এক ভয়ংকর মুসলিমবিদ্বেষের দিকে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য
Published: 31st, July 2025 GMT
সাউথপোর্ট হামলার এক বছর পার হয়েছে। সেই ঘটনার পর যুক্তরাজ্যের রাস্তায় ভয়াবহ বর্ণবিদ্বেষী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। এই দাঙ্গার সময় আমি আমার উপন্যাস দ্য সেকেন্ড কামিং-এর শেষ অংশ লিখছিলাম।
এই বইয়ের কাহিনি এমন এক ভবিষ্যতের ইংল্যান্ড নিয়ে, যেখানে খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত একদল মিলিশিয়া লন্ডন দখল করে, ইসলাম নিষিদ্ধ করে এবং মুসলিমদের বার্মিংহামে আশ্রয়শিবিরে পাঠিয়ে দেয়। যখন আমি বইটি শেষ করছিলাম, তখন রাস্তায় যা ঘটছিল, তা দেখে মনে হচ্ছিল আমার কল্পনার জগৎ আসলে বাস্তবের জগৎ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
আমি ছোটবেলায় যে ইংল্যান্ডে বড় হয়েছি, সেখানকার অভিজ্ঞতা দিয়ে এই কল্পনার জগৎ গড়েছি। তখন বর্ণবাদী সহিংসতা খুবই সাধারণ ছিল। সাদা চামড়ার যুবকদের দল রাস্তায় আমাদের পেছনে লাগত। বিশেষ করে পানশালা (পাব) বন্ধ হওয়ার পর তারা বেশি উত্ত্যক্ত করত। তারা একে বলত ‘পাকি বাশিং’ (পাকিস্তানিদের ধোলাই করা)।
অশ্বেতাঙ্গ লোকদের ওপর ছুরি হাতে হামলা, তাদের বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া—এসব তখন অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। ছাত্রজীবনে কতবার যে আমাকে মারধর করা হয়েছে, তার হিসাব নেই—স্কুলে, রাস্তায়, পাব বা অন্য কোনো জায়গায়। ইস্ট লন্ডনে যখন থাকতাম, তখন ব্রিকলেনের স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে মিলে বর্ণবাদী হামলা ঠেকাতে আমাদের হাতে হাতে লড়তে হয়েছে।
সে সময় আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু ‘বিস্ফোরক তৈরির ষড়যন্ত্র’-এর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। দুধের বোতলে পেট্রল ভরে নিজেদের রক্ষা করতেই আমরা তা করছিলাম। এ ঘটনাই পরে ‘ব্র্যাডফোর্ড টুয়েলভ’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। ব্রিকলেন থেকে ব্র্যাডফোর্ডজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এসব আন্দোলন ছিল বৃহত্তর বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের অংশ।
দেশে যেভাবে বর্ণবাদের চর্চা হচ্ছে, তা আসলে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক ইতিহাসেরই এক অংশ। সাম্রাজ্যবাদ যেভাবে ‘অসভ্য’ জাতিগুলোকে দমন ও শাসন করার কথা বলত, আজও সেই ধারাই চলছে। এই পুরোনো বর্ণবাদী চিন্তা আজ যুক্তরাজ্যে গভীরভাবে ফিরে এসেছে।তখনকার বর্ণবাদী সহিংসতা ভয়ংকর ছিল। সেসব সহিংসতা আসত সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠী থেকে। শাসকশ্রেণি যদিও অনেক সময় চুপচাপ সমর্থন দিত, তবে তারা খোলাখুলি তাদের পাশে দাঁড়াত না। কিন্তু আজ সেই দূরত্ব আর নেই।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং লেবার পার্টির অনেক নেতাই আজ বর্ণবাদীদের মতো কথা বলছেন। যাঁরা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। সুয়েলা মিথ্যা দাবি করে বলেছিলেন, যৌন নিপীড়নে জড়িত গ্যাংগুলো প্রধানত ‘ব্রিটিশ পাকিস্তানি পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত’, যাদের সংস্কৃতি নাকি ব্রিটিশ মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না।
আদতে আগের সাদা চামড়ার বর্ণবাদ এখনো আছে। শুধু তা–ই নয়, এখন আরও ভয়াবহ এক রূপ দেখা যাচ্ছে। সেটি হলো ইসলামবিদ্বেষ। মনে হচ্ছে যেন আগের পাকি বাশিং এখন এক নতুন ধর্মযুদ্ধের রূপ নিয়েছে, যেখানে ইসলাম মানেই সন্ত্রাস, পাকিস্তানি মানেই যৌন সহিংসতা, আর শরণার্থী মানেই দেশ দখলকারী পোকামাকড়ের দল।
আরও পড়ুনগাজায় গণহত্যায় যুক্তরাজ্য যেভাবে মদদ দিচ্ছে০৫ জুন ২০২৫এই মাটি থেকেই রিফর্ম পার্টি গড়ে উঠেছে ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এরা এমন সব ঘৃণার রাজনীতি করছে, যা এখন গ্রহণযোগ্য ও নির্বাচিতযোগ্য হয়ে উঠেছে। যখন লেবার ও কনজারভেটিভ দুই দলই দুর্নীতিতে জর্জরিত, তখন রিফর্ম পার্টির সোজাসাপটা ও রাখঢাকহীন ভাষার মুসলিমবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যকে ‘সততার প্রতিচ্ছবি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফলে এখন রিফর্ম পার্টি ৩০ শতাংশ জনসমর্থন পাচ্ছে, যেখানে লেবার পাচ্ছে ২২ শতাংশ ও কনজারভেটিভ ১৭ শতাংশ।
দাঙ্গার এক বছর পর দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা একটি জরিপ চালায়। তারা জরিপে বর্ণবাদ নিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র্য বা সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা তেমন কিছু বলেনি। সেই জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক মানুষ মনে করেন, বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষ মিলে থাকা (বহুসংস্কৃতিবাদ) যুক্তরাজ্যের জন্য ভালো নয়। আর ৭৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, খুব শিগগির দেশে আবার জাতিগত দাঙ্গা হতে পারে।
দেশে যেভাবে বর্ণবাদের চর্চা হচ্ছে, তা আসলে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক ইতিহাসেরই এক অংশ। সাম্রাজ্যবাদ যেভাবে ‘অসভ্য’ জাতিগুলোকে দমন ও শাসন করার কথা বলত, আজও সেই ধারাই চলছে। এই পুরোনো বর্ণবাদী চিন্তা আজ যুক্তরাজ্যে গভীরভাবে ফিরে এসেছে।
তারিক মেহমুদ লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
আল–জাজিরা, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর জ য
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত