জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততার অভিযোগ মিথ, বললেন মার্কিন সাবেক কূটনীতিক
Published: 28th, July 2025 GMT
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ড্যানিলুইৎজ বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত ছিল বলে প্রচার করে থাকে বিগত সরকার আর তার সমর্থকেরা। তাদের ওই প্রচারণা মিথ। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ড্যানিলুইৎজ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন। ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষিতে জুলাই বিপ্লবের তাৎপর্য: পেছন ফিরে দেখা, সামনে এগিয়ে চলা’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে এনএসইউর সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেনেভায় বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এবং এসআইপিজির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মুহাম্মদ সুফিউর রহমান। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান কীভাবে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে তা বলতে গিয়ে ২০০৭-০৮ সালের সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলের প্রসঙ্গ টানেন।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান জন ড্যানিলুইৎজ বলেন, গত জুলাই-আগস্টে এখানে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিল বলে বিগত সরকার আর তাদের সমর্থকেরা প্রচার করে থাকে। তাদের এই প্রচারণা মিথ। তিনি বলেন, ‘মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাইনি। আমি তাদের (বিগত সরকার আর তাদের সমর্থকেরা) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলেছি। কিন্তু তারা কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তনে যুক্ত ছিল না, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’
জন ড্যানিলুইৎজ গত আগস্টের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এক-এগারোর কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে বিশ্বাস করেন, যেসব ঘটনাপ্রবাহের কারণে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল। হয়তো আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের এতে কোনো ভূমিকা ছিল না। পরের দুই বছর বাংলাদেশের কাজের ধারা কেমন হবে, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখনকার সেনা নেতৃত্ব।’ তিনি বলেন, এর মানে কিন্তু এটা নয় যে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির আগের ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্বেগ ছিল না। এর মানে আবার এটাও নয় যে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত থেকে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করেনি।
ড্যানিলুইৎজ বলেন, ওই সময়কালের (এক-এগারো) প্রসঙ্গ এ জন্যই উল্লেখ করছেন, কারণ এখনকার (গত জুলাই-আগস্ট) পরিবর্তনের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততার কথা বলা হচ্ছে।
এসআইপিজির পরিচালক শেখ তৌফিক এম হক আলোচনায় সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান, এনএসইউ বিজনেস স্কুলের ডিন এ কে এম ওয়ারেসুল ইসলাম এবং বিজিএমওএ সভাপতি ফয়সল সামাদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন ত সমর থ আগস ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ বছর পর রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কেউ রইলেন না
ক্লাব বিশ্বকাপ খেলেই চলতি মাসে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এসি মিলানে যোগ দিয়েছেন লুকা মদরিচ। ক্রোয়াট কিংবদন্তির প্রস্থানে শূন্য হয়েছে রিয়াল–সমর্থকদের হৃদয় থেকে ক্লাবটির ড্রেসিংরুম। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের ট্রফি কেবিনেটে ২৮টি শিরোপায় ঘাম জমে আছে মদরিচের। তাঁর ব্যক্তিগত ট্রফি কেবিনেটও হয়েছে সমৃদ্ধ। রিয়ালে থাকতেই ২০১৮ সালে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। মদরিচের প্রস্থানের সঙ্গে রিয়ালেও ব্যালন ডি’অরজয়ী আর কেউ রইলেন না।
আরও পড়ুনসেই কলম্বিয়ার কাছে হেরেই কোপার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় আর্জেন্টিনার১ ঘণ্টা আগেচলতি শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে, অর্থাৎ গত ২৫ বছরে এমন কিছু কখনো দেখা যায়নি। আরেকটু ভেঙে বলা যায়, গত ২৫ বছরে রিয়ালের স্কোয়াডে এমন অন্তত একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। মদরিচের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আড়াই দশক পর ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য হয়ে পড়েছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। গত ২৫ বছরে ৮ জন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে ড্রেসিংরুমে পেয়েছে রিয়াল।
বর্ষসেরার ব্যক্তিগত পুরস্কার ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। সেবার জেতেন ব্ল্যাকপুলের ইংরেজ কিংবদন্তি স্ট্যানলি ম্যাথুজ। পরের তিনটি বছরেই এই ট্রফি উঠেছে রিয়ালের ঘরে। ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে জেতেন কিংবদন্তি আলফ্রেদো ডি স্টেফানো এবং তার মাঝখানে ১৯৫৮ সালে জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি রেমন্ড কোপা।
অবিশ্বাস্য ব্যাপার, এরপর চার দশকের বেশি সময় রিয়ালে ব্যালন ডি’অর জয়ী কাউকে দেখা যায়নি। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ২০০০ সালে ক্লাবটির সভাপতি হওয়ার পর ‘গ্যালাকটিকোস’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে দলে ভেড়ান বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের। সেই পথ ধরেই ২০০০ সালের জুলাইয়ে রিয়ালে নাম লেখান পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগো। সে বছরের ১৯ ডিসেম্বর ব্যালন ডি’অর জেতেন ফিগো এবং শুরু হয় রিয়ালের ২৫ বছরের ধারা—যেখানে ড্রেসিংরুমে অন্তত একজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে দেখা গেছেই।
আরও পড়ুনগার্দিওলার এ কোন চেহারা, ভাবনায় ফেললেন ভবিষ্যৎ নিয়েও১২ ঘণ্টা আগেফিগো যোগ দেওয়ার পরের বছর রিয়ালে নাম লেখান জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতায় সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি। ২০০২ সালে যোগ দেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও। ১৯৯৭ সালে ব্যালন ডি’অর জেতার পাশাপাশি ২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানোয় সে বছরও বর্ষসেরার এ ট্রফি জেতেন রোনালদো।
২০০৪-০৫ মৌসুমে রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ছিলেন চারজন—ফিগো, জিদান, রোনালদো ও মাইকেল ওয়েন। ফিগো ও ওয়েন ২০০৫ সালে রিয়াল ছাড়েন, রোনালদো ২০০৭ সালে। এর মধ্যেই অবশ্য ব্যালন ডি’অরজয়ী আরেকজনকে দলে ভেড়ায় রিয়াল। ২০০৬ সালে উড়িয়ে আনা হয় ইতালির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফাবিও কানাভারোকে। সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন কানাভারো। রোনালদোর প্রস্থানের পর প্রায় আড়াই বছর রিয়ালের স্কোয়াডে একমাত্র ব্যালন ডি’অরজয়ী হিসেবে দিন কেটেছে কানাভারোর।
কানাভারো রিয়াল ছাড়েন ২০০৯ সালে। সে বছরই ক্লাবটিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কাকা ও ২০০৮ সালে জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী করিম বেনজেমাও রিয়ালে নাম লেখান সে বছর (২০০৯)।
রোনালদো এরপর ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জেতেন ব্যালন ডি’অর। ২০১৮ সালের মে মাসে রোনালদো রিয়াল ছাড়েন। এরপর মাত্র কয়েক মাস ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য ছিল রিয়াল। শূন্যতাটা ঘুচে যায় সে বছরই ৩ ডিসেম্বর মদরিচ ব্যালন ডি’অর জেতায়। এরপর বেনজেমা ব্যালন ডি’অর জিতলেও ২০২৩ সালে তিনিও রিয়াল ছাড়েন। থেকে গিয়েছিলেন শুধু মদরিচ। তাঁর প্রস্থানের মধ্য দিয়ে রিয়ালে এখন ব্যালন ডি’অর জয়ী কেউ রইলেন না।
তবে ইঙ্গিত আছে জয়ের। গত বছর ব্যালন ডি’অর জয়ে রদ্রির সঙ্গে পেরে ওঠেননি রিয়ালের উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। যদিও চলতি বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা বেশ পিছিয়ে। কিন্তু নতুন কোচ জাবি আলোনসোর অধীন নিশ্চয়ই এ খরা ঘুচিয়ে ফেলবে রিয়াল—সমর্থকেরা সে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।