Prothomalo:
2025-07-31@07:28:30 GMT

মানুষ কি আসলেই স্বার্থপর

Published: 30th, July 2025 GMT

বিজ্ঞান বলছে, আমরা জন্মগতভাবে পরোপকারী। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি সত্যিই সব সময় অন্যদের কথা ভাবতে বাধ্য?

উড়োজাহাজ উড়াল দেওয়ার আগমুহূর্তে যাত্রীদের সচেতন করার জন্য নিরাপত্তাবিষয়ক কিছু ঘোষণা দেওয়া হয়। যেমন ‘স্বাগতম’ এবং ‘এই বাঁশিটি বাজিয়ে সাহায্য চান’। এসবের মাঝখানে বলা হয়, ‘আগে নিজের অক্সিজেন মাস্ক পরুন, তারপর অন্যকে সাহায্য করুন।’

এই কথাকে বলা চলে ‘স্বার্থপরতা’ দেখানোর একরকম আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা। যদি আপনি আকাশে ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায় এবং ঘণ্টায় ৫৫০ মাইল গতিতে থাকা অবস্থায় কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পড়েন, তাহলে এ নির্দেশনা ভালো কাজে দেবে।

ধরুন, পরিস্থিতি এমন হলো যে হঠাৎ করে কেবিনের ভেতরে চাপ কমে গেল। এই পরিস্থিতিতে যদি আপনি আগে নিজের অক্সিজেন মাস্ক না পরেন, তাহলে হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন। আর তখন আপনি আর কাউকে সাহায্য করার মতো অবস্থাতেই থাকবেন না।

বিজ্ঞান বলছে, আমাদের বেশির ভাগের মধ্যেই নিঃস্বার্থ হওয়ার স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। কখনো কখনো তা আশ্চর্য রকমের বেশি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা সব সময় নিঃস্বার্থ হতে পারি বা হওয়া উচিত।

কিন্তু অন্যভাবে ভেবে দেখলে, এই কথাটাতে অনেকে ভুল বার্তাও পেতে পারেন। আজকের দুনিয়ায় যেখানে আত্মকেন্দ্রিক মানুষদেরই অনেক সময় বেশি সফল বলে মনে হয়, সেখানে এই লাইন যেন বলছে, সব সময় আগে নিজের কথা ভাবো আর নিজের স্বার্থই সবচেয়ে বড়।

সামাজিক মনোবিজ্ঞানী গির্ট হফস্টেডের মতে, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা হলো মানুষ কতটা নিজেকে স্বাধীন মনে করে, সেটির পরিমাপ। অর্থাৎ বড় একটি গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল থাকার বিপরীত দৃশ্য এটি।

বিশ্বের অনেক জায়গায়, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রবণতা দিন দিন প্রবল হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি ভালো, না খারাপ?

লিডস বেকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক স্টিভ টেলর বলেন, ‘শুধু সেলফিশ জিন’ ও ‘নিও-ডারউইনিজম’ তত্ত্বই নয়; মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও জীববিজ্ঞানের বেশ কিছু তত্ত্ব এই বিশ্বাসকে স্বাভাবিক করে তুলেছে যে প্রতিযোগিতা মানেই মানুষ স্বভাবতই নিষ্ঠুর, নির্মম বা স্বার্থপর।

তবে টেলর এটাও মনে করেন যে মানুষ অবশ্যই স্বার্থপর হতে পারেন। কারণ, আমাদের মস্তিষ্কের প্রথম কাজই হলো আমাদের বাঁচিয়ে রাখা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো আরও আশাব্যঞ্জক কথা বলছে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যে সব সময় নিজের কথাই আগে ভাবেন, এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়।

আমরা কখন নিজের কথা আগে ভাবি আর কখন অন্যের কথা আগে ভাবি, তা অনেকটাই পরিস্থিতি, আমাদের আগের অভিজ্ঞতা এবং সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে।

১৯৬০-এর দশকে ‘বাইস্ট্যান্ডার ইফেক্ট’ নামের একটি তত্ত্ব আলোচনায় আসে। এই তত্ত্বে বলা হয়, কেউ বিপদে পড়লে আশপাশের মানুষেরা খুব কমই এগিয়ে যান। ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্কে কিটি জেনোভেস নামের ২৮ বছরের এক নারী বারকর্মীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর তত্ত্বটি দেওয়া হয়েছিল। তত্ত্ব অনুসারে, কিটি জেনোভেসকে হত্যার দৃশ্যটি প্রায় ৪০ জন মানুষ দেখেছেন, কিন্তু কেউই তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি।

‘বাইস্ট্যান্ডার ইফেক্ট’-এর পেছনের ঘটনাটি নিয়ে যে গল্প সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে, তার শেষাংশ এখন অনেকটাই বিতর্কিত বলে ধরা হয়। হ্যাঁ, কিটি জেনোভেসকে যে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল, এটা সত্যি এবং তা মর্মান্তিক। তবে তদন্তে দেখা গেছে, ৩৮ জন নির্লিপ্ত প্রত্যক্ষদর্শীর কথাটি সত্য নয়। ২০০৭ সালের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনোভেসের হত্যাকাণ্ড যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা কেউই কিছু করেননি, এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।

গবেষকেরা মনে করেন, এই গল্প একধরনের আধুনিক উপকথা হয়ে গেছে। তাঁদের মতে, এ ধারণা আসলে জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের সহানুভূতি বা সাহায্য নিয়ে আরও গভীরভাবে গবেষণার সুযোগকে সীমিত করে দিয়েছে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক পরিস্থিতিতে মানুষ আসলে নিজের নিরাপত্তার চেয়েও অন্যের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত থাকে।

কিছু নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা এখনো আমাদের পূর্বসূরিদের মতো করে জীবন যাপন করেন, তাঁরা সম্পদ ভাগাভাগিতে সমতা বজায় রাখেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত ত সব সময় আম দ র তত ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ