‘জাস্ট বি ইয়োরসেলফ’ বা ‘নিজের মতো থাকো’—এই পরামর্শ হরহামেশাই শুনি আমরা। নিজের মতো থাকার সহজ অর্থ হচ্ছে, আপনি যেমন, তেমনটাই থাকুন। নিজস্ব সত্তা প্রকাশ করুন। আপনি যা নন, তা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে না। পরামর্শটি শুনতে ভালো শোনালেও এ নিয়ে আছে ভিন্নমত। পরামর্শটিকে সরাসরি খারাপ বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মনোচিকিৎসক ও লেখক ব্রিট ফ্র্যাংক। তিনি বলেন, নিজের মতো থাকতে গিয়ে নিজের সত্যিকার ব্যক্তিত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টায় হিমশিম খেয়ে বসেন অনেকে। এতে নিজের ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। কেন সব সময় নিজের মতো থাকা উচিত নয়, এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ফ্র্যাংক। মিলিয়ে দেখতে পারেন নিজের সঙ্গে।

একটি নয়, আপনার আছে একাধিক নিজস্ব সত্তা

ধরুন, আপনি স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে জিমে যেতে চান, আবার একই সময়ে আপনার শুয়ে টিভি দেখতে ইচ্ছা করছে। আপনার দুটি সত্তা একই সময়ে দুটি বিপরীত ইচ্ছা পোষণ করছে। এতে নিজের মধ্যেই একধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। আপনি আদতে কী করবেন, তা নিজেই ঠিক করতে পারছেন না। মনের এই টানাপোড়েন প্রমাণ করে, আপনার মন আদতে জটিল; যেখানে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছাগুলো একসঙ্গে বাস করে। অর্থাৎ আপনি কোনো একক ও নির্দিষ্ট সত্তা নন, বরং বহু সত্তার সমষ্টি। তবে একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ করার মানে এই নয় যে আপনি কপট। উল্টো এটিই আপনাকে মানবিক করে তোলে।

আরও পড়ুনমনের যত্নে ২০টি বিষয় মেনে চলুন১০ অক্টোবর ২০২২আপনার ‘নিজস্ব সত্তা’ অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করেআবেগ নিয়ন্ত্রণ করে নিজেকে প্রকাশ করা প্রয়োজন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন জ র মত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ