শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে আকর্ষণীয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক: শিক্ষা উপদেষ্টা
Published: 29th, July 2025 GMT
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে আকর্ষণীয় পরিবেশের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এমন এক পরিবেশ চাই, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাব ও বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভা ও আগ্রহের জায়গাগুলো অন্বেষণ করতে পারবে। সেইসঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি, চরাঞ্চল ও বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী উর্দুভাষীদের জন্যও শিক্ষা গ্রহণের পূর্ণ সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।’’
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে ২০২২ ও ২০২৩ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশনস (PBGSI) স্কিমের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ড.
তিনি আরও বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক আমাদের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে, তবে সেটি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে যুক্তিযুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত উপায়ে রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরা উচিত। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের সম্পদ সীমিত। তাই পরিকল্পিতভাবে এই সম্পদের ব্যবহার করেই আমাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। আর এ জন্য নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’’
সামাজিক বৈষম্য ও প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমাদের অভিভাবকরা দেশের কয়েকটি নামকরা স্কুলে সন্তানদের ভর্তির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আমরা যদি দেশের সব স্কুলকে মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে এই অযথা প্রতিযোগিতা দূর হবে।’’
তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী শিক্ষা-পরিবেশ তৈরি করার কথাও বলেন, যাতে অভিভাবকেরা নিশ্চিন্তে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারেন।
কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে ড. আবরার বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের অনেক অভিভাবক এখনো কারিগরি শিক্ষাকে অবহেলার চোখে দেখেন। অথচ বাস্তবতা হলো, কর্মসংস্থান তৈরির অন্যতম মাধ্যম এই কারিগরি শিক্ষা। আমাদের এখনই এ বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।’’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. খ ম খবিরুল ইসলাম, সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, মো. মজিবর রহমান, সচিব (রুটিন দায়িত্ব), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, সৈয়দ মামুনুল আলম, অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং নুজহাত ইয়াসমিন, অতিরিক্ত সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
অনুষ্ঠানে দুই বছরের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
ঢাকা/এএএম//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন র জন য আম দ র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।