দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, সহিংসতা ও ‘মব জাস্টিসের’ বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও ‘মব জাস্টিস’ বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ সনাতনী শিক্ষার্থীবৃন্দ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

সমাবেশে অংশ নিয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌহার্দ্য দেব বলেন, ‘দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমানভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে। তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বারবার আক্রমণ চালানো হচ্ছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ১৭ বছরে আমরা বারবার সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা দেখেছি। মনে রাখতে হবে—ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সবার নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব। তিনি বলেন, সনাতনী ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর বারবার পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। সরকার যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ–মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে বের হয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদ, কলা অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রাঙ্গণ ঘুরে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমি কে তুমি কে, বাংলাদেশি বাংলাদেশি’, ‘ধর্মের নামে হানাহানি, বন্ধ করো বন্ধ করো’, ‘প্রটেক্ট মাইনোরিটি, প্রটেক্ট ডেমোক্রেসি’, ‘রংপুরে হামলা কেন ইন্টেরিম জবাব দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

আরও পড়ুনরংপুরে মহানবী (সা.

)–কে কটূক্তির অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার, ১৪টি বসতঘর ভাঙচুর২৭ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী