গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রধান ডাকঘরটি যেন এখন সেবার প্রতীক নয়, দুর্ভোগের নমুনা হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ডাকঘরের চারপাশে পানি জমে যায়। টানা বৃষ্টিতে সেই পানি ঢুকে পড়ে ডাকঘরের ভেতরে। জলাবদ্ধতার মধ্যেই চলে সরকারি সেবা কার্যক্রম। এমন পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন পড়ছেন বিপাকে, তেমনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

কালীগঞ্জ উপজেলার প্রধান এ ডাকঘর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। আশপাশে রয়েছে উপজেলা প্রশাসনিক ভবন, কলকারখানা, ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা। স্বাভাবিকভাবেই এখানে প্রতিদিন আসেন শত শত সেবাগ্রহীতা। কেউ আসেন চিঠি পাঠাতে, কেউবা টাকা উত্তোলন বা ডাক জীবনবিমার কাজে। কিন্তু, জলাবদ্ধতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে দিনের পর দিন মানুষ ডাক বিভাগের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন।

একসময় মানুষের বার্তা আদান-প্রদানের প্রধান ভরসা ছিল ডাক বিভাগ। কালের বিবর্তনে ডাক সেবা এখন সীমিত আকারে চললেও অনেকের কাছে এটি এখনো অপরিহার্য। তাই, কালীগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় প্রধান ডাকঘরের এমন করুণ অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে একদিকে যেমন নাগরিক সেবা মুখ থুবড়ে পড়বে, অন্যদিকে ডাক বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থাও বিলীন হয়ে যাবে। 

কালীগঞ্জের প্রধান ডাকঘরে অব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তার সংকটও। এর চারপাশের সীমানা প্রাচীর ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে নির্মিত নিরাপত্তা বেষ্টনি দীর্ঘদিন আগেই খোয়া গেছে। কে বা কারা চুরি করেছে, তা কেউ বলতে পারছেন না। ফলে, এখন জায়গাটি খোলা মাঠের মতো পড়ে থাকে, যেখানে পরিবহন শ্রমিকরা রিকশা-ভ্যান-অটোরিকশা পার্ক করে রাখেন। সেবাগ্রহীতাদের হাঁটার জায়গাটুকুও থাকে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সামনের রাস্তাটি উঁচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি গড়িয়ে আসে ডাকঘরের নিচু আঙিনায়। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। এটি হয়ে ওঠে মশার প্রজননস্থল। অফিসের ভেতরে বসে কাজ করা যেমন কষ্টকর, তেমনই বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাও যন্ত্রণাদায়ক।

স্থানীয়রা বলছেন, কালীগঞ্জ শিল্পসমৃদ্ধ ও জনবহুল উপজেলা। এখানে ডাকঘরের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের এই বেহাল দশা কাঙ্ক্ষিত নয়। সরকারের উচিত দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণ এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “ডাকঘরের পাশে ময়লার স্তূপ, তার ওপর পরিবহন শ্রমিকদের বেপরোয়া পার্কিং। অনেক সময় দেখি, সেখানে মানুষ প্রস্রাব করছে। দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। এমন পরিবেশে কেউ কি কাজ করতে চায়?”

ডাকঘরের রানার ফরিদ উদ্দিন ও শাহিন মিয়া বলেন, “প্রতিদিনই এই সমস্যার ভেতর দিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। বৃষ্টির দিনে জুতা খুলে পানি মাড়িয়ে অফিসে আসতে হয়। এটা কতটা কষ্টকর, তা বলে বোঝানো যাবে না।”

ডাক পিয়ন শামসুল হক বলেন, “এমনিতে মানুষ ডাক বিভাগের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। এখন যদি কেউ এসে এই দুর্দশা দেখে, সে ভবিষ্যতে আর আসবে না।”

পোস্ট মাস্টার মো.

ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, “আমি প্রায় দুই বছর ধরে এখানে আছি। যোগদানের পর থেকেই দেখছি, দুরবস্থা শুধু বাড়ছে। চারপাশের লোহার বেড়া চুরি হয়ে গেছে। বৃষ্টির দিনে ডাকঘরের আঙিনায় হাঁটা যায় না, ভেতরেও পানি ওঠে। বিষয়টি লিখিতভাবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা জানিয়েছেন, খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে কথা বলতে ডাক বিভাগের নরসিংদী অঞ্চলের ইন্সপেক্টর আঞ্জু মনোয়ারা বেগমকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড কঘর র ব যবস থ ক জ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভাসহ অনেক এলাকা।

এতে জনজীবনে ভোগান্তির পাশাপাশি মাঠের ধান হেলে পড়েছে। মাসকলাই ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। মাঠে কৃষির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

গতকাল শুক্রবার প্রায় সারা রাত বৃষ্টির পর আজ শনিবার সকালে পানি জমে থাকতে দেখা যায় শহরের সার্কিট হাউস সড়ক, নিউমার্কেট, ক্লাব সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক, পুরাতন বাজার, নিমতলা, বাতেন খাঁ মোড়সংলগ্ন সড়ক, প্রফেসর পাড়া, জেলা ও দায়রা জজ ও জেলা প্রশাসকের বাসভবনসহ অনেক এলাকায়।

শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা শহরের কোর্ট এলাকাসহ অনেক এলাকা জলমগ্ন ছিল। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানিনিষ্কাশনে এত ধীরগতি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত ২০ বছরে এক দিনে এত বৃষ্টি হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। শুক্রবার রাতে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে জেলাজুড়ে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সদরে ২৬০ মিলিমিটার, শিবগঞ্জে ১৭৫ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ১৮০ মিলিমিটার, নাচোলে ১৭৫ মিলিমিটার ও ভোলাহাটে ১৬৫ মিলিমিটার। জেলায় গড় বৃষ্টির পরিমাণ ১৯১ মিলিমিটার।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক এলাকার মাঠে থাকা ধান কিছুটা হেলে পড়েছে। কৃষির কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি আমরা।’

বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া একটি ধানখেত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ফিল্টিপাড়ায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি