‘কীসের ভিত্তিতে পুরস্কার নিচ্ছেন, নিজেকে প্রশ্ন করেছেন’
Published: 30th, July 2025 GMT
শোবিজ অঙ্গনে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান ঘিরে নানা সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কখনো শিল্পীদের অংশগ্রহণ নিয়ে, আবার কখনো পুরস্কার দেওয়ার মানদণ্ড নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।
সম্প্রতি একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এরই মধ্যে পুরস্কার নিয়ে সরব হলেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ওমর সানী।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে ওমর সানী লেখেন, “কীসের ভিত্তিতে পুরস্কার দিচ্ছেন? আর আপনি কীসের ভিত্তিতে পুরস্কার নিচ্ছেন—নিজেকে প্রশ্ন করেছেন?”
আরো পড়ুন:
জায়েদ খানের অতিথি মোনালিসা
যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা
ক্ষুব্ধ ওমর সানী লেখেন, “একটা ফাইজলামি শুরু হয়েছে। শুধু শো ডাউন।”
ওমর সানীর এই পোস্টে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তিনি বর্তমান সময়ের পুরস্কার প্রদানের স্বচ্ছতা ও গুরুত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
শুধু বিনোদনমূলক প্রদর্শনী নয়, কিছু কিছু আয়োজন পুরস্কারকে হাস্যকর একটি খেলায় পরিণত করেছে—এমনই ইঙ্গিত ওমর সানীর। শুধু শিল্পীর উপস্থিতি, লালগালিচা আর ক্যামেরার ঝলক নয়—পুরস্কারকে মূল্যবান একটি স্বীকৃতি হিসেবে দেখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
ওমর সানী এর আগেও সমসাময়িক নানা বিষয় ও শিল্পীসত্ত্বা নিয়ে খোলামেলা মত দিয়েছেন। এবারের পোস্টেও তার ভঙ্গি ছিল সরাসরি এবং স্পষ্ট।
ওমর সানীর পোস্টে অনেকেই সমর্থন জানাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার এর বিপরীতে অবস্থান নিচ্ছেন। একজন লেখেন, “ঠিক কথাই বলেছেন সানী ভাই!” আবার কারো মন্তব্য, “সবসময় নেতিবাচক দেখলে হবে না, ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র প রস ক র ওমর স ন
এছাড়াও পড়ুন:
তোমার পছন্দই তোমার পরিচয়
জে কে রাউলিং জীবনে কম দুর্ভোগ পোহাননি। ব্রিটেনে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। জন্মের পর বাবার বদলির চাকরির সুবাদে বারবার স্থান বদলের ফলে দীর্ঘস্থায়ী কোনো বন্ধু পাননি শৈশব-কৈশোরে। সময় একা একা কাটত। পড়াশোনায়ও ভালো ছিলেন না। মা মারা গেলেন। ডিপ্রেশন কাজ করত। পাড়ায় পটার নামের একটা ছেলের সঙ্গে পরিচয়। ‘পটার’ নামটি তাঁর পছন্দ হয়। কিন্তু পটারকে তেমন নয়। কারণ, ওই পটার ছিল খুবই সাদামাটা চরিত্রের। কিন্তু অদ্ভুত সব কথা বলত। যেমন একদিন বলেছিল, ‘দেখো দেখো, একদল মানুষ আকাশে দানবের মতো উড়ে যাচ্ছে।’ রাউলিং তাকিয়ে দেখেন তেমন কিছু নয়। কিন্তু পটারের এই অসীম ফ্যান্টাসির জগৎ প্রথম তাঁর সসীম মাথায় ঢুকে গেল।
মা মারা যাওয়ার পর ব্রিটেন ছেড়ে পর্তুগালে শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে চলে আসেন। সেখানেই পরিচয় পর্তুগিজ সাংবাদিক জর্জ আর্নেটসের সঙ্গে। প্রেম ও বিয়ে। সেই বিয়ে টেকেনি। কিন্তু তত দিনে এক সন্তানের মা। সেই কন্যাসন্তান জেসিকাকে নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে ফিরে এসে থাকতে শুরু করেন। আর্থিক অনটন। সে সময়ই এক বিকেলে হলিরুড পার্কে যান। সেখানে সেন্ট মার্গারেটস লোচ নামের হ্রদের পাশে বসে ছিলেন। পাশেই দুই বৃদ্ধ লোকের মধ্যে আলাপ হচ্ছিল। এক বৃদ্ধ আরেক বৃদ্ধকে বলছিলেন, ‘বাস্তবে জীবন কখনোই আনন্দের নয়। আবার জীবন থেকে পালিয়ে থাকাও কাজের নয়। জীবন যেভাবে আসে, সেভাবে মেনে নেওয়াই ভালো।’ সে সময় দ্বিতীয় বৃদ্ধ জানতে চান, ‘কিন্তু আমার পরিচয় কী যে জীবনকে মেনে নেব? একসময় আমরা ব্রিটিশ ছিলাম, এখন স্কটিশ।’ জবাবে প্রথম বৃদ্ধ বলেন, ‘তোমার পছন্দই তোমার পরিচয়।’
রাউলিং টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া একটা ইন্টারভিউয়ে এসব তুলে ধরেছেন। ‘হ্যারি পটার’ লিখতে গিয়ে তিনি জাদুর শহরে গেলেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ফ্যান্টাসি জগৎ লেখকদের জন্য অফুরন্ত কল্পনার সুযোগ সৃষ্টি করে। আমি জাদু, ডাইনি, জাদুকর এবং বিভিন্ন কাল্পনিক প্রাণী ও স্থানের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও বিস্তারিত জগৎ তৈরি করেছি মাত্র।’
‘হ্যারি পটার’ সিরিজেও দেখা যায়, হ্যারি যখন নিজের ওপর সন্দেহ করে, তখন ডাম্বলডোর বলে, ‘তোমার পছন্দই তোমার পরিচয়।’ জাদুর জগৎ অর্থাৎ লেখায় উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডের ব্যবহার প্রসঙ্গে রাউলিং বলেন, ‘অনেক সময় একমাত্র কল্পনাই আপনাকে বিজয়ী করতে শেখাবে। কল্পনা করা সৃষ্টিশীলতার উচ্চতর পর্যায়। সেই কল্পনাও বাস্তব–বিচ্ছিন্ন নয়। যেমন হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অব আজকাবানের ডিমেন্টরদের চরিত্র। এরা জেলখানা আজকাবানের প্রহরী, বন্দীদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস শুষে নিয়েই বেঁচে থাকে। বন্দীদের অসহায়ত্ব দেখে হাসে। তাদের সেসব হাসি আবার অন্য সাধারণ মানুষের কাছে বিকৃত ও ভয়ংকর। ভীত করে। নিষ্ঠুর মনে হয় সেসব হাসি। কিন্তু এটা তো বাস্তব যে অন্যের অসহায়ত্বে মানুষই হাসে।’
কল্পনাও বাস্তব–বিচ্ছিন্ন নয়। যেমন হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অব আজকাবানের ডিমেন্টরদের চরিত্ররা জেলখানা আজকাবানের প্রহরী, বন্দীদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস শুষে নিয়েই বেঁচে থাকে। বন্দীদের অসহায়ত্ব দেখে হাসে। এটা তো বাস্তব যে অন্যের অসহায়ত্বে মানুষই হাসে।জে কে রাউলিংএমা ওয়াটসনকে দেওয়া অন্য ইন্টারভিউয়ে জে কে রাউলিং বলেন, ‘“হ্যারি পটার”-এ দেখোনি হারমায়োনিকে? আমি সত্যিই চেয়েছিলাম যে সে নায়িকা হোক। সে আমার অংশ, যদিও সে পুরোপুরি আমার নয়। আমার মনে হয়, আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন হয়তো মানুষের কাছে নিজেকে এমনই দেখাতাম। কিন্তু আসলে আমি ভেতরে মোটেই তেমন ছিলাম না। আমি হারমায়োনি ও রন সম্পর্কটি ইচ্ছা পূরণের একটি রূপ হিসেবে লিখেছিলাম।’
এমা ওয়াটসন জানতে চান, ‘হ্যারি পটার’–এ কতটুকু আপনার জীবন রয়েছে? উত্তরে বলেন, ‘একজন লেখক তো বিষয় আকাশ থেকে পান না। বাস্তব আর তাঁর কল্পনাতেই পান। সেই কল্পনাও তাঁর বাস্তব জীবন থেকে সৃষ্ট। যেমন আমার বয়স যখন চার বছরের মতো, তখন আমি যে স্কুলে পড়তাম সেই সেন্ট মাইকেলস প্রাইমারি স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন আলফ্রেড ডান। অ্যালবাস ডাম্বেলডোরের চরিত্রটি আমি চিত্রিত করেছি আমার অধ্যক্ষ আলফ্রেড ডানকে ঘিরেই। কিংবা হারমায়োনি গ্রেঞ্জার যে এত বই পড়ে “হ্যারি পটার”-এ, সেটা আমিই পড়তাম শৈশবে। জাদুর স্কুল হগওয়ার্টসের নাম আমার মাথায় আসে হগওর্ট নামের একটি গাছ দেখে, যেটি ছিল দ্য রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেনে।
‘উইজার্ড এলিমেন্টারি স্কুল তো আমারই স্মৃতি। ড্রেকো ম্যালফয় যখন “হ্যারি পটার”–এ হারমায়োনিকে মাডব্লাড গালি দেয়, সে রকম গালি আমিও খেয়েছিলাম। মানে হারমায়োনি গ্রেঞ্জার, মোনি মার্টল, লিলি ইভান্স—এ চরিত্রগুলো এসেছে “মাগলবর্ন” হয়ে। মাগলবর্ন তারাই, যারা জাদুকর নয়, একেবারেই সাধারণ মানুষ। তার মানে সাধারণের পরিবারেও জাদুকরের জন্ম হতে পারে। এর উত্তরও দিয়েছি। স্কুইবদের দেখেন, স্কুইবরা হলো মাগলবর্নদের বিপরীত, অসাধারণ। কিন্তু সে রকম পরিবারে জন্ম নিয়েও অনেকে জাদুকর হতে পারে না। তারা হয়ে যায় মাগলবর্ন। সাধারণ।’
অন্য আরেকটি ইন্টারভিউয়ে রাউলিংকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি নিজের জন্য লেখেন, নাকি পাঠকের জন্য? উত্তরে রাউলিং সিরিল কোনোলিকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘নিজস্বতা খুইয়ে নিছক পাঠকের জন্য লেখার চেয়ে পাঠক হারিয়ে নিজেকে নিজের মতো রাখা ভালো।’
অদেখাকে দেখার একটা অনন্য সুযোগ করে দেয় কল্পনাশক্তি। এই শক্তির জোরেই নতুন নতুন আবিষ্কার হয়, উদ্ভাবন হয়। ‘হ্যারি পটার’ হচ্ছে মানুষের সেই অদেখা ভুবনের কল্পনাশক্তি, যা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়।একটা তথ্যচিত্রে দেখা যায়, নিজের পুরোনো ঠিকানায় (যে বাড়িতে বসে তিনি ‘হ্যারি পটার’ লিখেছিলেন) ফিরে আবেগপ্রবণ হয়ে রাউলিং কাঁদছেন। এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লেখক হওয়া সত্ত্বেও শুরুর দিনগুলো তিনি ভুলে যাননি। রাউলিং বিশ্বাস করেন, শিকড়ের কথা মনে রাখলে মানুষ বিনয়ী হয়। শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কখনোই কিছু করা যায় না।
তিনি মনে করেন, অদেখাকে দেখার একটা অনন্য সুযোগ করে দেয় কল্পনাশক্তি। এই শক্তির জোরেই নতুন নতুন আবিষ্কার হয়, উদ্ভাবন হয়। ‘হ্যারি পটার’ হচ্ছে মানুষের সেই অদেখা ভুবনের কল্পনাশক্তি, যা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের মূল মেসেজ, ভলডেমর্ট ও তার অনুসারীদের মাধ্যমে মূর্ত হওয়া অন্ধকার শক্তির বিরুদ্ধে হ্যারি ও তার বন্ধুদের লড়াই। এ লড়াইয়ে জয়-পরাজয় মানুষের ভেতরের ভালো ও খারাপের দ্বন্দ্বকেই তুলে ধরে।
এই সিরিজে আছে জিঞ্জার উইচ। যে দশকের পর দশক ধরে জাদুময় জগতে ত্রাস ছড়িয়ে এসেছে। হ্যারির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। আছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ, যারা সিবিল ট্রিলনির সব ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস করে। ‘দ্য চুজেন ওয়ান’—এটাই তাদের বেছে নেওয়ার পরিণতি। রাউলিংয়ের জিঞ্জার উইচ বা ভলডেমর্ট বর্তমান সমাজে ফ্যাসিস্টেরই আদল আর ট্রিলনির ‘দ্য চুজেন ওয়ান’ হয় এটা নয় ওটা—এরকম একটা ভয় দেখানো হুমকি।
কিন্তু এসবের বাইরে হ্যারি পটারে আরও অনেক বিষয় আছে যা মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। যেমন, সিরিজের প্রথম বইয়ে যখন হ্যারি পটার সেই আয়না আবিষ্কার করে যা তাকে তার হৃদয়ের গভীরতম আকাঙ্ক্ষা দেখায় এবং সে নিজেকে তার বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে দেখতে পায়, তখন হ্যারি পটার নিয়মিত আয়না দেখতে শুরু করে। ডাম্বলডোর বুঝতে পারে, হ্যারি কী করছে। তখনই সে হ্যারিকে মনে করিয়ে দেয়, ‘স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকতে গিয়ে বেঁচে থাকাটাই ভুলে যাওয়া ঠিক নয়, মনে রেখো।’
যারা জগতে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা প্রায়শই জগতকে এমনভাবে দেখেন যেভাবে অন্যরা (যারা ক্ষতিগ্রস্ত হননি) দেখেন না। হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্সে শুধুমাত্র হ্যারি, নেভিল এবং লুনা থিস্ট্রাল দেখতে পায়। থিস্ট্রাল হ্যারি পটার সিরিজের একটি কাল্পনিক প্রাণী। একধরনের ডানাযুক্ত ঘোড়া, কিন্তু কেবল সেই ব্যক্তিরাই প্রাণীটিকে দেখতে পায় যারা মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছে। অনেক শিক্ষার্থী থিস্ট্রালকে ভয় পায় এবং এটাকে একটা অশুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু হ্যাগ্রিড তাদের ব্যাখ্যা করে, ভালো বা খারাপ যে কোনো চরিত্রেরই মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুকে মেনে নিয়েই বাঁচতে হয়। দুঃখ করতে নেই।
রাউলিং যেমন শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার কথা বলেন তেমনি নতুনভাবে বাঁচার কথাও বলেন। যে রাউলিং প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের পর ডিপ্রেসনে চলে গিয়েছিলেন, সেই রাউলিংই পরে ড. নীল মারেকে বিয়ে করেন। প্রথম সংসারের কন্যা জেসিকা ছাড়াও, রাউলিংয়ের আরও দুটি সন্তান রয়েছে এবং তিনি সুখী একজন মানুষ।