Prothomalo:
2025-09-17@21:07:13 GMT

বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে

Published: 29th, July 2025 GMT

আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। এ বছর বাংলাদেশে এই দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’। বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় পশু, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ‘টাইগার’ নামে পরিচিত, বাঘ সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লোগো। তাই বাংলাদেশ এ দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। বাংলাদেশে বাঘ ২০১৫–এর গণনায় ১০৬টি, ২০১৮তে ১১৪টি এবং সর্বশেষ ২০২৪–এর গণনায় ১২৫টি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের বাঘ নানামুখী হুমকির সম্মুখীন। এরপরও বাঘের সংখ্যা যে ঊর্ধ্বমুখী, এটি আশার সঞ্চার করে। এ জন্য বন বিভাগ ও সুন্দরবনের স্থানীয় জনগণকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।

সুন্দরবন বর্তমানে বাংলাদেশের বাঘের শেষ আশ্রয়স্থল। হরিণ বাঘের প্রধান খাদ্য। বাঘ বিজ্ঞানীরা বলেন, বাঘ শিকারের চেয়ে হরিণ শিকার বাঘের টিকে থাকার জন্য বিপজ্জনক। কারণ, পর্যাপ্ত খাবার না পেলে বাঘ দুর্বল হয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হারাবে এবং বাঘ-মানুষ সংঘাত বাড়বে।

এ মাসের ১৭ তারিখে সংবাদমাধ্যমে দেখলাম, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ির সদস্যরা একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ১০ কেজি হরিণের মাংসসহ দুজনকে আটক করেন। ছবিতে দেখলাম বস্তার গায়ে ঢাকার প্রাপকের নাম, ফোন নম্বর ও গন্তব্যস্থলের নাম লেখা আছে। বন বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবনের হরিণ শিকার বন্ধ হবে না, যত দিন এর চাহিদা থাকবে অন্যত্র। অথচ সবাই মিলে বন বিভাগকেই দায়ী করবে, ভোক্তাকে নয়।

দেশে বর্তমানে অনেক হরিণের খামার হয়েছে। খামার করলে বনের হরিণের ওপর চাপ কমবে এটিই ছিল হরিণ লালন–পালনের পক্ষে মুখ্য যুক্তি। কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে দেশে আজও হরিণের খামার আছে এবং বাড়ছে জানি না। সেদিন এক বন্ধু বললেন, কিছু শৌখিন মানুষ চেয়েছেন, তাই এটি হয়েছে। তবে সুন্দরবন থেকে এনে জীবন্ত হরিণ কেউ খামারে রাখবেন, এ দুঃসাহস কারও হবে না। বন্ধুকে বলতে পারিনি যে ২০১২ সারে সুন্দরবনের তিনটি বাঘের বাচ্চা তো ঢাকায় পাচার হয়েছিল। বন বিভাগের ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের বন্ধুরা অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির ভাগ্যে কী ঘটছে নিশ্চয়ই ভালো বলতে পারবেন। আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। ভারতে বন্য প্রাণীর খামার নিষিদ্ধ।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের চারপাশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ জানেন যে হরিণ শিকার এবং হরিণের মাংস ভক্ষণ আইনসম্মত নয়। এরপরও তাঁরা এ কাজটি করেন, যেহেতু হরিণের মাংস অনেক সময় অন্যান্য মাংসের চেয়ে সস্তায় পাওয়া যায়। কারণ, যিনি বিক্রি করেন, তাঁকে তো হরিণটি কিনতে হয়নি; অন্যান্য গবাদিপশু তো ক্রয় করে বিক্রয় করতে হয়। ভিয়েতনামে বন্য পশুপাখির মাংস দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা ছিল মর্যাদার প্রতীক। ফলে ভিয়েতনাম তার শেষ বাঘটিও হারিয়েছে ২০০০ সালের দিকে।

অনেকের ধারণা, সুন্দরবনের হরিণ ব্যাপকহারে বাড়ছে এবং গুটিকয় খেলেও ওরা হারিয়ে যাবে না। তাঁদের অবগতির জন্য জানাই, উত্তর আমেরিকায় ঘুঘুর মতো দেখতে একটি কবুতর—প্যাসেঞ্জার পিজন, যার সংখ্যা ছিল ৩০০-৫০০ কোটি। এরা দল বেঁধে যখন উড়ে যেত, মনে হতো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। আবাসস্থল নষ্ট হওয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত শিকারের কারণে মাত্র ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রজাতিটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল।

বাঘ সুন্দরবনের জন্য একটি কিস্টোন প্রজাতি। বাঘ টিকে থাকলে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রসহ জীববৈচিত্র্য নিজে থেকেই টিকে থাকবে, সুন্দরবন টিকে থাকবে। এলাকার জনগণ মনে করেন, ‘সুন্দরবন মায়ের মতো’—ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে, জীবন বাঁচায়, খাদ্য জোগায়। তাঁদের মতে, বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে, সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। বন বিভাগ এবং ওয়াইল্ডটিমের সহযোগিতায় সুন্দরবনের চারপাশের গ্রামগুলোতে ৪৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী বাঘ সংরক্ষণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্যরা, বাঘবন্ধুরা এবং টাইগার স্কাউটরা আমাদের সামাজিক মূলধন।

বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য আমাকে আশান্বিত করে। বাঘের সংখ্যা সুন্দরবনের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। সুন্দরবন ভালো থাকলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। এটি আমাদের জাতীয় সুখ সূচকের ওপরও প্রভাব বিস্তার করবে। দেশের সামগ্রিক সুখ ও মঙ্গল পরিমাপের এ ধারণাটি এসেছে ভুটান থেকে। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিকেও তাঁরা জাতীয় সুখ সূচকের প্রবৃদ্ধি হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশও সেই স্বপ্নের ‘সিল্ক রোডে’ এক পা ফেলল।

মো.

আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন ব স ন দরবন র বন ব ভ গ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী

অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়।  ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়। 

আরো পড়ুন:

কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির

অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প

বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।

বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে’
  • সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী