জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ না নিয়ে সংলাপ থেকে ওয়াকআউট করেছে বিএনপি।

সোমবার (২৮ জুলাই) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২০তম দিনের শুরুতে চার প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নিয়ে আলোচনার শুরুতেই ওয়াকআউট করে দলটি। 

বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ জানান, তারা আলোচনায় অংশ নেবেন না।

পরে আলী রীয়াজ বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা আলোচনায় উপস্থিত থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।”

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “একটি বড় দল আলোচনায় অংশ না নিলে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। আলোচনায় অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে গঠনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। এরপরও সাংবিধানিক ও আইন দ্বারা পরিচালিত পদগুলোতে নিয়োগ নিয়ে ভিন্ন ভাবনার প্রয়োজন নেই। এতে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা সীমিত হবে এবং তা রাষ্ট্র পরিচালনায় জটিলতা সৃষ্টি করবে।” 

ঢাকা/এএএম/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫% আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব বিএনপির

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ আসনের বাইরে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ দলীয় আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এসব আসনে নারীরা সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৯তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

কিছুসংখ্যক আসনে নারীরা যাতে সরাসরি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসতে পারেন, সে সুযোগ রাখা দরকার বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছিলাম—বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে ৮০-তে উন্নীত করা হোক। তবে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে যে কিছু আসনে সরাসরি নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই আমরা আজ প্রস্তাব দিয়েছি—আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যেন ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৫ শতাংশে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়।’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘যেহেতু আসন্ন নির্বাচনের আগে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ নেই, তাই এটা এখনই আইন নয়, বরং একটি জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্ট হতে পারে। তবে সংবিধান সংশোধনের পর আমরা চাই, ৩০০টি আসনের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ আসনে নারীরা সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তাহলে ৩০টি আসনে নারী প্রার্থী মনোনীত হবেন এবং সংরক্ষিত ৫০টি মিলে মোট ৮০টি আসনে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।’

এই প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে একসময় যেন পুরোপুরি সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীরা সংসদে আসতে পারেন এবং সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন না পড়ে, সেই লক্ষ্যেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান এই বিএনপি নেতা।

পুলিশ কমিশনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন নামে এটি কমিশন গঠিত হবে। শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে পুলিশ যাতে আইনানুগভাবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ‘কমিশনের গঠন, কার্যপরিধি, তদন্তপ্রক্রিয়া—সবকিছুই সংসদে পাস হওয়া আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। তবে কমিশন এই আইনের খসড়া প্রণয়নে যেসব পরামর্শ দিয়েছে, তা যেন বিবেচনায় নেওয়া হয়—সেই আহ্বান জানানো হয়েছে।’

পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সাধারণত বিভাগীয় তদন্ত ছাড়া আর কোনো প্রতিকারমূলক পথ না থাকায় জনগণ যেন স্বাধীনভাবে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে, এমন ব্যবস্থার কথাও আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রয়োজন হলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থাও রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮-এ বর্তমানে পঞ্চদশ সংশোধনীর ভিত্তিতে যে মূলনীতি রয়েছে, তার সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। বিএনপির অবস্থান হলো পঞ্চম সংশোধনীর সময় যে মূলনীতি (মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ) ছিল, সেটিই রাখা উচিত।

তবে বর্তমান সংলাপে সংযোজনের প্রস্তাব হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’—এই বাক্যাংশ যুক্ত করার প্রস্তাব উঠেছে এবং এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। তবে সংশোধনী হবে কি না, কীভাবে হবে—তা সংসদেই নির্ধারিত হবে বলে জানান সালাহউদ্দিন।

সংলাপে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির এ নেতা। তিনি বলেন,‘আমরা আগেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম—এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আজকে কমিশনও বলেছে, একজন ব্যক্তি যতবারই নির্বাচিত হোক, তাঁর মেয়াদ ১০ বছরের বেশি হতে পারবে না। এতে দেশে ফ্যাসিবাদ বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠার সুযোগ থাকবে না।’

নির্বাচন কমিশন গঠনেও অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিরোধী দল, সরকারি দল এবং বিচার বিভাগের একজন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি সাংবিধানিক কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। নাম বাছাইয়ের জন্য আলাদা সার্চ কমিটি থাকবে, যেখানে জনগণ, রাজনৈতিক দল, পেশাজীবীরা প্রস্তাব দিতে পারবেন। তবে কমিশন গঠনের চূড়ান্ত ক্ষমতা ওই সাংবিধানিক কমিটিরই থাকবে।’

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১টি স্থাপনার নাম বদল
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
  • মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
  • ওয়াকআউটের পর আবারো ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির যোগদান  
  • দিনলিপির দর্পণে তাজউদ্দীন আহমদ
  • সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫% আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব বিএনপির