দেশে এখন আলোচনার অন্যতম বিষয় আগামী সংসদ নির্বাচন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির দিক থেকে আসা এক যৌথ ঘোষণার পর এ নিয়ে আলোচনা বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ সুযোগে বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া ছবি-ভিডিওর প্রচারও বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি বিভ্রান্তিকর ভিডিও ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি।

ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাইকারী উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের আটটি ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে ১ হাজার ১৩টি কনটেন্ট (আধেয়) বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব।

ডিসমিসল্যাব বলছে, শুধু ছবিই নয়, গুগলের এআই ভিডিও জেনারেটর প্রযুক্তি ভিও-থ্রি ব্যবহার করে তৈরি করা ভিডিও ছড়ানো হয়েছে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর হার বেড়েছে ১৭ শতাংশ, যার ৪৪ শতাংশই ছিল রাজনীতিসংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয় ছিল অন্যতম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত এআই-নির্মিত বিভ্রান্তিকর তথ্য মূলত ছবির মাধ্যমে ছড়ানো হতো। তবে ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে ভিডিও কনটেন্ট ছবিকে ছাড়িয়ে যায়। প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভিডিওর মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর হারও বেড়েছে। প্রথম প্রান্তিকে যেখানে বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের ৪২ শতাংশ ছিল ভিডিও, সেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশে।

ভিডিও ও ফটোকার্ডে বেশি অপতথ্য

বিভ্রান্তিকর প্রচারণা আরও দৃষ্টিনন্দন ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ভিডিও ও ডিজাইনকৃত ফটোকার্ডের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছে ডিসমিসল্যাব। তারা আরও বলেছে, সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড অনুকরণ করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর প্রবণতাও এখনো বিদ্যমান। প্রথম প্রান্তিকে এ ধরনের ফটোকার্ডের মাধ্যমে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের সংখ্যা ছিল ১০০টি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ১৭৬, যার ৮৫ শতাংশই ছিল রাজনীতি নিয়ে।

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোয় রাজনৈতিক বিষয় শীর্ষে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সাতটি নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছিল, সেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে হয় ৫৫টি।

আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানানোয় সবচেয়ে সক্রিয় বিএনপি। ফলে দলটির শীর্ষ নেতারা বিভ্রান্তিকর প্রচারণার শিকার হয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাঁকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে বিএনপি অংশ নেবে না।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামেও ভুয়া বিবৃতি ছড়ানো হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছড়িয়েছে নানা ভুয়া দাবি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়েও বিভ্রান্তিকর প্রচার হয়েছে।

নারীনেত্রীদের লক্ষ্য করে অপতথ্য

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বাইরেও নানা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ভুয়া অভিযোগ ছড়ানো হয়েছে। বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের নিয়ে এসব ভুয়া কার্ড ছড়ানো হয়।

নারী রাজনীতিকেরাও এসব বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের শিকার হয়েছেন জানিয়ে ডিসমিসল্যাব বলেছে, কনটেন্টগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চরিত্রহননের প্রচেষ্টা। অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে, সেগুলো এনসিপি নেত্রীদের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়াতে এআই দিয়ে ছবি ও ভিডিও তৈরি করে প্রচার হয়েছে। যেমন একটি ডিপফেক ভিডিওতে দাবি করা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করেছেন।’ আরেকটি ডিপফেক ভিডিওতে বলা হয়, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ড. ইউনূসের প্রশংসা করেছেন।’

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোয় আন্তর্জাতিক বিষয়ও ছিল আলোচিত। ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ঘটনায় বাংলাদেশেও তথ্যযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান বা ভারতের পক্ষ নিয়ে নানা ভুয়া ভিডিও ছড়ায় ওই সময়। এমনকি কিছু ভুয়া কনটেন্ট মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রচার হয়।

এ ছাড়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। ইরানের পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির হচ্ছে—এ ধরনের বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়ানো হয়েছে। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লাগার ভিডিওকে ইসরায়েলি বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম প র ন ত ক র জন ত ক ইসর য় ল র হয় ছ বছর র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট

পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন বহু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সচল সব ঘাটই (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট বেশি ঝুঁকিতে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণকাজের অংশ হিসেবে তিন দিনে প্রায় সাত শ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করা যাবে।

ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি

ঘাটসংলগ্ন বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিয়েছে।

ছাত্তার মেম্বার পাড়ার নদীর পাড়ের শেষ বসতি আলতাফ মোল্লার পরিবারের। বসতভিটা রক্ষা করতে না পেরে দুটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে পরিবারটি। আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সূর্য বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ছয়বার ভাঙনে ভিটামাটি হারায়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এইবার ভাঙলে সাতবার হইবে। এখন কোথায় দাঁড়াব বলতে পারছি না। ঘর, টিনের চাল, জিনিসপত্র ভেঙে পাশে রাখছি। এখন কোথাও জায়গা হলে চলে যাব।’

স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদৎ প্রামাণিক ও ময়ান সরদার বলেন, ‘কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন চললে ফেরিঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ