জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, টানা ২৩ দিনের বৈঠক শেষে ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এসব বিষয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ‘-এর খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। 

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য বা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে। এগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে কিছু দলের পক্ষ থেকে নোট অব ডিসেন্টও এসেছে।

নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বেশি মতভেদ
প্রধানত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বিন্যাস, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে না থাকা; সংবিধানে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নিয়ন্ত্রক ও মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিঅ্যান্ডএজি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংযোজনের বিষয়ে ঐকমত্য হলেও নারীদের আসন বৃদ্ধির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মতবিরোধ দেখা দেয়।

অধ্যাপক রীয়াজ জানান, নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা যত এগিয়েছে, ভিন্নমতের পরিমাণ তত বেড়েছে। এ ইস্যুতে বিভক্তি সবচেয়ে প্রকট।

মূলনীতি নিয়ে বিভক্তি, সভা বর্জন সিপিবি ও জাসদের
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে আলোচনা চলাকালে বৃহস্পতিবার বৈঠক বর্জন করে বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ বিষয়ে গণফোরাম ভিন্নমত জানালেও তারা সভা ত্যাগ করেনি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এই মতানৈক্যগুলো সংবিধানিক কাঠামোর গভীর ইস্যু। আমরা চাই, দলগুলো নিজেরা এ নিয়ে আরো আলোচনায় বসুক।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা নিয়ে কমিশনে ওঠা সমন্বিত প্রস্তাবের মধ্যে ৮, ৯, ১১ এবং ১২ নম্বর ধারায় আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়েও কিছু দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।

এই দীর্ঘ আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা অনুঘটক হিসেবে কাজ করছি, বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর।

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ মোট ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবারের আলোচনায় অংশ নেন।

গত ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এর পর ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের অংশগ্রহণে মোট ২৩টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এবি পার্টির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন, সংস্কার, সংশোধন, নতুন করে লেখা বা বাতিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের। আমরা ঐক্যবদ্ধ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করেছি, হয়তো কয়েকটি বিষয়ে কারও কারও “নোট অব ডিসেন্ট” (দ্বিমত) আছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনটা হবে, তা নির্ধারণের মূল ক্ষমতা জনগণের।’

কমিশনের আজকের প্রস্তাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স আকারে উল্লেখ করায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যাঁরা আজ প্রশ্ন তুলছেন, কাল তাঁরা সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন এবং এই সনদকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?

এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, সংবিধানে এটা নেই, ওটা নেই বলে সংবিধান সংস্কার করা যাবে না—এই ধারণা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাপরিপন্থী। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান থেকে নমনীয় না হয়, তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পুরো প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে।

আশঙ্কা প্রকাশ করে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, এমন পরিস্থিতি জাতিকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি; অন্যথায় গণভোট ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুনবর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল