বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের পাঁচজন প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের একজন স্থপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’–এর অভিযোগ ছিল। বিভাগীয় তদন্তে তাঁরা দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আজ বুধবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বরখাস্ত করা কর্মকর্তারা হলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মনিরুজ্জামান মনি, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ই/এম) আবদুল্লা আল মামুন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) রাহানুমা তাজনীন, নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) ফারহানা আহমেদ ও সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মফিজুল ইসলাম। এ পাঁচজন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। একই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি শিরাজী তারিকুল ইসলামকেও বরখাস্ত করা হয়।

কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মনিরুজ্জামান মনি কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের ডক্টরাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি (মঞ্জুরীকৃত প্রেষণ) নেন। প্রেষণ শেষে ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার আলোকে তাঁকে গত ২১ এপ্রিল বরখাস্ত করা হয়।

আবদুল্লা আল মামুন পিএইচডি করতে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দুই বছরের জন্য ছুটিতে যান। কিন্তু ছুটি শেষে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১৫ মে বরখাস্ত হন।

রাহানুমা তাজনীন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইওমিংয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে পড়তে ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। এরপর কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তাই চলতি মাসের ২ তারিখ তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

ফারহানা আহমেদ কানাডার রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে পড়তে ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে যান। ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তাই তাঁকে চলতি মাসের ৮ তারিখ বরখাস্ত করা হয়।

মফিজুল ইসলাম সাউথ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস পড়তে ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। কিন্তু এর পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে ২৭ জুলাই বরখাস্ত করা হয়।

অন্যদিকে শিরাজী তারিকুল ইসলাম ২০২২ সালের ১২ মে থেকে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত রয়েছেন। তাই তাঁকে চলতি বছরের ২১ মে বরখাস্ত করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তদন্ত শেষে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে কর্মকর্তাদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল র স প ট ম বর ম বর থ ক ল ইসল ম গণপ র ত

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী