙ্গে এতগুলো উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধির সমাবেশ সাধারণ নাগরিকদের বিভ্রান্ত করবে এবং এটি হবে একেবারেই নৈর্ব্যক্তিক ও দূরবর্তী।
সামষ্টিক নাগরিকদের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণনাগরিক-প্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করা যদি আমাদের লক্ষ্য হয়, তাহলে নাগরিক অ্যাসেম্বলির কথা ভাবতে হবে। এটি বর্তমানের ওয়ার্ড সভার রূপান্তর ঘটিয়ে করা যায় অথবা সম্পূর্ণ নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়।
স্থানীয় নাগরিকেরা লটারির মাধ্যমে অথবা বিশেষ বাছাইয়ের মাধ্যমে অ্যাসেম্বলিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন, যাতে সব ধরনের নাগরিক অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এটি রাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে কাজ করবে, সামষ্টিক জনগণের কাছে প্রতিনিধিদের দায়বদ্ধ করার জন্য।
স্থানীয় সরকারের সব স্তরে থাকা অ্যাসেম্বলিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট থাকবে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে এগুলো জাতীয় স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং কমিশনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এতে অ্যাসেম্বলিগুলো সাংবিধানিক বৈধতা এবং তার সঙ্গে এদের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে।
সামষ্টিক নাগরিকদের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণনাগরিক-প্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করা যদি আমাদের লক্ষ্য হয়, তাহলে নাগরিক অ্যাসেম্বলির কথা ভাবতে হবে। এটি বর্তমানের ওয়ার্ড সভার রূপান্তর ঘটিয়ে করা যায় অথবা সম্পূর্ণ নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়।
স্থানীয় নাগরিকেরা লটারির মাধ্যমে অথবা বিশেষ বাছাইয়ের মাধ্যমে অ্যাসেম্বলিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন, যাতে সব ধরনের নাগরিক অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এটি রাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে কাজ করবে, সামষ্টিক জনগণের কাছে প্রতিনিধিদের দায়বদ্ধ করার জন্য।
স্থানীয় সরকারের সব স্তরে থাকা অ্যাসেম্বলিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট থাকবে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে এগুলো জাতীয় স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং কমিশনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এতে অ্যাসেম্বলিগুলো সাংবিধানিক বৈধতা এবং তার সঙ্গে এদের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে।
ড.
মির্জা হাসান বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক
মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ সনব যবস থ য অ য স ম বল গ ল প ল য টফর ম জনগণ র ক ছ গণতন ত র র ব যবস থ য প রস ত ব প রক র য গত ভ ত ত র জন ত ক ক র যকর সরক র ক আম দ র র জন য পর য য র র জন গ রহণ রবর ত ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।
জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।
এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।
জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।
জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।